চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী সিআরবি থেকে হাসপাতাল প্রকল্প স্থানান্তরের দাবিতে চলমান আন্দোলনের বিরোধী নন; তবে দলের সাংগঠনিক ফোরামে এ বিষয়ে আলোচনা চান।
Published : 01 Sep 2021, 09:21 PM
দলীয় পদে থাকা নেতারা এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় দলের ফোরামে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
অন্যদিকে আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম এর সদস্য সচিব ও আওয়ামী লীগের নগর কমিটির সহসভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বাবুল মনে করেন, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চাইলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে আন্দোলনকে কিভাবে সমর্থন দেওয়া যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
মঙ্গলবার রাতে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা শেষে নেতাদের উপস্থিতিতে এ বিষয়ে আলোচনা তোলেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। তিনি দলীয় পদে থেকে সাংগঠনিক ফোরামে আলোচনা না করে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিক দৈনিকেও সংবাদ প্রকাশ হয়।
জানতে চাইলে বুধবার মাহতাব উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি সিআরবি আন্দোলনের বিরুদ্ধে নই। শুধু বলেছি, পদধারী হয়েও কেন সাংগঠনিক ফোরামে আলোচনা করেননি।
“সংগঠনের কিছু নিয়ম আছে। সভাপতি হিসেবে আমি গঠনতান্ত্রিক উপায়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করতে বলেছি। প্রয়োজনে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটিতে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।”
বর্ষীয়ান নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আন্দোলনের বিরোধীতা করিনি, মাতামাতির বিরোধীতা করেছি।
“প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও দেবেন তিনি। উনার কাছে তো আবেদন জানাতে হবে। আন্দোলনের নামে রাস্তায় কথা বলে তো লাভ নেই। আমি দল করি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে আমি যাব না। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করব না। হাসাপাতালের স্থান নিয়ে অন্য মত থাকলে সেটা সাংগঠনিক উপায়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো যেতে পারে, সেটাই বলেছি।”
“কিন্তু সাংগঠনিক পদে থেকে আন্দোলনে রোল প্লে করতে হলে যেহেতু সরকার এটা করছে, দল যেহেতু ক্ষমতায়। তাই ফোরামে আলোচনা করা যেত যে আমরা এটার বিরোধীতা করতে চাই। আপনাদের অভিমত কী? এটাই মাহতাব ভাই বলেছেন।“
“নথিপত্র অনুসারে এই প্রকল্প যখন অনুমোদনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে যায়, তখন তাতে স্থান হিসেবে সিআরবির উল্লেখ ছিল না। বিশ্বাস করি, উনাকে জানানো হলে উনি অনুমোদন দিতেন না। এটাই শুধু উনাকে জানাতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকষর্ণ করতে চাই।”
দলীয় ফোরামে আলোচনার বিষয়ে বাবুল বলেন, “তিনি (মাহতাব) যেহেতু সভাপতি, তিনি আগ্রহ প্রকাশ করলে অবশ্যই আলোচনা হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। এখন আলোচনা হতে পারে কিভাবে সংগঠনের পক্ষ থেকে সমর্থন দিয়ে আন্দোলনের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় তা নিয়ে।“
পূর্ব রেলের সদর দপ্তর সিআরবিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব-পিপিপি প্রকল্পের আওতায় হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণে গত বছরের মার্চে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে রেলওয়ে। এর আগে ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটির অনুমোদন দেন।
গত জুলাই মাসে প্রকল্প এলাকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটিকে বুঝিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আন্দোলনে সামিল হন।
চলমান এই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন ও সদস্য সচিব ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল।
কমিটির কো-চেয়ারম্যান পদে আছেন নগর কমিটির আরেক সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ও দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। কার্যকরী সদস্য পদে আছেন নগর কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী।
এছাড়া আওয়ামীপন্থী বিভিন্ন পেশাজীবী নেতা, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও আন্দোলনে সম্পৃক্ত আছেন।