উপ-কমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ এবং ফেইসবুকের প্রচার প্রচরণাসহ সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে আমরা জানতে পেরেছি ইসকন সমর্থকরা এ হামলার সাথে জড়িত রয়েছে।”
Published : 06 Nov 2024, 09:00 PM
ইসকন সমর্থকরা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে হাজারী গলিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছিলে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তবে ওই ঘটনার সঙ্গে নিজেদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছে ইসকন।
বুধবার বিকালে সংবাদ সম্মেলনে এসে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, “ইসকন নিয়ে ফেইসবুক স্ট্যাটাস শেয়ারকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে কিছু সংক্ষুব্দ লোকজন স্ট্যাটাস শেয়ারকারী ওসমানের দোকান ঘেরাও করে। ৯৯৯ এর খবর আসার পর কোতোয়ালী থানা পুলিশ সেখানে যায়। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে যায়।
ওসমান মোল্লাকে উত্তেজিত লোকজন পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “এসময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। ইটপাটকেল ও অ্যাসিড নিক্ষেপ করে। এতে এক পুলিশ সদস্য অ্যাসিড আক্রান্তসহ ৯ পুলিশ ও পাঁচজন সেনা সদস্য আহত হয়েছে।”
অ্যাসিড আক্রান্ত পুলিশ সদস্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে বলে জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপ-কমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, “তারা সেখানে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ এবং ফেইসবুকের প্রচার প্রচরণাসহ সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে আমরা জানতে পেরেছি ‘ইসকন সমর্থকরা’ এ হামলার সাথে জড়িত রয়েছে।”
এদিকে হাজারী গলির ঘটনার বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে ইসকন।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে ইসকন বলেছে, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এ ধরনের কোনো ঘটনার সাথে ইসকনের সম্পৃক্ততা নেই।
এ ধরনের ঘটনা রোধে আগে থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বিবৃতিতেঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করার পাশাপাশি কোনো নিরীহ লোকজন যেন হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়েও অনুরোধ করা হয়।
পাশাপাশি বিভ্রান্তিমূলক তথ্য বন্ধ করারও দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
ফেইসবুকের একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাতে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায় হাজারী গলিতে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়দের ভাষ্য, হাজারী গলি মিয়া শপিং সেন্টার নামের একটি মার্কেটের একটি দোকানের মালিক ওসমান মোল্লা ফেইসবুকে হিন্দুদের ধর্মীয় একটি সংগঠন ইসকনকে নিয়ে ‘ব্যাঙ্গাত্মক’ পোস্ট করেন।
সেটা নিয়ে স্থানীয় সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে বিক্ষুব্ধরা দল বেঁধে মার্কেটের সামনে জড়ো হয়। তারা দোকানটি ঘিরে রাখে।
পরে পুলিশ গিয়ে পোস্টদাতা ওসমানকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ সময় পুলিশকে ধাওয়া করেন স্থানীয় লোকজন। বিক্ষুব্ধরা বাহিনীর সদস্যদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। উপর থেকে অ্যাসিডও নিক্ষেপ করার ঘটনাও ঘটে।
রাত সাড়ে নয়টার পর পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনী যৌথভাবে হাজারী গলিতে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বেশ কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায়
এ ঘটনার পর বুধবার সকালে শহরের পাইকারি ওষুধ ও স্বর্ণের বাজার হাজারী গলির সব দোকানপাট ‘সিলগালা’ করে বন্ধ দিয়েছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পুরো এলাকা জুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
আটক নিয়ে দুই ধরনের তথ্য
মঙ্গলবারের ঘটনা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যৌথ বাহিনীর টাস্কফোর্স-৪ এর মুখপাত্র লেফেটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ জানিয়েছিলেন, ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে ৮০ জনকে আটক করা হয়েছে। আর বিকালে পুলিশ জানিয়েছে ঘটনাস্থল থেকে ৮২ জনকে আটক করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা রইছ উদ্দিন।
তিনি বলেন, ফেইসবুক পোস্ট শেয়ারকারী ওসমান মোল্লা পুলিশ হেফাজতে আছেন এবং তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।
ফেইসবুক পোস্ট নিয়ে তুলকালাম: হাজারী গলির সব দোকান সিলগালা