নগরীতে গান গেয়ে 'পিটিয়ে হত্যার’ চার দিন আগে এ ঘটনা ঘটে।
Published : 07 Nov 2024, 09:49 PM
সরকার পতনের পর পুলিশবিহীন সড়কে চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর এলাকায় পিটিয়ে হত্যার আরেকটি ঘটনার তথ্য সামনে এনেছে পুলিশ।
নগরীতে ‘গান গেয়ে’ পিটিয়ে হত্যার চার দিন আগে গত ৯ অগাস্ট মো. ইসলাম ওরফে বিটু নামে ২৫ বছর বয়সী নিহত হওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুজনকে গ্রেপ্তারের কথা বলেছে মহানগর পুলিশ।
সেদিন ষোলশহর এলাকায় ওই যুবককে ‘কয়েক দফায় পিটিয়ে হত্যার’ অভিযোগে সম্প্রতি গ্রেপ্তার দুজন হলেন- মো. জানে আলম (৩৪) ও গাজী মো. আলমগীর ওরফে আলম (৩৫)।
তাদের মধ্যে জানে আলম দিন মজুর ও আলমগীর শেখ ফরিদ মাজার সড়কের নৈশ প্রহরী।
খুলশী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোজাম্মেল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ৯ অগাস্ট সকালে ষোলশহর এলাকায় বিটু ওই যুবককে স্থানীয় লোকজন ও পথচারীরা কয়েক দফায় পিটুনি দেয়। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক মৃত আনা হয় বলে জানিয়েছিলেন।
এ ঘটনায় নিহত ইসলামের মা বাদী হয়ে ১৩ অগাস্ট খুলশী থানায় হত্যা মামলা করেছিলেন। এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে লাশের একটি ছবি পাওয়া যায়। সেখানে লাশের পাশে জানে আলমকে দেখা যায়। সে সূত্র ধরে জানে আলম এবং তার দেওযা তথ্যে আলমগীরকে আটকের পর ’পিটিয়ে হত্যা’র তথ্য সামনে আসে।
গান গেয়ে 'হত্যা': পুলিশের জালে ৩ জন
পরিদর্শক মোজাম্মেল বলেন, নিহত ইসলাম মাদকাসক্ত এবং চুরি ছিনতাইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। তিনি সবসময় তার কাছে ব্লেড ও ছুরি রাখত। পথচারীদের ভয় দেখিয়ে ছিনতাই এবং বিভিন্ন স্থানে চুরি করতেন। তার বিরুদ্ধে অন্তত সাতটি চুরি-ছিনতাই ও মাদকের মামলা আছে। সেগুলোতে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন।
ঘটনার বর্ণনায় পুলিশ সদস্যরা বলেন, গত ৯ অগাস্ট রাত ৩টার দিকে ইসলাম বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার বাসা থেকে বের হয়েছিল বলে তার মা এজাহারে লিখেছেন। পরে তাকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ আনা হয়।
এদিকে গ্রেপ্তার দুজন বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
গান গেয়ে 'হত্যা': ফোন করে বাসা থেকে ডেকে নেয়া হয় শাহাদাতকে
আদালতে দেওয়া জবানবন্দি ও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে পরিদর্শক মোজাম্মেল বলেন, ভোর রাতে ইসলাম ষোলশহর এলাকার সোলাইমান বাদশার নার্সারির প্রহরীকে গলায় ছুরি ধরে জিম্মি করে লোহা ও চেয়ার চুরি করেছিলেন। সকালে এক পথচারীর ব্যাগ টান দিয়ে পালানোর সময় তাকে দুই থেকে তিনটি মোটরসাইকেল আরোহী পাঁচ থেকে ছয়জন এবং স্থানীয় কয়েকজন মিলে ধাওয়া করে।
এসময় তিনি দৌড়ে কর্ণফুলী মার্কেটের পাশে নালায় ঢুকে পড়েন। ঘণ্টা খানেকের চেষ্টায় ইসলামকে নালা থেকে বের করে এনে গণপিটুনি দেয় বাইক আরোহী এবং স্থানীয়রা মিলে।”
এরপর তাকে রিকশায় করে ষোলশহর এলাকায় নিয়ে সড়ক বিভাজকের ওপর বেধে পুনরায় মারধর করে। সেখানে যানজট সৃষ্টি হওয়ায় পরে তাকে বিপ্লব উদ্যানে নিয়ে বেঁধে রেখে দফায় দফায় মারধর করা হয়। পরে তার দেহ নিথর হয়ে গেলে হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন।
গান গেয়ে 'হত্যা': তথ্য পেতে 'নাকাল' পুলিশ
চট্টগ্রামে গান গেয়ে যুবককে পিটিয়ে 'হত্যার ঘটনা অগাস্টের': পুলিশ
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। সেসময় থানায় পুলিশ থাকলেও তাদের তেমন সক্রিয়তা ছিল না।
এমন পরিস্থিতিতে গত ১৪ অগাস্ট নগরীর বদনা শাহ মাজারের সামনে থেকে এক যুবকের লাশ পাওয়া যায়। লাশের মাথা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল।
এর এক মাস ৬ দিন পর ২১ অগাস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গান গেয়ে গেয়ে এক যুবককে বেঁধে পেটানোর ২০ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল হলে তার পরিচয় মেলে।
২৪ সেপ্টেম্বর এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।