বিভিন্ন প্রজাতি সাত হাজার ৯২ টন মাছ, ১৫৯ টন চিংড়ি ও ৬৯৬ লাখ পোনা, ৬৯ টন কাঁকড়া ও দুই লাখ রেনু ভেসে গেছে।
Published : 29 May 2024, 10:16 PM
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে বরিশাল বিভাগে মৎস্য সম্পদের ২১৭ কোটি ২৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পিরোজপুর জেলায়, কম ঝালকাঠিতে।
বুধবার বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রেমালের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র চাষীদের সহযোগিতার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। বড় চাষীরা যেন সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ নিয়ে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে সেই সুপারিশও করা হয়েছে।
উপ-পরিচালক জানান, বরিশাল বিভাগের ৮৬ হাজার ৯৭৬টি পুকুর ও দিঘী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আয়তন ছয় হাজার ১৬১ হেক্টর। মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছয় হাজার ৯০৬টি। যার আয়তন দুই হাজার ৮৪৭ হেক্টর। কাঁকড়া ও কুচিয়ার ঘের ক্ষতিগ্রস্ত ১২০টি। যার আয়তন ২২ হেক্টর।
বিভিন্ন প্রজাতি সাত হাজার ৯২টন মাছ, ১৫৯ টন চিংড়ি ও ৬৯৬ লাখ পোনা, ৬৯ টন কাঁকড়া ও দুই লাখ রেনু ভেসে গেছে।
অর্থের পরিমাণে মাছের ক্ষতি হয়েছে ১৫০ কোটি ৪২ লাখ, চিংড়ি ৮০ কোটি ৮০ লাখ, দুই কোটি ৮০, কাঁকড়া ও কুচিয়া ১৩ কোটি ৮০ লাখ এবং পোনা ৬০ লাখ টাকা।
৩ কোটি ৫১ লাখ টাকার এক হাজার ১৯টি নৌকা ও মাছ ধরার ট্রলারের ক্ষতি হয়েছে।দুই কোটি ৩৪ লাখ টাকার ৮৯৪টি জালের ক্ষতি হয়েছে । অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে ৩১ কোটি ৪২ টাকা।
বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পিরোজপুর জেলায়। এ জেলায় ক্ষতি হয়েছে ৬৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকার। বরিশাল জেলায় ৫৩ কোটি এক লাখ, বরগুনা জেলায় ৩৫ কোটি ৪১ লাখ, পটুয়াখালীতে ৩৪ কোটি ৫ লাখ, ভোলায় ২১ কোটি ১ লাখ এবং ঝালকাঠিতে ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি পুকুর ও দিঘী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বরগুনায়,৪৬ হাজার ৯১২টি হয়েছে। এরপর ভোলায় ৯ হাজার ৯৫৮টি, বরিশালে ৯ হাজার ৮৪৪টি, পটুয়াখালীতে ৯ হাজার ১৫০টি, পিরোজপুরে ৭ হাজার ৭৫০টি এবং ঝালকাঠিতে ৩ হাজার ৩৬৩টি পুকুর ও দিঘী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মাছের ঘের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পিরোজপুরে, ৩ হাজার ৮৩৫টি। এরপর ভোলায় এক হাজার ৪৩৯টি, বরিশালে ৬৯৮টি, পটুয়াখালীতে ৭৭৫টি এবং ঝালকাঠিতে ১৫৯টি। বরগুনায় কোন মাছের ঘেরের ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া পটুয়াখালী জেলায় ১২০টি কুচিয়া ও কাঁকড়ার ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নৌকা ও ট্রলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে পিরোজপুর জেলায়। এ জেলায় ৪৬৫টি নৌকা ও ট্রলার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বরগুনায় ১৮০টি, ভোলায় ১৮৪টি, পটুয়াখালীতে একশটি ও বরিশালে ৯০টি নৌযান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝালকাঠিতে কোনো নৌকা ও ট্রলারের ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি।
জাল বেশি নষ্ট হয়েছে বরিশালে, ৩৫০টি, পিরোজপুরে ৩২৫টি ও ভোলায় ২১৯টি। ঝালকাঠি ও বরগুনায় এ ধরণের ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিভাগে কোনো নিবন্ধিত জেলের মৃত্যু হয়নি। শুধুমাত্র ভোলায় ৩১ জন জেলে আহত হয়েছে বলে তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক।
এদিকে ঝালকাঠি জেলায় দুই বারের সেরা মৎস্য খামারি ও নলছিটি উপজেলা তিন বারের সেরা খামারি বিপ্লব খান অভিযোগ করেন রেমালের প্রভাবে মাচচাষীরা প্রচুর ক্ষতির মুখে পড়লেও এখন পর্যন্ত মৎস্য দপ্তরের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার পাঁচটি ঘেরের মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। ঘেরের ৮০-৮৫ লাখ টাকার বড় মাছ এবং ১৫-২০ লাখ টাকার মাছে পোনা ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে তার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বিপ্লব আরও বলেন, রেমালে শুধু তিনি একাই নন ছোট বড় অনেক ঘের মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের পূর্নবাসন জরুরি। এ জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেওয়াসহ সরকারের উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে পুনরায় মাছ চাষে আগ্রহী হবেন খামারীরা।