দুইবার রায় ঘোষণার তারিখ পেছানোর পর রায়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন হিমুর মা-বাবা।
Published : 13 Aug 2016, 09:23 PM
চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নুরুল ইসলামের আদালতে কুকুর লেলিয়ে ছাদ থেকে ফেলে স্কুলছাত্র হিমাদ্রী মজুমদার হিমু হত্যা মামলার রায় রোববার ঘোষণার কথা রয়েছে।
শনিবার বিকালে টেলিফোনে কথা হয় হিমুর বাবা প্রবীর মজুমদার ও মা গোপা মজুমদারের সঙ্গে।
প্রবীর মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ছেলে খুন হওয়ার পর চার বছর পেরিয়ে গেছে।
“গত চার বছর শুধু ছেলে হত্যার বিচার পেতেই আমি ছুটেছি। অনেক কষ্টে মামলা এ পর্যন্ত এসেছে। আশাকরি ন্যায় বিচার পাব।”
হিমুর মা গোপা মজুমদার বলেন, “আমি ভালো নেই। অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।
“আমরা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার। হিমু আমার বড় ছেলে। সন্তান হারানোর বেদনা শুধু সন্তানহারা মা জানে। আর কেউ বোঝে না।”
কান্না জড়িত কণ্ঠে গোপা বলেন, “আমাদের একমাত্র আশ্রয় আদালত। হিমুর মৃত্যুর আগে তার দেওয়া ঘটনার বর্ণনা রেকর্ড করা হয়েছিল।
“ওই রেকর্ড আদালতে শোনানো হয়েছে। সেখানে হিমু পরিষ্কার করে রিয়াদ, ড্যানি, টিপু ও শাওনের কথা বলেছিল। আশা করি আসামিরা সর্বোচ্চ সাজাই পাবে। এবার যেন অপেক্ষার সার্থক অবসান হয়।”
মৃত্যুর আগে রেকর্ড করা হিমুর বক্তব্য মামলার বিচার চলাকালে একাধিকবার আদালতে বাজিয়ে শোনানো হয়।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অনুপম চক্রবর্ত্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রায় ঘোষণার জন্য রোববার দিন ধার্য করা আছে। আশাকরি দুপুরের মধ্যেই রায় ঘোষণা করা হবে।”
মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক শেষে গত ২৮ জুলাই রায় দেওয়ার জন্য প্রথম দিন ঠিক করেছিল চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত।
কিন্তু সেদিন ওই আদালতের বিচারক নুরুল ইসলাম ছুটিতে থাকায় নতুন তারিখ ১১ অগাস্ট ঠিক হয়।
এরপর ১০ অগাস্ট জানা যায় চট্টগ্রাম আদালতে কর্মরত প্রয়াত আইনজীবীদের স্মরণে পরদিন ‘ফুল কোর্ট রেফারেন্স’ থাকবে। এ কারণে ওইদিনও রায় ঘোষণা হয়নি।
সর্বশেষ ১১ অগাস্ট এ মামলায় রায় ঘোষণা করতে ১৪ অগাস্ট সময় নির্ধারণ করা হয়।
রায় ঘোষণা পিছিয়ে যাওয়ায় আশংকা প্রকাশ করে বুধবার হিমুর মা গোপা বলেছিলেন, “ভাগ্যে কী আছে জানা নেই। যুক্তি-তর্কে ১০ মাস গেল, রায় পেছাল দুবার।”
এ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার দেড় বছর পর ২০১৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর শুরু হয় যুক্তি উপস্থাপন।
রাষ্ট্রপক্ষ এক মাসে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করলেও আসামিপক্ষ সময় নেয় প্রায় নয় মাস, যা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছিল বাদী পক্ষ।
২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় শাহ সেলিম টিপুর বাড়ির ছাদ থেকে হিংস্র কুকুর লেলিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় শিক্ষার্থী হিমুকে। আহত অবস্থায় ২৬ দিন হাসপাতালে থাকার পর ২৩ মে তার মৃত্যু হয়।
এরপর শ্রীপ্রকাশ দাশ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় পাঁচজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পুলিশ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এতে বলা হয়, মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল হিমুকে।
আসামিরা হলেন শাহ সেলিম টিপু, তার ছেলে জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ, রিয়াদের বন্ধু জাহিদুর রহমান শাওন, শাহাদাত হোসেন সাজু ও মাহবুব আলী ড্যানি।
এদের মধ্যে টিপু, ড্যানি ও সাজু কারাগারে আছেন। শাওন জামিন নিয়ে এবং টিপুর ছেলে রিয়াদ শুরু থেকেই পলাতক।