‘বোমা মিজান’ ভারতে গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ ভ্যান থেকে পালিয়ে ভারতে যাওয়ার পর সেখানে জেএমবির জঙ্গি তৎপরতায় নেতৃত্ব দেওয়া জাহিদুল ইসলাম মিজান ওরফে বোমা মিজানকে বেঙ্গালুরুতে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 August 2018, 01:06 PM
Updated : 17 August 2018, 08:21 AM

বাংলাদেশে যাবজ্জীবন সাজার আসামি মিজানকে (৩৮) বিহারের বুদ্ধ গয়া এবং পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের মামলায় খুঁজছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।

এনআইএর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তাদের একটি দল সোমবার বেঙ্গালুরুর রামনগর এলাকার একটি বাড়ি থেকে মিজানকে গ্রেপ্তার করে। ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও বিস্ফোরকের নমুনা জব্দ করা হয়।

“মিজান ভারতে জেএমবির শীর্ষ নেতা এবং বর্ধমান বিস্ফোরণসহ বাংলাদেশে বহু মামলার ফেরারি আসামি। বুদ্ধ গয়ায় বোমা বিস্ফোরণের হোতা সে।”

বোমা মিজানকে বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর তাকে পাটনায় এনআইএ-এর বিশেষ আদালতে হাজির করা হবে বলে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে জেএমবির যে তিন শীর্ষ নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, বোমা মিজান তাদেরই একজন।

বলা হয়, একুশ শতকের শুরুর দিকে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর ই তইয়েবার কুখ্যাত জঙ্গি নসরুল্লাহর কাছ থেকে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন মিজান।

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে লস্কর ই তইয়েবার ক্যাম্পে তিনি প্রশিক্ষণ নেন এবং ভারতে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের বোমা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল। বোমা তৈরির দক্ষতার কারণেই সংগঠনে তার নাম হয় ‘বোমা মিজান’ বা ‘বোমারু মিজান’।

কক্সবাজারে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় ২০০৭ সালে চট্টগ্রামের একটি আদালত বোমা মিজানকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। চট্টগ্রামের আদালতে বোমা হামলার দায়ে পরের বছর তার ২৬ বছর এবং বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম রাখার দায়ে ঝিনাইদহে তার ১৫ বছরের কারাদণ্ড হয়।

চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে আত্মঘাতী বোমা হামলার দায়ে ২০০৮ সালে আরেকটি আদালত মিজানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। আর এক বিচারকের এজলাসে বোমা হামলার দায়ে তার হয় ২০ বছরের কারাদণ্ড।সর্বশেষ গতবছর আরেক মামলার রায়ে চট্টগ্রামের আদালত বোমা মিজানতে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়।

২০০৯ সালের ১৪ মে রাজধানীর আগারগাঁও তালতলা থেকে বোমা মিজানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। ত্রিশালের ঘটনায় পালিয়ে যাওয়ার পর মিজানকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ। তবে ওই সময়ই তিনি পালিয়ে ভারতে চলে যান বলে পুলিশের ধারণা।

ওই বছরের অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ের একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে দুইজন নিহত হওয়ার পর এর সঙ্গে জেএমবির নাম জোরেশোরে উচ্চরিত হতে থাকে। তখনই ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা নতুন করে মিজানের খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করেন।   

ইনডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, সোমবার মিজানকে গ্রেপ্তারের আগে গত ৩ অগাস্ট এনআইএ সদস্যরা কেরালার মালাপ্পুরাম জেলার একটি শ্রমিক কলোনি থেকে আব্দুল করিম ওরফে ছোটা (১৯) এবং মুস্তাফিজুর রহমান ওরফে শাহিন ওরফে তুহিন (৩৭) নামে আরও দুই জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

তাদের কাছ থেকে আইইডির সার্কিট তৈরির নকশা উদ্ধার করা হয় বলে ইনডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে জানানো হয়।