ছেলেকে হারিয়ে বিচারের আশায় চেয়ে থাকা হিমাদ্রী মজুমদার হিমুর বাবা রায় দ্বিতীয়বার পেছানোয় চরমভাবে হতাশ।
Published : 10 Aug 2016, 05:08 PM
বুধবার চট্টগ্রামের আদালত দ্বিতীয়বার রায়ের দিন পেছানোর পর প্রবীর মজুমদার হতাশ হয়ে বলেন, “আমার দুঃখ আর গেল না।”
চার বছর আগে কুকুর লেলিয়ে ছাদ থেকে ফেলে স্কুলছাত্র হিমুকে হত্যার পর থেকে বিচারের আশায় আছে তার পরিবার।
সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক শেষে গত ২৮ জুলাই রায় দেওয়ার দিন ঠিক করেছিল চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত।
কিন্তু সেদিন ওই আদালতের বিচারক নুরুল ইসলাম ছুটিতে থাকায় নতুন তারিখ ১১ অগাস্ট ঠিক হয়।
কিন্তু তার আগের দিন বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অনুপম চক্রবর্ত্তী জানিয়ে দেন, ‘ফুল কোর্ট রেফারেন্স’ হওয়ায় বৃহস্পতিবার এই রায় হচ্ছে না। নতুন তারিখ জানানো হবে।
হতাশ হলেও এ মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ার আশা ছাড়ছেন না হিমুর বাবা প্রবীর ও মা গোপা মজুমদার।
প্রবীর মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফুল কোর্ট রেফারেন্স তো প্রক্রিয়াগত ব্যাপার। আশা করি, পরবর্তী নির্ধারিত দিনেই রায় ঘোষণা হবে, ন্যায়বিচার পাব।”
তবে রায় দ্বিতীয় দফায় পেছানোয় গোপা মজুমদারের মনে সংশয় তৈরি হয়েছে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাগ্যে কী আছে জানা নেই। যুক্তি-তর্কে ১০ মাস গেল, রায় পেছাল দুবার। গতকাল থেকে খুব টেনশনে ছিলাম। হাত-পা কাঁপছিল। আশায় ছিলাম আজ রায় পাব। আমার অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হল।”
এ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার দেড় বছর পর ২০১৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর শুরু হয় যুক্তি উপস্থাপন।
রাষ্ট্রপক্ষ এক মাসে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করলেও আসামিপক্ষ সময় নেয় প্রায় নয় মাস, যা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছিল বাদী পক্ষ।
গোপা গত ২৬ জুলাই রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, হিমুর মৃত্যুর পর আসামিপক্ষ বারবার সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল, কিন্তু তারা ‘হাত মেলাননি’।
হিমুর বাবা প্রবীরও বলেছিলেন ‘প্রভাবশালী’ আসামিদের সঙ্গে চার বছর ধরে ‘লড়াই করার কথা’।
মামলার বাদী হিমুর মামা শ্রীপ্রকাশ দাশ ৮ অগাস্ট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, শুরু থেকেই তার ওপর ‘নানা রকম চাপ’ ছিল।
২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় শাহ সেলিম টিপুর বাড়ির ছাদ থেকে হিংস্র কুকুর লেলিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় শিক্ষার্থী হিমুকে। আহত অবস্থায় ২৬ দিন হাসপাতালে থাকার পর ২৩ মে তার মৃত্যু হয়।
এরপর শ্রীপ্রকাশ দাশ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় পাঁচজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পুলিশ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এতে বলা হয়, মাদক সেবনে বাধা দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল হিমুকে।
আসামিরা হলেন শাহ সেলিম টিপু, তার ছেলে জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ, রিয়াদের বন্ধু জাহিদুর রহমান শাওন, শাহাদাত হোসেন সাজু ও মাহবুব আলী ড্যানি।
এদের মধ্যে টিপু, ড্যানি ও সাজু কারাগারে আছেন। শাওন জামিন নিয়ে এবং রিয়াদ শুরু থেকেই পলাতক।