নানা প্রতিবন্ধকতায় চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে জঙ্গি হামলায় দুইজন নিহতের মামলার বিচার এক যুগ ধরে ঝুলে থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন আহতরা।
Published : 29 Nov 2017, 03:43 PM
আদালতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ মামলায় ৭৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের পর গত তিন বছর দুই মাসে আর কেউ সাক্ষ্য দেননি।
তাছাড়া ঘটনার পর তিন বার আদালত পরিবর্তনেও বিচারে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ যে আদালতে মামলাটি বিচারাধীন, সেটিও বিচারক শূন্য নয় মাস ধরে।
২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকায় পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় জেএমবির এক সদস্য।
হামলায় মারা যান চৌকিতে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল রাজীব বড়ুয়া এবং বিচারপ্রার্থী শাহাবুদ্দিন। আহত হন কনস্টেবল আবদুল মজিদ, রফিকুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান, শামসুল কবির ও আবু রায়হানসহ মোট ১০ জন।
তদন্ত শেষে ২০০৬ সালের ১৮ মে নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ওই সময়ের পরিদর্শক হ্লা চিং প্রু আদালতে অভিযোপত্র দেন। ২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে দুই আসামির বিচার শুরু হয় ।
দুই আসামির মধ্যে জাবেদ ইকবাল কারাগারে রয়েছেন আর বোমারু মিজানকে ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ময়মসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা।
বিচারে দীর্ঘসূত্রতা
অভিযোগ গঠনের পর ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে মামলাটি চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে গেলেও নির্ধারিত সময়ে বিচার শেষ না হওয়ায় প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফেরত যায়।
সবশেষ ২০১৬ সালের অক্টোবরে মামলাটি আবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ফেরে। এরপর ‘কেইস ডকেট’ না পাওয়ার জটিলতায় সাক্ষ্যগ্রহণ আটকে ছিল।
এই ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি বদলি হওয়ার পর থেকে পদটি খালি।
প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা পরিচালনাকারী রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি অশোক কুমার দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের আদালতে কয়েকজনের সাক্ষ্য হয়েছিল। এরপর আর কারো সাক্ষ্য হয়নি।
“জঙ্গি মামলাগুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও স্পর্শকাতর। কত জঙ্গি ধরা পড়েছে, কত জঙ্গির বিচার হয়েছে, কোন মামলা বিচারাধীন এসব তথ্য থাকা দরকার। এসব মামলা দ্রুত বিচারের জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল করা দরকার।”
তবে বিচারক নিয়োগ করা হলে দ্রুত মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. আইয়ুব খান।
তিনি বলেন, “আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে অকারণে সাক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। একারণে মামলা বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
হতাশ আহতরা
সেই বোমা হামলায় আহত এবং মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা বর্তমানে নগরীর হালিশহর থানার ওসি মাহফুজুর রহমান।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “তল্লাশি চৌকিতে ওই জঙ্গিকে থামার সংকেত দিতেই সে দুই পায়ে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে তার দুই পা উড়ে যায়। পরে সে মারা গিয়েছিল।
“পুলিশ সদস্য রাজীব বড়ুয়া এবং বিচারপ্রার্থী শাহাবুদ্দিন মারা যান। আরও অনেক পুলিশ সদস্য ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন।”
মামলাটির বিচার কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় হতাশ ওসি মাহফুজ বলেন, “অনেক বছর আগে এ মামলায় আমি সাক্ষ্য দিয়েছি। এতদিনে তো মামলাটি শেষ হওয়ার কথা ছিল।
“এখনও পায়ে স্প্লিন্টার আছে। মাঝে মাঝে ব্যথা হয়। দোষীদের শাস্তি হলে অন্তত মৃতদের আত্মা শান্তি পাবে; আহত হয়ে যারা বেঁচে আছেন তারাও সান্ত্বনা পাবেন।”
সেদিনের হামলায় মামলার বাদী কনস্টেবল রফিকুল ইসলামের পা ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পাশাপাশি পেটেও আঘাত লেগেছিল।
বর্তমানে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের রেশনিং শাখায় কর্মরত রফিকুল ইসলাম জানান, এখনো মাসখানেক পরপর চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাকে।
“গত ১৬ নভেম্বরও হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। আগামী ২০ ডিসেম্বর আবার ভর্তি হতে হবে।”
দুই দফায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন দাবি করে রফিকুল এখনও মামলার বিচার না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন।
মামলার আরেক সাক্ষী পিবিআই চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈন উদ্দিন বলেন, “সাক্ষ্য দিতে আমরা প্রস্তুত। সাক্ষীদের অনেকেই চট্টগ্রামে আছেন। আমরা চাই দ্রুত মামলাটির বিচার শেষ হোক।”