চার বছর পরে এ খাতে মোট বিদেশি ঋণের স্থিতি ১০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে।
Published : 07 Mar 2025, 12:47 AM
বেসরকারি খাতে স্বল্প মেয়াদী বিদেশি ঋণ কমে যাওয়ার ধারা বজায় থাকার মধ্যে জানুয়ারিতে নতুন অর্থায়নের চেয়ে আগের সুদ ও আসল পরিশোধেই ডলার বাইরে গেছে বেশি।
এসময়ে চার বছর পরে এ খাতে মোট বিদেশি ঋণের স্থিতি ১০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। জানুয়ারি শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ তা ৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার ছিল।
জানুয়ারিতে বিদেশি ঋণ এসেছে ১ দশমিক ৬৮ দশমিক বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে পরিশোধ করতে হয়েছে ২ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। এক মাসে ৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশ করা হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, অর্থনীতির জন্য এসময় বেসরকারি খাতে স্বল্প মেয়াদী ঋণের দরকার বেশি হলেও তা হচ্ছে না। ঋণ আসার চেয়ে শোধ বেশি করলে রিজার্ভের উপর চাপ তৈরি হয়। ডলারের দর স্থিতিশীলতায় আনতেও এটির ভূমিকা রয়েছে।
দীর্ঘসময় ধরে ডলারের দর অস্থির থাকলে বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ কম করবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডলার সংকট, ডলারের উচ্চমূল্য, দর স্থিতিশীল না হওয়া, রিজার্ভ সংকট, উচ্চ সুদহারের কারণে বিদেশি ঋণ নিতে ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায় তাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা স্বল্প মেয়াদী ঋণ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত দুই বছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধের রেকর্ড খুব একটা ভালো না। এতে রিস্ক পার্সেপশন বেড়েছে। সার্বিকভাবে আর্থিক অবস্থাকে রেটিংস এজেন্সিগুলো ডাউনগ্রেড করেছে। এয়ারলাইন্সের টিকেটের রেভিনিউ ট্রান্সফারে, বিদ্যুৎ খাতে বিল পরিশোধে বকেয়া জমেছে।“
তিনি বলেন, “বিদেশে বিল পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে এ খবর সবাই জানে। এটা গত দেড় বছর ধরেই আসছে কম। নতুন ঋণ সবাই দিতে চাচ্ছে না।“
অপরদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং কমেছে। এটি বাংলাদেশি কোম্পানিতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানির আগ্রহ কমিয়েছে।
জাহিদ হোসেনও এ ক্ষেত্রে ক্রেডিট রেটিংয়ের জোরালো প্রভাব থাকার কথা তুলে ধরেন।
বিভিন্ন বিদেশি উৎস থেকে দেশের বেসরকারি খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের নেওয়া সর্বোচ্চ এক বছর মেয়াদের জন্য তহবিল ঋণ ’স্বল্পমেয়াদি ঋণ’ হিসেবে ধরা হয়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য আমদানিকারকরা বিদেশি ঋণদাতাদের থেকে ঋণ নেন, যা বায়ার্স ক্রেডিট নামে পরিচিত।
আমদানি দায় পরিশোধে ব্যাংকগুলোও বিদেশি উৎস থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়ে থাকে।
বেসরকারি খাতে এর আগে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বছরজুড়ে যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ এসেছে তার থেকে পরিশোধ করতে হয়েছে বেশি। ২০২৩ সালে ৬ বিলিয়ন ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে। ২০২৪ সালে বেশি পরিশোধ করা হয়েছে ২ বিলিয়ন ডলার।
২০২৩ সালে এ খাতে বিদেশি ঋণ পাওয়া গেছে ২৫ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার এবং সুদসহ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার।
পরের বছর ২০২৪ সালে ঋণ পাওয়া গেছে ২১ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার এবং পরিশোধ করতে হয়েছে ২৩ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।
আর্থিক হিসাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান স্বল্পমেয়াদি ঋণ, যারমধ্যে রয়েছে- বায়ার্স ক্রেডিট, ডেফারড পেমেন্ট (বিলম্বে মূল্য পরিশোধ), ব্যাক-টু-ব্যাক বিদেশি ঋণপত্র (এলসি) এবং বাণিজ্য অর্থায়নে স্বল্পমেয়াদি ঋণগুলো।
ঋণ কমার কারণ তুলে ধরতে গিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার বেশ কমেছে। প্রায় ১০০ বেসিস পয়েন্টের মত কমেছে। ছয় মাস আগে সোফার রেট ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ ছিল। এখন ৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ রয়েছে গত কয়েক মাস ধরে।
“তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটা কমে নাই। কারণ রিস্ক প্রিমিয়ামের সুদের হার বেড়েছে। কারণ ক্রেডিট রেটিংয়ে ডাউনগ্রেডেড হয়েছে।“
তিনি বলেন, “এ নিয়ে বাংলাদেশের আগে সুনাম ছিল, যা এখন নাই। অনেকটা শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট টিমের মত। এক সময় ভালো ছিল, কিন্তু এখন আর নাই।“