প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অক্সিজেন উৎপাদনকারী কারখানাগুলোতে ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘট রাতে আলোচনার পর তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে।
ধর্মঘট আহ্বানকারী বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সচিব নাজমুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "যা ঘটেছে এর জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু:খ প্রকাশ করা হয়েছে। তাই আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন ভবিষ্যতে এ ধরনের কিছু ঘটবে না।"
আগের দিন বিস্ফোরণের ঘটনায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের মালিক পারভেজ উদ্দিন শান্টুকে গ্রেপ্তারের পর কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে পাঠানোর প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
ঘোষণা অনুযায়ী কারখানাগুলো দিনের বেলা ধর্মঘটে যায়। পরে রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসন ও শিল্প পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিএসবিআরএ এর নেতারা।
সেখানে প্রশাসন একজন মালিকের কোমরে রশি বাঁধাকে অনাকাঙ্খিত বলে দুঃখ প্রকাশ করলে ধর্মঘটে থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত দেন সংগঠনের নেতারা।
শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে সংগঠনটি যে মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছিল সেটিও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, "সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের পরিচালক পারভেজ উদ্দিনকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নেওয়ায় মালিকপক্ষের মধ্যে ক্ষোভ কাজ করছিল। আমরা তাদের বলেছি, ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিচ্ছিন্ন। আমরা তাদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি। কিন্তু মামলা আইন অনুসারে চলবে। আমাদের আশ্বাসে তারা সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।"
চট্টগ্রামে অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আছে ১২টি, এর বেশিরভাগই সীতাকুণ্ডে অবস্থিত। সেখানে উৎপাদিত অক্সিজেন জাহাজ ভাঙ্গা কারখানা ও রড প্রস্তুতকারক কারখানায় ব্যবহার হয়ে থাকে।
গত ৪ মার্চ বিকালে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে সাতজন নিহত এবং ২০ জনের মতো আহত হন। বিস্ফোরণ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে লোহার টুকরা, সিলিন্ডার কয়েকশ গজ দূরে গিয়েও পড়ে, তাতে একজন নিহত হয়।
বিস্ফোরণে নিহত আবদুল কাদেরের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলায় প্রাণহানির অভিযোগ এনে ৭ মার্চ সীতাকুণ্ড থানায় মামলা করেন। মামলায় তিন মালিকসহ মোট ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
এরমধ্যে ভয়াল এ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড তদন্তে গঠিত জেলা প্রশাসনের কমিটি গত মঙ্গলবার তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। তাতে কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কথা উল্লেখ করা হয়; যদিও সীমা অক্সিজেন কর্তৃপক্ষ বলে আসছিল, তারা সব নিয়ম মেনেই কারখানা পরিচালনা করছিলেন।
ওই মামলায় সীমা অক্সিজেনের পরিচালক পারভেজ উদ্দিন শান্টুকে গ্রেপ্তার করে বুধবার আদালতে পাঠায় পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন বিচারক।
ওই মামলায় গ্রেপ্তার পারভেজ উদ্দিন শান্টুকে আদালতে হাজিরের সময় কোমরে রশি বাঁধা হয়েছিল।
পরে এ নিয়ে সমালোচনার মুখে ওই ঘটনায় দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক অরুণ কান্তি বিশ্বাসকে কারণ দর্শাও নোটিস দেওয়া হয়।
এর প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে চট্টগ্রামে সকল অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও জাহাজ ভাঙ্গা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট শুরু করছিল এ শিল্পে মালিকদের সংগঠন বিএসবিআরএ৷