মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষ দিন আচরণবিধি নিয়ে প্রশ্ন শুনেই সাংবাদিকের দিকে তেড়ে গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।
Published : 25 Dec 2023, 12:48 AM
চট্টগ্রাম-১৬ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী, সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে এ মামলা দায়ের করার জন্য রোববার বাঁশখালীর উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
ইসির আইন শাখার উপসচিব মো. আব্দুছ ছালাম স্বাক্ষরিক চিঠিতে বলা হয়, “মোস্তাফিজুর রহমান ৩০ নভেম্বর ব্যাপক শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমার সময় তার সঙ্গীদের নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ প্রার্থীকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষযে প্রশ্ন করা হলে গালিগালাজ ও মারধর করে মাটিতে ফেলে দেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন।”
মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী সেদিন আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে পরে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটিও নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন দেয়।
চিঠিতে বলা হয়, “মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে অভিযোগ দায়ের করার জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে কমিশন। এ বিষয়ে জেলার বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটরের সহযোগিতায় অভিযোগকারী হিসেবে আদালতে নিয়মত অভিযোগ দায়ের করার জন্য বলা হল।”
সেদিনের ঘটনার সূত্রপাত চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের কার্যালয়ে। চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান যখন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন পত্র জমা দিচ্ছিলেন, তার সঙ্গে ঢুকে পড়েন ১৪-১৫ জন নেতাকর্মী।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বের হন তারা। এসময় ইনডিপেনডেন্ট টিভির সাংবাদিক রাকিব উদ্দিন প্রশ্ন করেন, “আপনি কি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন?"
প্রশ্ন শুনে সঙ্গে সঙ্গে রেগে যান মোস্তাফিজুর রহমান, গালি দিয়ে ওই সাংবাদিককে হাত দিয়ে ধাক্কা দেন এবং হুমকি দিতে থাকেন। তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা এসময় অন্য সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন।
ইনডিপেনডেন্ট টিভির সাংবাদিক রাকিব উদ্দিন সেদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোস্তাফিজুর রহমান ৫ জনের বেশি লোক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর নির্বাচনী আচরণবিধ ভঙ্গের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমার দিকে তেড়ে আসেন। মারতে উদ্যত হন। হুমকিও দেন। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওঠার পর পেছন থেকে আবার উনার কর্মীরা ধাক্কা দিতে থাকে।"
এরপর সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করলে তাদের ধাক্কা দিতে দিতে দোতলা থেকে নিচে নামিয়ে আনেন এমপির অনুসারীরা। সাংবাদিকরা তখন সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুরের গাড়ি থামিয়ে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি গাড়ি চালিয়ে চলে যান। তার অনুসারীরা সাংবাদিকদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। তারপর স্লেগান দিয়ে গাড়ির চারপাশে অবস্থান নিয়ে সেটিকে আদালত ভবন এলাকা পার করিয়ে দেয়।
সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের কাছে গিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানান।
পরে এ বিষয়ে সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর লিখিত ব্যাখ্যা চান এ আসনের নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আবু সালেম মোহাম্মদ নোমান।
সে অনুযায়ী প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির কাছে লিখিত ব্যাখ্যা দেন মোস্তাফিজুর রহমান। অভিযোগ ও সংসদ সদস্যের বক্তব্য যাচাই বাছাই করে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি যে প্রতিবেদন দেন, সেখানে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়।
সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে যাওয়ার বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিলেন এমপি মোস্তাফিজুর
বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুরকে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটিতে তলব
আচরণবিধি নিয়ে প্রশ্ন শুনে তেড়ে গেলেন প্রার্থী, চড়াও হল অনুসারীরা
ফরিদপুরে এসপির বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ
ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন।
ইসির উপ-সচিব মো. মিজানুর রহমান রোববার মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।
সেখানে বলা হয়, “ফরিদপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ উত্থাপন করে তাকে অন্যত্র বদলি করে একজন নিরপেক্ষ পুলিশ সুপারকে পদায়ন করার জন্য কমিশনে একটি আবেদন দাখিল হয়েছে।
“ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাননীয় নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন।”