দর্শক চাহিদা না থাকায় প্রথম সপ্তাহে সিনেপ্লেক্স থেকে তিনটি সিনেমা নামিয়ে ফেলা হয়েছে। এদিকে চতুর্থ সপ্তাহে এসে সিনেপ্লেক্স থেকে নামিয়ে ফেলা হয়েছে ঈদের সব সিনেমার শো।
Published : 02 May 2024, 09:57 AM
এবারের ঈদুল ফিতরে দেশে যে ১১টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে তার মধ্যে স্টার সিনেপ্লেক্সের সাতটি শাখায় চলেছে আটটি সিনেমা। এগুলোর মধ্যে দর্শক চাহিদা না থাকায় প্রথম সপ্তাহেই সিনেপ্লেক্স থেকে তিনটি সিনেমা নামিয়ে ফেলা হয়েছিল।
কিন্তু চতুর্থ সপ্তাহে এসে নামিয়ে ফেলা হয়েছে ঈদের সব সিনেমার শো। তার পরিবর্তে মুক্তি পাচ্ছে হলিউডের একাধিক এবং বাংলা দুটি সিনেমা।
‘ভালো চলতে থাকা’ সিনেমাগুলো নামিয়ে বিদেশি সিনেমা চালানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন নির্মাতা।
বুধবার স্টার সিনেপ্লেক্সের ফেইসবুক পেজে আগামী ৩ থেকে ৯ মে সিনেমার শিডিউলে দেখা যায়, হলিউডের ‘দ্য ডার্ক নাইট’ এর ১৬টি, ‘ইন্টারস্টেলার’র ১৫টি, ‘দ্য ফল গাই’র ১৫টি, বলিউডের ‘দ্য ক্রু’র ১৩টি শো চলবে। আর বাংলা সিনেমা ‘শ্যামাকাব্য’র ৬টি, ‘ডেডবডি’ সিনেমার শো সংখ্যা ৫টি, ‘গডজিলা এক্স কং: দ্য নিউ এম্পায়ার’ সিনেমার শো ১ টি, ‘মুচাচোস’ সিনেমার শো সংখ্যা ৪টি।
ঈদে দর্শকপ্রিয়তা পাওয়া সিনেমা নামিয়ে ফেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ‘রাজকুমার’ সিনেমার নির্মাতা হিমেল আশরাফ।
বুধবার দুপুর ১টা ৪৬ মিনিটের শোয়ের টিকেট বিক্রির একটি ছবি পোস্ট করে এই নির্মাতা লিখেছেন, “ঠিক গত সপ্তাহে টিকেট বিক্রিতে ১ নম্বরে ছিল যেই সিনেমা, সেই সিনেমার কোনো শো পরের সপ্তাহে নেই, ১ টা শো-ও না! ঈদের সবগুলো বাংলা সিনেমা উধাও হয়ে গেল!”
দর্শক চাহিদা থাকার পরেও হলিউড সিনেমার শো বাড়িয়ে ঈদের সিনেমা শো বন্ধ করা বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য ক্ষতি মনে করছেন এই নির্মাতা।
বিদেশি সিনেমার জন্য ঈদের সিনেমার শো কেন নেই সেই প্রশ্ন রেখে ফেইসবুকে পোস্ট করেছেন ‘কাজলরেখা’ সিনেমার নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম।
বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটের শোয়ের টিকেট বিক্রির ছবি পোস্ট করে নির্মাতা লিখেছেন, “বসুন্ধরায় আজকের ৪টা ৩০ এর শো। তারপরও আগামী শুক্রবার থেকে বিদেশি ছবির জন্য কাজলরেখার কোন শো নাই। কেন? ঈদের অন্য সিনেমাগুলোও নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। অন্তত ৪০% শো বরাদ্দ দেশি সিনেমার জন্য রাখার অনুরোধ করছি।”
ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ‘দেয়ালের দেশ’ সিনেমার নির্মাতা মিশুক মণিও। তিনিও দীর্ঘ এক পোস্টে জানিয়েছেন তার প্রতিক্রিয়া।
সিনেপ্লেক্স থেকে ঈদের সিনেমার শো নামিয়ে ফেলার ব্যাপারে সিনেপ্লেক্স কতৃপক্ষ নির্মাতা ও প্রযোজকের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি, নামিয়ে ফেলার কারণও জানানো হয়নি বলে গ্লিটজকে জানান নির্মাতা মিশুক মণি।
তিনি বলেন, “সিনেপ্লেক্স থেকে আমার সঙ্গে বা সিনেমা সংশ্লিষ্ট কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করা হয়নি। কেন নামিয়ে ফেলা হয়েছে জানি না। সিনেপ্লেক্সে তো সেল রিপোর্ট দেখা যায়, ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে নির্মিত যে চলচ্চিত্র আমদানি করে আনা হলো সেটার সেল আমাদের সিনেমা থেকে কম। কিন্তু তবুও কেন সিনেমা নামিয়ে ফেলা হলো তার কারণ জানি না। যেহেতু এটা তাদের ব্যবসা। তারা ব্যবসায়িক দিক ভেবেই সব নামিয়ে ফেলেছে হয়ত।”
তিনি আরও বলেন, “আমি সেলিম ভাই, হিমেল আশরাফ ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি, তারা যেহেতু আমার সিনিয়র। তারা যে উদ্যোগ নেয়, যে সিদ্ধান্ত নিবে আমিও সেটাই করব, সেটার সঙ্গেই থাকব।”
নির্মাতাদের প্রশ্ন এবং অভিযোগ খণ্ডন করে বক্তব্য দিয়েছেন স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ সঙ্গে। তার দাবি, ঈদের সিনেমা নামিয়ে ফেলা হয়নি, এক সপ্তাহের জন্য নতুন সিনেমার শিডিউল দেওয়া হয়েছে। নতুন যে সিনেমা মুক্তি পাবে সেগুলোর জায়গা করে দেওয়া হয়েছে।
গ্লিটজকে তিনি বলেন, “ঈদের সিনেমা নামিয়ে ফেলা হয়েছে বিষয়টা তেমন নয়। এক সপ্তাহের জন্য একটা শিডিউল করা হয়েছে। শিডিউলটা পরিবর্তন করা যাবে। নতুন দুটি বাংলা সিনেমা মুক্তি পাবে সেগুলো চালাচ্ছি, আর আমাদের নতুন তিনটি হলিউড সিনেমা আছে। যেগুলোর দর্শক চাহিদা লক্ষ করেই শো টাইম দেওয়া হয়েছে। এটা কিন্তু ফিক্সড কিছু না। এটা পরিবর্তনশীল। দর্শক চাহিদার উপর যেকোনো সময় আমরা পরিবর্তন করতে পারব।”
তিনি আরও বলেন, “নতুন সিনেমা চালানোর জন্য তো আমাদের সুযোগ দিতে হবে, জায়গা দিতে হবে। নতুন সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে, পুরান ছবি চললে সেগুলোর জায়গা দিবেন কোথায়? পুরান সিনেমা না সরালে নতুন সিনেমা আসবে কিভাবে? নতুন সিনেমা বা হলিউড সিনেমা দর্শক পছন্দ না করলে আবার ঈদের সিনেমা চালানো হবে।”
নির্মাতাদের প্রতিক্রিয়ার প্রসঙ্গে মেজবাহ উদ্দিন বলেন, “সবাই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে- আমাদের সঙ্গে কারো আলোচনা হয়নি। আমরা আমাদের সিস্টেমে একটা শিডিউল করেছি। আর একটা বিষয় হলো নির্মাতারা ফেইসবুক পোস্টে সিনেমা শো হাউজফুল এই ছবি দেখাচ্ছে। আজকে তো ছুটির দিন। স্বাভাবিকভাবেই আজকে দর্শক বেশি থাকবে, হাউজফুল থাকবে। গত তিন চারদিন আগের চিত্র কি নির্মাতারা দেখাতে পারবেন?
“তারা কিন্তু বলতে পারবে না সিনেমার সব শো হাউজফুল ছিল। শিডিউলের পরেও কিন্তু আমাদের পুনরায় আরেকটা শিডিউল দেওয়া হয়। দর্শক যে সিনেমাগুলো পছন্দ করে সেগুলো ফেরত নিয়ে আসি। এটা বহুবার হয়েছে। এটা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রতিবাদও করার কিছু নেই।”
এবার ঈদুল ফিতরে যেসব সিনেমা মুক্তি পেয়েছে সেগুলো হল- ‘রাজকুমার’, ‘ওমর’, ‘কাজল রেখা’, ‘দেয়ালের দেশ’, ‘মোনা: জ্বীন-২’, ‘সোনার চর’, ‘লিপস্টিক’, ‘গ্রিনকার্ড’ ‘আহারে জীবন’,‘মায়া: দ্য লাভ’ ও ‘মেঘনা কন্যা’। এসব সিনেমার মধ্যে ‘রাজকুমার’ ও ‘ওমর’ সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল। তবে এত সিনেমা একসঙ্গে মুক্তি দেওয়ায় কোনোটিই প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবসা করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন একাধিক হল মালিক।