ইন্টারপোলের কোনো দেশে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা এবং গ্রেফতার করে অন্য দেশে পাঠিয়ে দেয়া তো দূরের কথা, কোনো ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের অধিকারও নেই।
Published : 29 May 2024, 10:05 AM
সম্প্রতি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের হত্যাকাণ্ডের পর কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন এই পৈশাচিক কাণ্ডের মূলহোতা, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীনকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হবে। এ ধরনের অবাস্তব এবং ভিত্তিহীন দাবি, এমনকি বহু উচ্চশিক্ষিত মানুষের মুখেও প্রায়ই শোনা যায়, অথচ বাস্তবতা হলো এই যে ইন্টারপোলের কোনো ক্ষমতা নেই কোনো ব্যক্তিকে এক দেশ থেকে গ্রেফতার করে অন্য দেশে পাঠিয়ে দেয়া তো দূরের কথা, গ্রেফতার করার ক্ষমতা পর্যন্ত নেই। ইন্টারপোল সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞানের অভাবের কারণেই তারা এ ধরনের অবান্তর কথা বলে থাকেন।
গত ১৩ মে থেকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার নিখোঁজ রয়েছেন, যে কথা সন্দেহের ঊর্ধ্বে। তার পরিবারের দাবি অনুযায়ী তিনি চিকিৎসার জন্য কলকাতা গিয়েছিলেন। পরে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বাংলার আইন প্রয়োগকারীগণের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমসমূহ এই মর্মে সংবাদ পরিবেশন করছে যে তাকে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে যে সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা এ ধারণাই দেয় যে এতে হাড়হিম করা এমন চরম পর্যায়ের নিষ্ঠুরতার আশ্রয় নেয়া হয়েছিল, বাস্তব জীবনে যাকে নজিরবিহীন বলা যায়। খুনের পর তার গায়ের চামড়া তুলে ফেলে হাড় থেকে মাংস আলাদা করে সেগুলোকে খণ্ড খণ্ড করে তাতে হলুদ মাখানো হয়েছিল বলে গোয়েন্দা এবং গণমাধ্যম সূত্র জানাচ্ছে, যা কোনো পশুকে জবাই করার পর কসাইরা করে থাকেন। এ ক্ষেত্রেও একজন পেশাদার কসাই ভাড়া করা হয়েছিল বলে বিভিন্ন সূত্র বলছে। আলফ্রেড হিচককের একটি ছবিতে এ ধরনের কাল্পনিক বর্ণনা রয়েছে।
বাংলাদেশের পুলিশ যে দ্রুততা এবং দক্ষতার সঙ্গে অন্য দেশে সংঘটিত ঘটনাটি চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে, তা নিশ্চয়ই অসাধ্য সাধনের মতো। কলকাতার পুলিশও অনুসরণীয় কাজ করে বেশ কিছু তথ্য উদঘাটন করেছে। দু’দেশের পুলিশই বেশ ক’জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এই নারকীয় কাণ্ডের হোতা বলে আখতারুজ্জামান শাহীন নামক যে ব্যক্তির নাম শোনা যাচ্ছে, সূত্রসমূহ বলছে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং সে দেশেই পালিয়ে গেছেন। শুধু ন্যায় বিচারের স্বার্থেই নয়, সুষ্ঠু তদন্তের খাতিরেও আখতারুজ্জামান শাহীন নামের এই ব্যক্তিকে আটক করা অপরিহার্য। যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়া এবং সে দেশের নাগরিকত্বের কথা সঠিক হলে তাকে ফিরে পাওয়া কষ্টকর হবে বৈকি।
এর মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন আখতারুজ্জামানকে ইন্টারপোলের দ্বারা ধরিয়ে আনা হবে। ইন্টারপোল পলাতক আসামিদের বিদেশ থেকে ধরিয়ে আনবে এমন কথা সর্বোচ্চ শিক্ষিত বহু বিজ্ঞজনও প্রায়ই বলে থাকেন। অথচ এই দাবি মোটেও সঠিক নয়। ইন্টারপোলের গঠন এবং ভূমিকা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানের অভাবের কারণেই তারা এমন অবান্তর কথা বলে থাকেন। কিন্তু এর ফলে জনগণ বিভ্রান্ত হন। তারা ভাবেন যেহেতু অতি উঁচু অবস্থানের লোকজন এমন কথা বলছেন তাই এটি নিশ্চয়ই সঠিক। ফলে ইন্টারপোল যখন বিদেশে পালিয়ে যাওয়া কাউকে ধরে আনতে পারে না তখন জনগণ সরকার এবং পুলিশের উপর দোষ চাপিয়ে বলেন যে তারাই ইন্টারপোলকে কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই অর্থে এ ধরনের বাস্তবতা বহির্ভূত কোনো কথাই প্রজ্ঞাবান কারো বলা উচিত নয়। তাদের উচিত ইন্টারপোল সম্পর্কে সব কিছু জেনে নেয়া। বাস্তবতা হলো এই যে ইন্টারপোলের কোনো দেশে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা এবং গ্রেফতার করে অন্য দেশে পাঠিয়ে দেয়া তো দূরের কথা, কোনো ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের অধিকারও নেই। কোনো দেশের আইনই ইন্টারপোলকে এ ধরনের কোনো ক্ষমতা প্রদান করেনি। সব দেশের কাছেই ইন্টারপোল একটি বাহ্যিক সংস্থা বিধায় কোনো দেশই এই সংস্থাকে তার দেশে এমন কিছু করতে দিতে পারে না যা, সে দেশের সার্বভৌমত্বের উপর হস্তক্ষেপের শামিল। আর ইন্টারপোলও কখনোও এমন কিছু করার চেষ্টা করে না যা কোনো দেশের সার্বভৌমত্বের উপর নাক গলানোর পর্যায়ে পড়ে।
ইন্টারপোল অন্য দেশে পালিয়ে যাওয়া আসামিদের ধরে আনতে পারে বলে যারা বিশ্বাস করেন, তাদের ধারণা ইন্টারপোল জাতিসংঘের একটি বাহিনী, যা মোটেও সত্য নয়। ইন্টারপোল মোটেও জাতিসংঘের কোনো সদস্য, অংশ বা কর্মকার নয়। জাতিসংঘ ইন্টারপোলকে কিছু করার কোনো ক্ষমতাও প্রদান করেনি। জাতিসংঘ প্রচুর সংখ্যক আন্তর্জাতিক এনজিওকে অবজারভার বা পর্যবেক্ষক মর্যাদা প্রদান করেছে প্রথা অনুসরণ করে, যদিও জাতিসংঘ সনদে এ ধরনের কোনো বিধান নেই। সেভাবে ১৯৯৬ সালে জাতিসংঘ ইন্টারপোলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সংস্থাকেও অবজারভারের মর্যাদা দিয়েছে। দরখাস্তের ভিত্তিতেই এটি প্রদান করা হয়। মর্যাদাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ সাধারণ পরিষদের সভাসহ জাতিসংঘের অনেক সভায় উপস্থিত থাকতে এবং জাতিসংঘের অনেক দলিলপত্র পর্যালোচনা করতে পারে সীমিত আকারে। কিন্তু জাতিসংঘ তাদেরকে কোনো ক্ষমতা বা দায়িত্ব প্রদান করে না এবং এরা জাতিসংঘের সদস্য বা প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিবেচিত হয় না। তাদের ভোট দেয়ারও অধিকার থাকে না। জাতিসংঘের হয়ে বা জাতিসংঘের নামে কোনো কিছু করার ক্ষমতা এদের নেই। নেহায়েতই পর্যবেক্ষক হিসেবে পর্যবেক্ষণ করার বাইরে এদের কোনো ভূমিকা থাকে না। অনুরূপ দরখাস্তের ভিত্তিতে জাতিসংঘ বিভিন্ন সংস্থা এবং এমনকি ব্যক্তিকে পরামর্শদাতার মর্যাদা প্রদান করতে পারে যে মর্যাদা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং ডেমোক্রেসি ওয়াচসহ বহু সংস্থাকে প্রদান করা হয়েছে। জাতিসংঘ চাইলে এরা পরামর্শ প্রদান করতে পারে, যদিও জাতিসংঘ তা গ্রহণে বাধ্য নয়। জাতিসংঘ এদেরও কোনো ধরনের ক্ষমতা প্রদান করে না।
১৯২৩ সালে অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জোহানেস স্কুবার কয়েকটি বিদেশী পুলিশ সংস্থার প্রতিনিধিদের একটি বৈঠক ডাকলে ২০টি দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত হয়ে সেসব দেশের পুলিশ বাহিনীর সমন্বয়ে একটি সমিতি গঠন করেন। সময়ের ব্যবধানে বর্তমানে এই সংস্থায় ১৯৬টি দেশের পুলিশ বাহিনী থাকলেও এর মর্যাদা অপরিবর্তিত রয়েছে, অর্থাৎ ইন্টারপোল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশ বাহিনীসমূহের একটি সমিতি বৈ কিছু নয়। তবে আন্তর্জাতিকভাবে অপরাধ দমন কর্মকাণ্ডে এই সমিতির ভূমিকা খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এই সমিতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে সমিতির সদস্যদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান, আন্তর্জাতিক অপরাধ দমনে এবং এমনকি এক্সট্রাডিশন প্রক্রিয়ায়ও যা অতীব প্রয়োজনীয়। সংস্থা বিভিন্ন রংয়ের নোটিশের (অনেকে যাকে ভুল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা বলে থাকেন) মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের চিহ্নিত অপরাধীদের (যাদের বিস্তারিত বিবরণ ইন্টারপোলের ডাটা বেইসে রক্ষিত) অবস্থান, চলাচল, কার্যক্রম, জীবন বৃত্তান্ত ইত্যাদি প্রদান করে থাকে, যেগুলো জানা, বিশেষ করে পলাতক আসামির অবস্থান নিশ্চিত করা রাষ্ট্রীয় পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। এসব তথ্য পালিয়ে থাকা দেশের রাষ্ট্রীয় পুলিশকে চিহ্নিত অপরাধীদের উপর নজরদারি করার সুযোগ প্রদান করে। জাতিসংঘও অনেক সময় ইন্টারপোল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। যুক্তরাজ্যের কিছু স্টেচুটে ইন্টারপোলের উল্লেখ রয়েছে বটে, কিন্তু কোনো ক্ষমতা বা দায়িত্ব প্রদান করেনি। একই কথা সব দেশের বেলায়ই প্রযোজ্য। ইন্টারপোল বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় পুলিশের মাধ্যমে কাজ করে থাকে। কিন্তু একটি দেশের রাষ্ট্রীয় পুলিশ যখন ইন্টারপোলের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন, তখন তিনি আর সে দেশের রাষ্ট্রীয় পুলিশের ক্ষমতা বা দায়িত্ব প্রয়োগ করতে পারেন না, তাকে কাজ করতে হয় একজন সাধারণ মানুষের মতো অথবা বেসরকারি ডিটেকটিভের মতো।
বিদেশে পালিয়ে থাকা আসামিদের, তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত বা বিচারাধীন, যেই হোন না কেন, ফিরিয়ে আনার জন্য যে আইন প্রচলিত রয়েছে সেটি এক্সট্রাডিশন বা আসামি হস্তান্তর আইন নামে পরিচিত। অনেকে একে বন্দি বিনিময় আইন বলে ভুল করে থাকেন। দুটি সম্পূর্ণ আলাদা। একটি রাষ্ট্রই পারে সে দেশে পালিয়ে থাকা কোনো আসামিকে ফেরত চাওয়া দেশের কাছে হস্তান্তর করতে। এক্সট্রাডিশন আইনের সুবিধা পাওয়া দুটি রাষ্ট্রের মধ্যকার ব্যাপার এটি। যে রাষ্ট্র পলাতক আসামিকে ফেরত পেতে চায়, সে রাষ্ট্রকেই পলাতক অপরাধী যে রাষ্ট্রে অবস্থানরত, সেই রাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ জানাতে হয় সংশ্লিষ্ট দেশের এক্সট্রাডিশন আইনের বিধান অনুসরণ করে। বাংলাদেশসহ প্রায় সকল দেশেই এক্সট্রাডিশন আইন রয়েছে, যার দ্বারা এক্সট্রাডিশন পদ্ধতি নিয়ন্ত্রিত।
বেশির ভাগ দেশের এক্সট্রাডিশন আইনে চুক্তির বিধান রয়েছে, যে চুক্তি ছাড়া এক্সট্রাডিশন প্রক্রিয়ায় আসামী ফেরত পাঠানো যায় না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো এক্সট্রাডিশন চুক্তি নেই। ২০০১ সালে সরকার সে সময়ের পররাষ্ট্র সচিব শফি সামির নেতৃত্বে যে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক্সট্রাডিশন চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য, সে সময়ে একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে আমিও সে ৫ সদস্যের দলে ছিলাম। আরো ছিলেন সে সময়ের আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আনোয়ার উল হক (সদ্য প্রয়াত), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুন্সি ফয়েজ আহমেদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জানেবুল আলম। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক করিম সাহেবও টানা ৫ দিনের আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। আলোচনা শেষে একটি খসড়া চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে শফি সামি এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক শীর্ষ কর্মকর্তা দস্তখতও করেছিলেন। শুধু বাকি ছিল সেটি সিনেটে পেশ করার। কিন্তু কিছুদিন পরেই বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এসে সেই খসড়া চুক্তিকে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের আসামী হস্তান্তর চুক্তি হয়নি।
আনার হত্যার পেছনে আখতারুজ্জামান শাহীন নামের মূল ব্যক্তিটি যদি সত্যি একজন মার্কিন নাগরিক হয়ে থাকেন, এবং যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যেয়ে থাকেন, তাহলে তাকে এক্সট্রাডিশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফেরত পাওয়ার বিকল্প নেই। ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার বাধা না দিলে তখনই বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সট্রাডিশন চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে যেত, আর তাই আজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আখতারুজ্জামান শাহীনকে ফেরত আনার জন্য আমাদের চিন্তা করতে হতো না। একটি দেশ সে দেশের ইমিগ্রেশন আইন প্রয়োগ করেও সে দেশে পালিয়ে থাকা অপরাধীকে বের করে দিয়ে অপরাধীর নিজ দেশে পাঠাতে পারে। সে প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি মেজর মহিউদ্দিনকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল। কিন্তু কোনো দেশের নাগরিক সে দেশের ইমিগ্রেশন আইনের আওতাধীন নয় বিধায়, আখতারুজ্জামান শাহীন মার্কিন নাগরিক হলে তাকে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করে বাংলাদেশে পাঠানো সম্ভব নয়। তবে এ ব্যাপারে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই এ জন্য যে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সট্রাডিশন চুক্তি বিদ্যমান। অপরাধটি ভারতে ঘটেছে বলে ভারত সরকার আখতারুজ্জামান শাহীনকে ভারতের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানালে সাফল্যের প্রবল সম্ভাবনা থাকবে।
অপরাধ বাংলাদেশ এবং ভারত দুটি দেশেই সংঘটিত হওয়ায়, দু’দেশের আদালতেরই বিচারের এখতিয়ার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোন দেশে অপরাধ প্রথম ঘটেছে, সেটি মুখ্য বিবেচ্য বিষয়ে পরিণত হতে পারে। ষড়যন্ত্রের শুরু বাংলাদেশে হয়েছে বিধায়, এটা বলা যেতে পারে যে সেই ষড়যন্ত্রের পরম্পরায়ই পশ্চিম বাংলায় অপরাধ হয়েছে, যার অর্থ এমন হতে পারে যে অপরাধ শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে। তবে যেহেতু বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের এবং ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সট্রাডিশন চুক্তি রয়েছে,সেহেতু আখতারুজ্জামানকে ফিরে পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে। সেই কারণে আখতারুজ্জামান শাহীনের বিচার ভারতেই হওয়া বাঞ্ছনীয়। অপরাধগুলোকে এবং অপরাধীদের বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। তথ্যসমূহ থেকে জানা যাচ্ছে যে হত্যার ষড়যন্ত্র বেশ আগেই বাংলাদেশে হয়েছিল। ষড়যন্ত্র একটি স্বতন্ত্র অপরাধ আর হত্যার ষড়যন্ত্রের জন্য সর্বোচ্চ সাজার বিধান রয়েছে। সে অর্থে খুনের মামলা ভারতে হলেও ষড়যন্ত্রের মামলা বাংলাদেশে হতে পারে। চিলির সাবেক অত্যাচারী স্বৈরশাসক পিনোশে যখন যুক্তরাজ্যে, তখন প্রশ্ন উঠেছিল পিনোশের বিচার স্পেনে না চিলিতে হবে। স্পেনের একটি আদালত পিনোশের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর বৃটিশ আদালতে পিনোশের এক্সট্রাডিশন নিয়ে বিচার চলাকালে স্পেন এবং চিলির এখতিয়ারগত বিবাদ নিয়ে এই দুই দেশের পাল্টাপাল্টি দাবি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে স্পেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছিল। কিন্তু সে সময় বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাক স্ট্র এই মর্মে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন যে পিনোশে স্বাস্থ্যগত কারণে বিচারের সম্মুখীন হতে অক্ষম। এর কিছুকাল পরেই পিনোশের মৃত্যু ঘটলে বিবাদের সমাপ্তি ঘটে। তবে আনোয়ারুল আজীমের মৃত্যুর এবং ষড়যন্ত্রের বিষয়ে কোন দেশের আদালতে বিচার হবে তা নিয়ে ভারত এবং বাংলাদেশের মতো বন্ধুপ্রতীম দেশে কোনো বিতর্কের আশঙ্কা থাকবে না বলেই সকলের ধারণা। সবচেয়ে বড় কথা জনগণ অপরাধীদের বিচার এবং সাজা দেখতে চায়, বিচার যে দেশেই হোক না কেন। তাছাড়া অপরাধের মূল হোতা আখতারুজ্জামান শাহীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেবল ভারতই ফিরিয়ে আনতে পারবে এ কারণে যে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সট্রাডিশন চুক্তি রয়েছে, যা বাংলাদেশের সঙ্গে নেই এবং সে কারণে আখতারুজ্জামান শাহীনের বিচার ভারতে হওয়াই বাঞ্ছনীয়।