মূল্যস্ফীতি ও মজুরি বৃদ্ধির গড় হার বিবেচনায় এই হিসাব করেছে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
Published : 15 Dec 2024, 09:21 PM
সরকারি পরিসংখ্যানে দারিদ্র্যের হার ক্রমাগত কমলেও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজুরি না বাড়ায় গত ২ বছরে ১ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র বা দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে পড়েছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের একজন শিক্ষক, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ।
রোববার ঢাকায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) আয়োজিত এক কর্মশালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. দীন ইসলাম এই দাবি করেন।
কর্মশালায় খাদ্যনির্ভর সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দেন বক্তারা।
দীন ইসলাম গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে বলেন, “এর মধ্যে (দুই বছরে) ৭৮ লাখ ৬০ হাজার মানুষ নতুন করে সহনীয় দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে এসেছে। একই সঙ্গে ৯৮ লাখ ৩০ হাজার মানুষ অতিমাত্রায় দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে পড়ে গেছেন।এ সময়ে নতুন করে ৩৮ লাখ মানুষ দরিদ্র থেকে হতদরিদ্রতে নেমে এসেছে।”
তবে এই গবেষণা করতে মাঠ পর্যায়ে কোনো জরিপ করা হয়নি, মূল্যস্ফীতি ও মজুরি বৃদ্ধির গড় হার বিবেচনায় এই হিসাব করা হয়েছে। গবেষণার এ প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দারিদ্র সীমা এবং অতি দারিদ্র সীমার ক্ষেত্রে ক্রয়ক্ষমতাকে বেছে নিয়েছে।
সরকারের দেওয়া বিবিএসের তথ্যেই মূল্যস্ফীতি এবং প্রকৃত মজুরির মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই ৬ শতাংশের বেশি মানুষ তাদের ক্রয় ক্ষমতা ‘হারিয়েছে’। এর ফলে তারা নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছে বা দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে পড়েছে।
বিবিএসের সবশেষ হিসেবে দারিদ্র্যের হার এখন ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। খানা আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২-এ এই তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৬ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপে এই হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
সবশেষ প্রতিবেদনে ২০২২ সালে দেশে অতি দারিদ্র্যের হার দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৬ শতাংশ যা ২০১৬ সালে ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ।
বিবিএসের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, নভেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে। আগের মাসেও এই হার ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে, আগের মাসে এই হার ছিল ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
অন্যদিকে জাতীয় মজুরি বৃদ্ধির সবশেষ হার হল ৮ দশমিক ১০ শতাংশ। প্রায় প্রতি বছরই মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরি বৃদ্ধির হার কম থাকে।
মূল্যস্ফীতির কারণ হিসেবে সরকারের ‘ভুল নীতিকে’ দায়ী করেন দীন ইসলাম। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এক বছরেই এক লাখ কোটি টাকা ঋণ বা টাকা ছাপিয়ে বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ ৪৮১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন টাকা থেকে ৩ গুণ বেড়ে এটি ১ হাজার ৪৮৭ দশমিক ৭৩ বিলিয়নে দাঁড়ায়। কেবল ২০২২-২৩ অর্থবছরের এ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের থেকে ১ ট্রিলিয়ন টাকার এ ঋণ গত ৫০ বছরের নেওয়া ঋণের দ্বিগুণের চেয়েও বেশি।”
কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সরকার পরিসংখ্যানে ‘কারসাজি‘ করত এবং বর্তমান সরকার সেটা করে না বলে মূল্যস্ফীতির হার বেশি দেখাচ্ছে এখন।
তিনি বলেন, “আমরা যখন সঠিক ডেটা দেখাতে যাচ্ছি, তখন দেখা যাচ্ছে যে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১৩ শতাংশের বেশি। সমালোচনা করছেন যে আমরা খাদ্যের দাম, মূল্যস্ফীতি কমাতে পারছি না।
“দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে সরকারের চেষ্টা আছে। আমরা একটা জিনিসে ডিটারমাইনড যে, আমরা কোনো ধরনের, কোনো প্রকারের ম্যানিপুলেশন করব না।”
সরকারের উন্নয়ন বাজেট নতুন করে প্রাধিকার নির্ধারণে মত দেন র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি কীভাবে চলবে তার দিকনির্দেশনা এখনও পাননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “চলতি অর্থবছরের বাজেটের কেবল ২ দশমিক ৩ শতাংশ ‘রিলোকেট’ করে তিনটি প্রধান খাদ্যনির্ভর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ব্যয় করা গেলে এখানে থাকা বর্তমান অ্যালোকেশনের ডাবল হবে।”
শহর ও গ্রাম মিলিয়ে প্রধান তিনটি কর্মসূচি হচ্ছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় (ওএমএস) এবং কাজের বিনিময়ে খাদ্য।
আরও পড়ুন...
বাজারের চাপে কাঞ্চন মিয়াদের 'জীবন আর চলে না'
কৃষিপণ্য: বিধিমালা কিতাবে রেখে 'ভুল পথে' বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা