সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিপ্লব উদ্যানে চুক্তির শর্ত ভেঙে নির্মিত দ্বিতীয় তলার দোকানগুলো ভেঙে দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি)।
Published : 01 Oct 2020, 10:06 PM
২৫টির অনুমতিতে দোকান ৪০টি, ভাঙতে সময় ৭ দিন
বিপ্লব উদ্যানে চুক্তির ‘শর্ত লঙ্ঘন’, বন্ধ থাকবে দোকান
বৃহস্পতিবার সিসিসি’র অভিযান দল দোকানগুলো ভেঙে দেয়।
অন্যদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিসি’র বিভিন্ন নির্দেশ ও অভিযানে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে মামলা করেছে।
এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় তলায় নির্মিত ১৫টি দোকান ভেঙে ফেলতে এক সপ্তাহর সময় দিয়েছিল সিসিসি। সেদিন বিপ্লব উদ্যানে নির্মিত নকশা বহির্ভূত এক সারি বসার স্থায়ী আসনও অপসারণ করেছিল তারা।
সিসিসি’র প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুফিদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সময় দেওয়া হয়েছিল দ্বিতীয় তলার নকশা বহির্ভূত দোকান অপসারণের জন্য। মামলা করার জন্য নয়। তারা মামলা করেছে বলে শুনেছি। আজ আমরা দুই তলার ১৫টি দোকান অপসারণ করেছি।”
নালিশি মামলার বিষয়টি জানিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতে মামলা করেছি। তারা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে। মীমাংসার জন্য মৌখিকভাবে জানিয়ে এবং উকিল নোটিস দিয়েও জবাব পাইনি। তাই অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছি। আদালত পাঁচ দিনের মধ্যে তাদের জবাব দিতে বলেছে।”
চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতে বুধবার মামলাটি করার পর বৃহস্পতিবার সিসিসির অভিযান চলে।
মামলার বিষয়ে সিসিসি’র আইন কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলা হয়েছে বলে আজ জেনেছি। এ বিষয়ে আইনগতভাবে পদক্ষেপ নেয়া হবে।”
তবে মিজানুর বলেন, “তারা মামলার বিষয়টি জেনেও দোকানগুলো ভেঙে দিয়েছে।”
সালিশি আইনের ওই মামলায় প্রতিপক্ষ করা হয়েছে প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, সিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রধান প্রকৌশলীকে।
সিসিসি’র পক্ষে ২০১৮ সালে করা চুক্তিতে তখনকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামসুদ্দোহা চুক্তিতে সাক্ষর করেন এবং সাক্ষী ছিলেন প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ একেএম রেজাউল করিম।
২৫টি স্টলকে দ্বিতল ভবনে বিন্যস্ত করার অনুমোদন দেওয়া হয় বলে মামলার দাবি করা হয়।
অনুমোদন পাওয়ার পর ‘চুক্তির শর্ত অনুসারে’ দ্বিতল ভবন ও পার্কের সৌন্দর্য বর্ধনসহ সার্বিক কাজে সাত কোটি ৬৯ লাখ ৯৮ হাজার ৫১২ টাকা বিনিয়োগ করা হয়।
এসব দোকান ভাড়া দেওয়া হয়। সেগুলোর ট্রেড লাইসেন্সও সিসিসি অনুমোদন দিয়েছে বলেও মামলায় উল্লেখ।
এজাহারে বলা হয়- চুক্তি মোতাবেক উন্নয়ন কাজ চলছে। লিখিত ও অনুমোদিত চুক্তির কোনো শর্ত ভঙ্গ করেনি বলেও মামলায় দাবি করা হয়।
গণশুনানি ও পরিদর্শন শেষে, চুক্তির শর্ত ভেঙে বড় আকারের দোকান ও দ্বিতল অবকাঠামো নির্মাণ করায় ২৫ অগাস্ট বিপ্লব উদ্যানের দোকানগুলো বন্ধের মৌখিক নির্দেশ দেন সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। ২৬ অগাস্ট লিখিত নোটিস দেয়া হয়। সেই থেকে ওই উদ্যানের দোকানগুলো বন্ধ আছে।
এরপর ঠিকাদার ৩১ অগাস্ট সিসিসি’র সাথে বৈঠক করে এবং ৬ সেপ্টেম্বর তার ব্যাখ্যাও দেন।
সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বিপ্লব উদ্যানের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য রি ফর্ম লিমিটেড ও স্টাইল লিভিং আর্কিটেক্টস লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়।
বিপ্লব উদ্যান ও এর চারপাশের ফুটপাতসহ আনুমানিক এক একর জমি এই প্রতিষ্ঠান দুটিকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০ বছর মেয়াদী ওই চুক্তিতে।
চুক্তি অনুযায়ী, যেহেতু রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাহ করবে তাই সিটি করপোরেশনকে বছরে মাত্র এক লাখ টাকা কর বাবদ দেবে। এছাড়া ডিজিটাল স্ক্রিনগুলোর জন্য সরকার নির্ধারিত হারে কর দিবে।
প্রতিষ্ঠান দুটি উদ্যানটি সংস্কার করে এক পাশে দোতলা বিপণিবিতান নির্মাণ করে। পরে বিপণিবিতানের দোকানগুলো মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে।
সিসিসি জানায়, দ্বিতল কোনো অবকাঠামো করার বিষয় চুক্তিতে ছিল না।
চুক্তি অনুসারে, উদ্যানের পূর্ব পাশে প্রত্যেকটি ১৫০ বর্গফুটের মোট ২৫টি দোকান নির্মাণ করা যাবে। তবে প্রতিটি দোকান করা হয় ২০০ বর্গফুটের। দোকান তৈরি করা হয়েছে ৪০টি।
এছাড়া জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা সংকুচিত করে দোকানের সামনে বসার জন্য স্থায়ী আসন বানানো হয়েছে।
২৫ অগাস্ট পরিদর্শনে গিয়ে প্রশাসক সুজন জানান, দোকানের বর্ধিত অংশ ভেঙ্গে ফেলা হবে।