আহমদ শফীর জানাজায় মানুষের ঢল

হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে জানাজা শেষে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে নিজের মাদ্রাসার কবরস্থানে দাফন করা হল হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীকে।

উত্তম সেন গুপ্ত হাটহাজারী থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2020, 04:59 AM
Updated : 19 Sept 2020, 12:45 PM

তার জানাজাকে কেন্দ্র করে শনিবার দুপুরে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছিল আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকা।

চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে এসে মানুষ এই জানাজায় অংশ নেয়। জানাজায় অংশ নেওয়া মানুষের সারি কয়েক কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়।

মহামারীকালে মানুষের এই ভিড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার কোনো বালাই ছিল না। জানাজায় অংশ নেওয়া অধিকাংশের মুখে মাস্কও ছিল না।

জানাজার সময় সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই সময় খাগড়াছড়ি, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়াগামী বাসগুলোকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

জানাজা পড়িয়েছেন আহমদ শফীর বড় ছেলে পাখিয়ারটিলা কওমি মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ।

দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত জানাজার সময় আহমদ শফীর কফিন ছিল হাটহাজারী মাদ্রাসা সংলগ্ন ডাক বাংলোতে। ঢাকা থেকে সকালে কফিন আসার পর তা রাখা হয়েছিল মাদ্রাসায়, জানাজার আগে তা ডাক বাংলোতে নেওয়া হয়।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে শনিবার আহমদ শফীর জানাজায় অংশ নেয় হাজারো মানুষ।

জানাজায় স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মশিউর রহমান, চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার রাশেদুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বদিউল আলম অংশ নেন।

হেফাজতে ইলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও আহমদ শফীর ছাত্র আজিজুল হক ইসলামাবাদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জানাজা শেষে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মাদ্রাসার উত্তর পাশের মসজিদের কবরস্থানে ‘বড় হুজুরের’ দাফন সম্পন্ন হয়।

এই জানাজা ঘিরে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ছিল সতর্ক। পুলিশ, র‌্যাবের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যদের।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া ও পটিয়া উপজেলায় নিয়োগ দেওয়া হয় সাতজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

হেফাজতে ইসলামের সর্বোচ্চ নেতা শাহ আহমদ শফীর জানাজা ঘিরে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকায় পুলিশ, র‌্যাবের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় বিজিবি।

দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জানাজা পরবর্তী সময়েও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকবে।”

হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক ছিলেন আহমদ শফী। দেশের আলেমদের কাছে তিনি ছিলেন‘বড় হুজুর’।

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের মধ্যে ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে শতবর্ষী শফী এই কওমি মাদ্রাসার মহাপরিচালকের দায়িত্ব ছাড়ার একদিন পর শুক্রবার মারা যান।

দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্টে ভোগার পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত কারণে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছিল।

দেওবন্দের পাঠ্যসূচিতে পরিচালিত দেশের অন্যতম পুরনো এ কওমি মাদ্রাসার শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে শফী বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন।

কওমি মাদ্রাসার নেতৃত্বের উপর ভর করেই তিনি ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে আসা হেফাজতে ইসলামের আমিরের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

আলেমদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হলেও নারীবিরোধী নানা বক্তব্যের জন্য বরাবরই সমালোচিত আহমদ শফী।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে মাঠে নেমে আলোচনায় উঠে আসেন আহমদ শফী।

আরও পড়ুন