শনিবার সন্ধ্যার পর হাটহাজারীর আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় শূরা কমিটির এই সভা হয়। শূরা কমিটির ১১ সদস্যের মধ্যে আটজন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে মাদ্রাসার নীতি নির্ধারণী এই ফোরামের সদস্য সালাউদ্দিন নানুপুরী জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শূরার সভায় চারটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। হুজুরের (প্রয়াত আহমদ শফী) জন্য দোয়া কামনা করা হয়েছে এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে। সভায় তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে যারা শূরার পরবর্তী বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত মাদ্রাসা পরিচালনা করবেন।”
এই কমিটির তিন সদস্য হলেন- মুফতি আবদুস সালাম, মাওলানা শেখ আহমদ ও মাওলানা মো. ইয়াহিয়া। এদের মধ্যে শেখ আহমদ গত জুনে হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক পদ পেয়েছিলেন।
হেফাজতে ইসলামের সর্বোচ্চ নেতা, হাটহাজারী মাদ্রাসার দীর্ঘদিনের মহাপরিচালক (মুহতামিম) শাহ আহমদ শফী শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান। মাদ্রাসার নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব আর শিক্ষার্থীদের আকস্মিক বিক্ষোভের জেরে তার মাত্র এক দিন আগে মহাপরিচালকের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হয় তাকে।
১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেওয়ার পর টানা ৩৪ বছর ওই পদে ছিলেন আহমদ শফী। তার নেতৃত্বেই ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হেফাজতে ইসলাম, যে সংগঠনটি নারী শিক্ষার বিরোধিতা, ব্লগারদের নাস্তিক আখ্যায়িত করে বিচারের দাবি এবং বাঙালি সংস্কৃতির নানা অনুসঙ্গ ও প্রগতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বার বার।
শফীর বয়স হওয়ায় হাটহাজারী মাদ্রাসায় তার উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি বিরোধ দেখা দেয়। মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম বা সহকারী পরিচালকের পদে থাকা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী ছিলেন শীর্ষ পদের অন্যতম দাবিদার। কিন্তু শফীর ছেলে আনাস মাদানির সঙ্গে তার দ্বন্দ্বে হাটহাজারী মাদ্রাসায় অস্থিরতা দেখা দেয়।
এর জেরে গত ১৭ জুন সহকারী পরিচালকের পদ হারান বাবুনগরী। শফী সমর্থকরা সেই দফা টিকে গেলেও তার রেশ থেকে যায়।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে প্রায় ছয় মাস বন্ধ থাকার পর মাদ্রাসা খোলা হলে বুধবার আকস্মিকভাবে কয়েকশ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করে। শফীর অব্যাহতি এবং তার ছেলে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আনাস মাদানির বহিষ্কার দাবিতে বিভিন্ন কক্ষে ভাংচুরও চালায়।
এরপর মাদ্রাসার শূরা কমিটি বৈঠকে আনাস মাদানিকে মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক (শিক্ষা) সহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আর মুহতামিম আহমদ শফী নিজের পদ ছেড়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
শুক্রবার হেলিকপ্টারে ঢাকায় নিয়েও তাকে বাঁচানো যায়নি। শনিবার মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে হাজারো অনুসারীর উপস্থিতিতে জানাজা শেষে তাকে সেখানেই দাফন করা হয়।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক মঈনুল ইসলামের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আব্দুস সবুর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর বর্তমান পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ আছে।
“বাংলাদেশ কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক করোনাকালীন শর্ত ভঙ্গের অজুহাত দেখিয়ে শধুমাত্র আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমীয়ার সর্ববৃহৎ মারকাজ দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসা যে বন্ধ ঘোষণা করেছে, তাতে হাজার হাজার ছাত্রের ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে পড়বে।”
হাজার হাজার ছাত্রের ‘ভবিষ্যত চিন্তা করে’ মাদ্রাসা বন্ধের ঘোষণা অতি দ্রুত প্রত্যাহার করতে বাংলাদেশ কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
হাটহাজারীর আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা দেওবন্দের পাঠ্যসূচিতে পরিচালিত বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো ও বড় কওমি মাদ্রাসা। সাত হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সেখানে অধ্যয়ন করে।
আরও পড়ুন