একটি মুশফিক ‘মাস্টারক্লাস’
আরিফুল ইসলাম রনি, কলম্বো থেকে, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 11 Mar 2018 09:36 AM BdST Updated: 12 Mar 2018 12:54 AM BdST
প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম তখন যেন রোমান কলোসিয়াম। মুশফিকুর রহিম যেন কোনো যু্দ্ধজয়ী গ্ল্যাডিয়েটর। যেন দর্শকপ্রিয় কোনো যোদ্ধাকে হারিয়ে স্তব্ধ করে দিয়েছেন গ্যালারি। প্রাণপন সেই লড়াই জয়ের হুংকার ছুঁড়ছেন চারপাশ বিদীর্ণ করে। ফেটে পড়ছেন বুনো উল্লাসে। কলোসিয়াম হোক বা ২২ গজ, যে লড়াই জিতেছেন মুশফিক, যে ইনিংস খেলেছেন, এরপর অমন খ্যাপাটে উদযাপনই তো মানায়।
Related Stories
৩৫ বলে ৭২, ৫ চার, ৪টি ছক্কা- কেবল একটি ইনিংসের ব্যবচ্ছেদ নয়; নয় শুধু কিছু সংখ্যা। এসব আসলে দারুণ আত্মবিশ্বাসের স্ফুরণ। কিছু প্রমাণের তাগিদ। একটি তীব্র আকাঙ্ক্ষার প্রাপ্তি। কিছু প্রশ্নের জবাব। আর, একই সঙ্গে দুটি জয়। দলকে জিতিয়ে মুশফিকের জয়!
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুশফিকের এই ইনিংস হতে পারে একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের আদর্শ টি-টোয়েন্টি ইনিংসের ডকুমেন্টারি। এই ইনিংসই আবার উদাহরণ, একটি টি-টোয়েন্টি ইনিংস কিভাবে ছাড়িয়ে যায় টি-টোয়েন্টির সীমানা।
মুশফিকের এই ইনিংস শুধু টি-টোয়েন্টি নয়, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে খেলা তিনশর বেশি ম্যাচ মিলিয়েই তার সেরা ইনিংসগুলোর একটি। মুশফিকের সৌজন্যে পাওয়া এই জয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই বাংলাদেশের সেরা জয়গুলির একটি।
যখন উইকেটে গিয়েছিলেন মুশফিক, জয়ের জন্য দলের প্রয়োজন ছিল ৬৩ বলে ১১৫। পরের প্রতিটি মুহূর্তে তার মস্তিষ্ক হিসাব কষেছে নিখুঁতভাবে। তার ব্যাট কথা বলেছে সেই অঙ্ক মেলানোর সুরে।

এই চার-ছক্কার মাঝে ছিল অসাধারণ রানিং বিটুইন দা উইকেট। ২২ গজে প্রান্ত বদলেছেন চিতার ক্ষিপ্রতায়। শেষ দিকে পা ক্র্যাম্প করেছিল। খুঁড়িয়েছেন। কিন্তু শট খেলার সময় কিংবা রানের জন্য ছোটায়, জিততে দেননি চোটকে। ওই পা নিয়েই শেষ ওভারে নিয়েছেন দুটি ডাবলস।
ওপেনিং থেকে তিনে নামা সৌম্য খানিকটা ধুঁকছিলেন শুরুতে। মুশফিক জুগিয়েছেন সাহস। নড়বড়ে শুরু করা সৌম্যর সঙ্গেও গড়েছেন দারুণ জুটি। মাহমুদউল্লাহর যখন শট খেলেছেন, মুশফিক তখন প্রান্ত বদলেছেন।
মাহমুদউল্লাহ ফিরে গেলেন। আরেক পাশে শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান সাব্বির কাটা পড়লেন সরাসরি থ্রোয়ে রান আউটে। ভরসা তখন কেবলই মুশফিক।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তামিম ইকবাল যথার্থই বলেছেন। এ দিনের মুশফিকের ব্যাটিংয়ে কোনো খুঁত ছিল না। আঙুল তোলার সামান্য সুযোগ নেই। এদিন মুশফিক সবই ঠিক করেছেন।
অথচ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এই মুশফিকের ব্যাটিং সামর্থ্য নিয়ে অনেকের মনেই জাগছিল সংশয়। সেটির কারণও ছিল। বিপিএলে তিনি সবচেয়ে সফলদের একজন। কিন্তু ঘরোয়া কুড়ি-বিশের ক্রিকেটের সেই সাফল্য ততটা অনুবাদ করতে পারছিলেন না জাতীয় দলে। এই তো, দেশের মাটিতে সবশেষ শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগেও ৬১ ম্যাচে তার ফিফটি ছিল মোটে একটি।
তবে পালাবদলের আখ্যান শুরু হয়ে গেছে। সেই শ্রীলঙ্কা সিরিজের প্রথম ম্যাচে প্রথমবারের মত ব্যাট করেছিলেন তিনে। খেলেছিলেন ক্যারিয়ার সেরা ৬৬ রানের ইনিংস। বাংলাদেশ তুলেছিল নিজেদের সর্বোচ্চ ১৯৩ রান। দুই ম্যাচ পর নিজের সেরা স্কোরকে আবার ছাপিয়ে গেলেন মুশফিক। বাংলাদেশও নিজেদের সর্বোচ্চ রানের তালিকা লিখল নতুন করে।

সবশেষে সেই উদযাপন। যেখানেও নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার গল্প। ভুল থেকে শিখে ফুল ফোটানোর গল্প। অতীতের বেদনার ক্ষতে খানিকটা প্রলেপ দেওয়ার গল্প।
‘মুশফিকের উদযাপন’ বললে লোকের হয়তো এত দিন সবার আগে মনে পড়তো বেঙ্গালুরুর ম্যাচকে। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ভারতের বিপক্ষে শেষ ওভারে হার্দিক পান্ডিয়াকে দুটি চার মেরে জয়টাকে নাগালে পেয়ে আগেই উদযাপন। অবিশ্বাস্যভাবে হাতের মুঠো থেকে জয় ফসকে গিয়ে সেই উদযাপন হয়ে গেল গ্লানির প্রতীক।
এখন মুশফিকের উদযাপন মানে শুধু সেই হাস্যরসের উপকরণ কিংবা বেদনাময় অতীত নয়। মুশফিকের উদযাপন মানে বীরত্বেরও গল্প।
সর্বাধিক পঠিত
- বদলি করা হল চট্টগ্রামের মানবিক পুলিশ ইউনিটের শওকতকে
- পৃথ্বী ১৫২ বলে ২২৭, রেকর্ডের ছড়াছড়ি
- দেশে ফিরে হুইল চেয়ারে চড়ে গাড়িতে উঠলেন ফখরুল
- ছক্কার রেকর্ডে রোহিতকে ছাড়িয়ে গাপটিল
- ইংল্যান্ড বাদ, ড্র করলেই ফাইনালে ভারত
- পদ্মায় রেল সংযোগ: চীনা ঠিকাদারের কথা উড়িয়ে দিলেন রেলমন্ত্রী
- মেসির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাব: মাসচেরানো
- যেভাবে গ্রাহকের টাকা হাতিয়েছিলেন এক ব্যাংক কর্মকর্তা
- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বন্দি মুশতাকের কারাগারে মৃত্যু
- স্পিন স্বর্গে ২ দিনেই ইংল্যান্ডকে হারাল ভারত