কমিটি এই বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে কিছু অবহেলা-গাফিলতি চিহ্নিত করেছে, তবে প্রকাশ করেনি।
Published : 14 Mar 2023, 06:56 PM
অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা বিরল, তাই ঘটেছিল বাংলাদেশের সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট। তা খতিয়ে দেখতে নেমে নতুন কিছু শেখা হয়েছে বলে জানাল তদন্ত কমিটি।
বিস্ফোরণের ১০ দিন পর মঙ্গলবার তদন্ত কমিটি তাদের কাজ শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে।
কমিটি এই বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে কিছু অবহেলা-গাফিলতি চিহ্নিত করেছে। আট পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ৯টি সুপারিশ করা হয়েছে।
তবে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় বিস্ফোরণের কারণ ও সুপারিশ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান এবং তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক রাকিব হাসান দুজনের কেউ বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।
গত ৪ মার্চ সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে সাতজন নিহত হয়, আহত হয় ২৫ জন।
বিস্ফোরণের পর অক্সিজেন উৎপাদনের এই কারখানাটিতে অনিয়মের পাশাপাশি কারখানা দেখভালের দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থার গাফিলতি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
বিস্ফোরণের পর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। পরে কমিটিতে আরও দুজন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে কমিটিকে বলা হলেও আরও দুই দিন সময় বাড়িয়ে মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দিল।
ঘনবসতির মধ্যেই সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট; উবে গেল প্রাণ, রেখে গেল ধ্বংসচিহ্ন
‘ত্রুটির জন্য’ একবার নোটিস পেয়েছিল সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট
সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট চালাতেন দু’জন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার
প্রতিবেদন জমা দিয়ে কমিটির প্রধান রাকিব হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা এটাই বাংলাদেশে প্রথম। শুধু তাই নয়, গত এক দশকে সারা পৃথিবীতে এ নজির ৪-৫টির বেশি নেই। এই বিস্ফোরণ খুবই বিরল।”
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কাজটা (তদন্ত) শুরুর সময় আমাদের মানসিকতা ছিল একরকম। কাজটা করতে গিয়ে ইন ডেপথে যেতে গিয়ে আমাদের অনেক নতুন বিষয় শেখা হয়েছে।”
তদন্তে প্রাপ্ত বিষয় নিয়ে এডিএম রাকিব হাসান বলেন, “কিছু ঘাটতি, কিছু অবহেলা অবশ্যই ছিল। যার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ পর্যন্ত এতটুকুই রাখি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে পুরো প্রতিবেদন ও সুপারিশমালা আপনাদের পরে জানানো হবে।”
প্রতিবেদনে নয়টি সুপারিশ রেখেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, এসব সুপারিশ সরকার অবশ্যই বাস্তবায়ন করবে। পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কী কী করা যেতে পারে, তা আমরা সুপারিশ করেছি।”
প্রতিবেদনের সুপারিশমালার মধ্যে যেগুলো জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাস্তবায়ন সম্ভব, তা করতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান রাকিব।
“আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, পরবর্তীতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সেই কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামে যত অক্সিজেন প্ল্যান্ট আছে তাদের সকলকে নিয়ে একটা ওয়ার্কশপ আমরা করব, যাতে কী কী প্রসিডিওর অনুসরণ করলে একটা অক্সিজেন প্ল্যান্ট নিরাপদে পরিচালনা করা যাবে।”
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, “সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের ঘটনার পর আমরা ভারী ও মাঝারি শিল্পের জন্য মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। চট্টগ্রামে যে অক্সিজেন প্ল্যান্ট আছে সেগুলোর জন্য একটি ম্যানুয়েল তৈরি করতে চাই। একটি বড় প্রতিষ্ঠান, যাদের কমপ্লায়েন্স ভালো তারা এগিয়ে এসেছে।
“সব অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে ২-৩ জন করে প্রতিনিধিকে নিয়ে ওয়ার্কশপ আয়োজন করেছি। কোন পর্যায়ে কোন ধরনের লোকবল কাজ করবে, সেগুলোসহ সব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে।”
ঝুঁকিপূর্ণ যেসব কারখানার আছে, সেগুলোতে ২-৩দিনের মধ্যে পরিদর্শন শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “কয়েকটি টিমে ভাগ করে। সরকারি সব স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে পরিদর্শন হবে। বাকি সুপারিশগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো উদ্যোগ নেবে আশা করি।”
জেলা প্রশাসক বলেন, “তদন্ত কমিটি একাধিকবার সরেজমিন গিয়ে টেকনিক্যাল খুঁটিনাটি দেখে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। অনুমোদন পেলে দুর্ঘটনার কারণ, উৎস ও সুপারিশমালা আপনাদের পরে জানাব।”
সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের পর সীতাকুণ্ডে তুলার গুদামে আগুন লাগার ঘটনার উল্লেখ করে ফখরুজ্জামান সব কারখানায় জলাধার রাখার উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, “সেখানে কোনো জলাধার ছিল না। অনেক দূর থেকে পানি আনতে হয়েছে। যত্রতত্র শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। ফলে দুর্ঘটনা হলে সাথে সাথে অগ্নি নির্বাপন করতে পারি না।”
প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় তদন্ত কমিটির সদস্য জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার সুদীপ্ত সরকার ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আবদুল হালিম উপস্থিত ছিলেন।