“বন্যার প্রভাবটা কি আমাদের পড়বে না? অবশ্যই পড়বে এবং পড়েছে”, মূল্যস্ফীতির বিষয়ে বলেন আহসান মনসুর।
Published : 11 Nov 2024, 06:16 PM
মূল্যস্ফীতি কমাতে দেশবাসীকে ১৮ মাস ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেওয়ার চার দিনের মাথায় তা আট মাসে নামিয়ে এসেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি এই সময়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলেছেন।
সোমবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এক আয়োজনে তিনি এই লক্ষ্যের কথা বলেন।
দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত ‘তৃতীয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন: বৈষম্য, আর্থিক অপরাধ ও বাংলাদেশের অর্থনীতির নিরাময়’ শীর্ষক সম্মেলনে আহসান মনসুর বলেন, “সত্য কথা বলতে, আইএমএফের চাপে পরে গত সরকার সুদহার উদারীকরণ করল জুন মাসে। এরপর জুলাই, অগাস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর।
“তিন থেকে চারমাস হয়েছে। আরও আটটা মাস অন্তত আমাকে দিতে হবে টু ব্রিং ইট (মূল্যস্ফীতি) ডাউন টু পাঁচ-ছয় পারসেন্ট।”
তার এই বক্তব্য গত বৃহস্পতিবার দেওয়ার বক্তব্যের তুলনায় কিছুটা বিপরীত। সেদিন অর্থ মন্ত্রণালয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক শেষে গভর্নর ১৮ মাস সময়ের কথা বলেছিলেন।
তার বক্তব্য ছিল, “বিশ্বের যেসব দেশে মূল্যস্ফীতি বর্তমান বাংলাদেশের মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল সেখানে এই হারেই কমেছে।
“বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা বলছে মুদ্রানীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ (টাইটেনিং) করার পরেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লেগে যাচ্ছে। সেজন্য আমাদেরকে ধৈর্য ধরতেই হবে। পলিসিগুলো বাস্তবায়নের সময়টা দিতে হবে। এটা দুই তিন মাসের ব্যাপার নয়।”
আরও পড়ুন:
চালের দাম 'গতবারের চেয়ে কম', মূল্যস্ফীতি নিয়ে ১৮ মাস ধৈর্য ধরুন: গভর্নর
গত ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনাকে অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করে। এই লক্ষ্যে নীতি সুদহার বারবার বাড়িয়েছেন গভর্নর। সবশেষ গত ২৭ অক্টোবর থেকে নীতি সুদহার আরও ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে করা হয় ১০ শতাংশ।
এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর তহবিল পাওয়ার খরচ আরও বাড়বে। তাতে ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ীদের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও সুদহার বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুন:
মূল্যস্ফীতি দমাতে রেপো হার পৌঁছাল দুই অংকে
গত ৫ অগাস্ট পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নীতি সুদহার ছিল সাড়ে ৮ শতাংশ। সেখান থেকে তিন বারে ৫০ বেসিস পয়েন্ট করে বাড়িয়েছেন আহসান মনসুর।
তবে এসব পদক্ষেপে মূল্যস্ফীতির পারদ আটকে রাখা যাচ্ছে না। গত বৃহস্পতিবার পরিসংখ্যান ব্যুরো অক্টোবরের যে মূল্যস্ফীতির হিসাব প্রকাশ করে, তাতে দেখা যায় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
সার্বিক মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি। এটি হয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
অর্থাৎ ২০২৩ সালের অক্টোবরে খাবারের পেছনে ১০০ টাকার ব্যয় চলতি বছরের অক্টোবরে হয়েছে ১১২ টাকা ৬৬ পয়সা।
আরও পড়ুন:
ফের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দুই অঙ্কের ঘরে, অক্টোবরে ১০.৮৭%
সুদহার বৃদ্ধির বিষয়ে গভর্নর বলেন, “হ্যাঁ অবশ্যই আমি জানি ইন্টারেস্ট রেট বেড়েছে। দ্যাটস দ্য অনলি মেডিকেশন গ্লোবালি প্রাকটিসিং, অনলি ওয়ান। এটাকে ফেয়ার করে লাভ নাই।
“একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, ম্যাক্রাইকোনমিক স্ট্যাবিলিটিকে কম্প্রোমাইজ না করে ব্যাংকিং সেক্টর স্ট্যাবল করার চেষ্টা করছি। আমরা কিন্তু টাকা ছাপাচ্ছি না। এখন পর্যন্ত গত তিন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে কোনো কিছু দেওয়া হয় নাই এবং হবে না।”
তিনি বলেন, “এক্সচেঞ্জ রেট (ডলার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার) স্ট্যাবিলিটি হতেই হবে। এটা না হলে পরে ইনফ্লেশন স্ট্যাবিলিটি আসবে না, প্রাইস স্ট্যাবিলিটি আসবে না। আমাকে এই ফাইটটা করতে হবে।”
মুল্যস্ফীতি কমাতে সরকারের পদক্ষেপগুলোও জানান আহসান মনসুর। তিনি বলেন, “সব প্রয়োজনীয় পণ্য এলসি খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুল্ক অব্যাহতি বা শিথিল করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক মূল্য কমাতে শুল্ক হ্রাসসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
বন্যাকে দায়
আগস্টের বন্যাকে মূল্যস্ফীতির জন্য দায়ী করে গভর্নর বলেন, “ডেটা অ্যানালাইসিস করে দেখা যায়, নন-ফুড ইনফ্লেশন অগাস্টে কমেছে, সেপ্টেম্বরে কমেছে, অক্টোবরেও কমেছে।
“অক্টোবরে যে স্পাইক (ঊর্ধ্বগতি) দেখলাম, এখানেও নন-ফুড ইনফ্লেশন কিন্তু কমেছে। ফুড ইনফ্লেশন ভোলাটাইল। সব সময়ই থাকে। বন্যা হয়েছে আমাদের। এ বন্যার প্রভাবটা কি আমাদের পড়বে না? অবশ্যই পড়বে এবং পড়েছে।”
বিগত সরকার মূল্যস্ফীতির তথ্য কমিয়ে দেখাত- এমন দাবিও করেন তিনি। বলেন, “আরেকটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের ডেটাতে কিন্তু এখন আর ম্যানিপুলেশন নাই। অর্থাৎ আগে তো কমিয়ে রাখা ছিল, এখন তো হাই লেভেলে চলে আসে।
“বেইজ ইফেক্ট তো আছে। অর্থাৎ আগের কমিয়ে রাখার সাথে যখন এখন পারসেন্ট ক্যালকুলেট করব, এখন তো বেশি আসবে। আগে তো কমিয়ে রাখা ছিল।”
আরও পড়ুন:
পণ্যমূল্য: বাজারে টাস্কফোর্সের কী প্রভাব?
চালের দামকে ছাড়িয়েছে দেখে ক্রেতার প্রশ্ন, 'আলু কি বিলাস পণ্য?'
সবজির দাম কমছে, পেঁয়াজের কেজি ছুঁয়েছে ১৬০
চড়ছে পেঁয়াজ, ব্যবসায়ীরা বলছেন সরবরাহ সংকট