তদন্ত কমিটি পরিদর্শনের পর প্রাথমিক ধারণা পেয়েছে, অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত টানেনি এখনও।
Published : 05 Mar 2023, 07:21 PM
চট্টগ্রামে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট পরিদর্শন করে বিস্ফোরণের উৎসস্থল নিয়ে একটি ধারণা দিয়েছে এই ঘটনা তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটি।
প্ল্যান্টের এয়ার সেপারেশন কলাম থেকে এই বিস্ফোরণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হোসেন।
তিনি রোববার বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, অক্সিজেন প্ল্যান্টে এয়ার সেপারেশন কলাম থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হতে পারে।”
তবে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত টানছে না তদন্ত কমিটি।
রাকিব বলেন, “সঠিক বিষয়টি জানতে আরও তদন্ত প্রয়োজন। কমিটি আজ (রোববার) প্রথম বৈঠকে বসেছিল। বৈঠকে গতকালের সব ঘটনা পর্যালোচনা করেছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করছি।”
বেসরকারি ওই কারখানায় অনুমোদনহীন অক্সিজেন সিলিন্ডারের পাশাপাশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন সিলিন্ডারও পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
রাকিব বলেন, “একটা ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল মেকানিক্যাল সেটআপে বিভিন্ন ধরনের ‘সেইফটি মেজারসে’র (নিরাপত্তা ব্যবস্থা) বিষয় থাকে। অনেক শর্ত প্রতিপালনের বিষয় থাকে।
“বিস্ফোরণের মূল কারণ তুলে আনতে, প্রতিপালনের বিষয়গুলোতে কারখানা কর্তৃপক্ষ কতটুকু করেছে, কতটুকু করেনি এবং টেকনিক্যাল পারসন যারা ছিল, তাদের এবং মালিকপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, সেগুলো আমরা ‘থ্রি-সিক্সটি ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে’ সামনে এনে তদন্ত করছি।”
শিল্পে ব্যবহারের জন্য অক্সিজেন উৎপাদনের কারখানাটিতে শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিকট বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে। ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনেন।
বিস্ফোরণে ছয়জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে কমপক্ষে ২৪ জন। তাদের মধ্যে ১৯ জন এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানকে প্রধান করে গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগের সভাপতি ড. সুমন বড়ুয়াকে।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আপাত দৃষ্টিতে আমাদের মনে হয়েছে সেপারেশন প্ল্যান্টে প্রেশারের কারণে এটা হতে পারে।
“সেখানে প্রেশার রিলিজের যে বিষয়টি রয়েছে, সেটা হয়ত সঠিকভাবে হয়নি। সেজন্য বিস্ফোরণ হয়েছে। এজন্য কারাখানা কর্তৃপক্ষ কিংবা প্ল্যান্ট পরিচালনার সাথে জড়িতদের গাফেলতি থাকতে পারে।”
ঘনবসতির মধ্যেই সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট; উবে গেল প্রাণ, রেখে গেল ধ্বংসচিহ্ন
সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের বিভীষিকা আহতদের বয়ানে
এই অধ্যাপক বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীকে তারা কিছু প্রশ্ন করলেও স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় তিনি সেগুলোর পুরোপুরি উত্তর তাদের দিতে পারেননি।
এজন্য মালিকপক্ষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় তদন্ত কমিটি চাইবে বলেও জানান তিনি।
কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন উদ্দিনের দাবি, কারখানা পরিচালনায় তাদের কোনো গফিলতি ছিল না। কারখানা পরিচালনার জন্য যা যা দরকার, সবকিছু মেনেই তারা কারখানা পরিচালনা করছেন।
১৯৯৬ থেকে ২৭ বছর ধরে এ কারখানাটি সচল রয়েছে। এই প্ল্যান্টটি ২০১৭ সালে চালু হয়।
তদন্ত কমিটিকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাসও দেন মামুন।
কারখানার ধ্বংসস্তূপে এখন কোনো হতাহত নেই এবং নতুন করে আগুন লাগারও আশঙ্কা নেই জানিয়ে উদ্ধারকাজ শেষ করার ঘোষণা দেন ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আব্দুল হালিম।
সীমা অক্সিজেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন বলেন, আহতদের চিকিৎসা খরচ তারা চালিয়ে যাবেন। আহত শ্রমিকদের বেতনও চলমান থাকবে এবং শ্রম আইনে যেটা আছে ওভাবে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।