ষোল বছর আগে চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির বোমা বিশেষজ্ঞ জাহিদুল ইসলাম মিজান ওরফে বোমা মিজানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
Published : 03 Oct 2021, 11:42 AM
এ মামলার অপর জীবিত আসামি জেএমবির চট্টগ্রাম শাখার বিভাগীয় কমান্ডার জাবেদ ইকবালকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
চট্টগ্রামের সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুল হালিম রোববার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
এ ট্রাইব্যুনালের পিপি মনোরঞ্জন দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দণ্ডিত দুই আসামির মধ্যে জাবেদ ইকবাল রায়ের সময় আদালতে কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। আর মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজান ভারতের কারাগারে বন্দি। সেখানে এক মামলায় তার ২৯ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
ওই ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল রাজীব বড়ুয়া এবং শাহাবুদ্দিন নামে এক বিচারপ্রার্থীর প্রাণ যায়। আহত হন কনস্টেবল আবদুল মজিদ, রফিকুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান, শামসুল কবির ও আবু রায়হানসহ ১০ জন।
আহত পুলিশ কনস্টেবল রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই ঘটনায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ২০০৬ সালের ১৮ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেন নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার তৎকালীন পরিদর্শক হ্লা চিং প্রুং।
সেখানে জেএমবির চট্টগ্রাম শাখার বিভাগীয় কমান্ডার জাবেদ ইকবাল এবং বোমার কারিগর জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমা মিজানকে আসামি করা হয়।
এজাহারের আসামিদের মধ্যে জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই এবং জেএমবির সামরিক কমান্ডার আতাউর রহমান সানির অন্য মামলায় ফাঁসি হওয়ায় তাদের এ মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে এ মামলার বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৭৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩২ জনের সাক্ষ্য শেষে গত ২১ সেপ্টেম্বর মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।
“পুলিশ সদস্য রাজীব বড়ুয়া এবং বিচারপ্রার্থী শাহাবুদ্দিন মারা যান। আরও অনেক পুলিশ সদস্য ও সাধারণ মানুষ আহত হন।”
দণ্ডিত দুই আসামির মধ্যে জাবেদ ইকবালের মত বোমা মিজানও গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা।
বলা হয়, একুশ শতকের শুরুর দিকে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর ই তইয়েবার কুখ্যাত জঙ্গি নসরুল্লাহর কাছ থেকে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন মিজান।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে লস্কর ই তইয়েবার ক্যাম্পে তিনি প্রশিক্ষণ নেন এবং ভারতে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের বোমা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল। বোমা তৈরির দক্ষতার কারণেই সংগঠনে তার নাম হয় ‘বোমা মিজান’ বা ‘বোমারু মিজান’।
ত্রিশালের ঘটনার পর পালিয়ে ভারতে চলে যান মিজান, সেখানে জেএমবিকে সংগঠিত করে জঙ্গি তৎপরতা শুরু করেন। ২০১৪ সালের অক্টোবরে বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের পর আবারও মিজানের নাম আলোচনায় আসে।
তারপর ২০১৮ সালের অগাস্টে ভারতের বেঙ্গালুরুতে গ্রেপ্তার হন মিজান। বর্ধমান বিস্ফোরণের মামলায় চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি তাকে ২৯ বছরের সাজা দেয় ভারতের একটি আদালত।
এছাড়া দেশেও বিভিন্ন মামলায় মিজানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের রায় হয়েছে এর আগে।