চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মো. মাজহারুল ইসলাম ছুপুর দাবি, “পুরো নাঙ্গলকোটের সাধারণ মানুষ আমার পক্ষে।”
Published : 02 May 2024, 09:46 AM
উপজেলা নির্বাচন ঘিরে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে প্রার্থীদের প্রচার এখন তুঙ্গে। এখানে চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন তিনজন; যাদের দুজন আওয়ামী লীগ এবং একজন সদ্য বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মাঠে ‘দাপট’ রয়েছে স্বাভাবিকভাবেই; তবে ‘বিএনপি’ প্রার্থীও ‘পিছিয়ে নেই’। তিনজনই সমানতালে চষে বেড়াচ্ছেন ভোটের মাঠ; ভোট প্রার্থনা করে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
প্রার্থীদের প্রচার ‘জমে উঠায়’ নির্বাচন ঘিরে ‘উৎসাহ-উদ্দীপনা’ বিরাজ করলেও ভোটারদের মাঝে শঙ্কাও আছে। ৮ মে প্রথম ধাপে এ উপজেলায় যে ভোট হবে, তাতে চেয়ারম্যান পদপার্থীদের ‘লড়াই’ জমবে বলে মনে করছেন তারা।
নাঙ্গলকোটে চেয়ারম্যান পদের জন্য দৌড়ে রয়েছেন, উপজেলার বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ভূঁইয়া। আনারস প্রতীকের এ প্রার্থী নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
আরেকজন হলেন, নাঙ্গলকোট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান
ভূঁইয়া বাছির। তিনি ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে চেয়ারম্যান হওয়ার আশায় লড়ছেন দোয়াত কলম প্রতীকে।
আওয়ামী লীগের এই দুই প্রার্থীর সঙ্গে টক্করে রয়েছেন নাঙ্গলকোট উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও উপজেলার মক্রবপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম ছুপু। দলের নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সদ্য বহিষ্কার হয়েছেন। কাপ পিরিচ প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন তিনি।
ভোটের পরিবেশ কেমন তা জানতে নাঙ্গলকোটের কয়েকটি এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। আওয়ামী লীগ আর ‘বিএনপি’র প্রার্থী মাঠে থাকায় নির্বাচনি পরিবেশ ‘জমজমাট’ রয়েছে। এই অবস্থায় ভোটারদের মধ্যে উদ্দীপনা থাকলেও তাতে কিছুটা ভাটা পড়েছে চির পরিচিত সেই ‘শঙ্কায়’।
ভোটারদের কেন্দ্রে টানতে পরিবেশ অনুকূলে থাকা জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
উপজেলার মক্রবপুর এলাকার বাসিন্দা দুলাল হোসেন বলেন, “প্রার্থীদের প্রচার এখন তুঙ্গে। ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহও রয়েছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে ভোটের দিনের পরিবেশের ওপর।
“আমি মনে করি, পরিবেশ ভালো থাকলে মানুষ ভোট দিতে যাবে।”
ঢালুয়া এলাকার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান বলছিলেন, “আমরা সাধারণ মানুষ চিন্তায় আছি, কেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারব কি-না। তবে গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারের নির্বাচন বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে।”
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “দলীয় প্রতীক না থাকলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী ভোটের মাঠে রয়েছেন। বর্তমানে ভোটের যে পরিবেশ আছে; এ ধারা অব্যাহত থাকলে মানুষ কেন্দ্রে যাবে ভোট দিতে।”
“নারীদের জন্য নিরাপদ নাঙ্গলকোট গড়বে এমন ব্যক্তিকেই আমরা ভোট দিয়ে জয়ী করতে চাই”, বলছিলেন উপজেলার পেরিয়া এলাকার ভোটার শাহনাজ আক্তার।
এবারের প্রার্থীদের মধ্যে ‘অনেকেই যোগ্য’ উল্লেখ করে এ নারী ভোটার বলেন, “এ কারণে আমরা প্রার্থী বাছাই করে ভোট দিতে পারব। কিন্তু ভোটের পরিবেশ যদি ভালো না থাকে, তাহলে মানুষ ভয়ে কেন্দ্রে যাবে না।
“প্রচার জমে উঠলেও মানুষের মধ্যে ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে এক ধরণের শঙ্কা আছে।”
তবে ভোটারদের আশ্বস্ত করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন খান।
তিনি বলেন, “নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠু করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভোটারদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তারা উৎসবমুখর পরিবেশে কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।”
ভোটের পরিবেশ নিয়ে কথা হয় তিন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সঙ্গেও। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে ‘শতভাগ নিশ্চিত’ প্রত্যেকেই।
আনারস প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবু ইউসুফ ভূঁইয়া বলেন, “যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই ভোটারদের ঢল নামছে। মানুষের এতো সাড়া পাব, আমি ভাবিনি। মানুষ আমাকে আপন করে নিয়েছে।
“নাঙ্গলকোট আওয়ামী লীগ এবং দলের প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে আছে; আমার জন্য মাঠে কাজ করছেন। এখন অন্য কেউ যদি প্রার্থী হয়, সেটা তো আমার জানার বিষয় না।”
নাঙ্গলকোটে আনারস প্রতীকের গণজোয়ার উঠেছে দাবি করে এ চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, “আনারস প্রতীক এখন নাঙ্গলকোটের মানুষের গণমানুষের প্রতীক। মানুষ আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবে।”
দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান ভূঁইয়া বাছির বলছিলেন, “যেখানে যাচ্ছি সেখানেই মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমার পরিবারের রাজনীতির বয়স ১০০ বছর। আমার দাদাও ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আমার চাচা প্রয়াত সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া নাঙ্গলকোটের মাটি ও মানুষের নেতা।
“আমি নাঙ্গলকোটের প্রথম সারির রাজনৈতিক কর্মী। বিগত দিনে আমার নেতৃত্বেই বড় বড় আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে এখানে। দলের প্রয়োজনে সবসময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি।”
জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি মানুষের জন্যই কাজ করি। যার কারণে মানুষও আমাকে আপন করে নিয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, জাল-জালিয়াতি না হলে আমার জয় নিশ্চিত, ইনশা-আল্লাহ।”
“পুরো নাঙ্গলকোটের সাধারণ মানুষ আমার পক্ষে”-এ দাবি কাপ পিরিচ প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মো. মাজহারুল ইসলাম ছুপুর।
‘জনগণের চাপে’ ভোটের মাঠে আসা ছুপু বলছিলেন, “জনতা প্রার্থী হিসেবে আমাকে বেছে নিয়েছে। মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে বিপুল ভোটে জয় এনে দেবে। চারদিকে এখন কাপ-পিরিচ মার্কার গণজোয়ার।”
তবে শুধু চেয়ারম্যান পদেই নয়, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও এ উপজেলায় লড়ছেন ‘শক্তিশালী’ প্রার্থীরা। তারাও সমানতালে ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের ভোট প্রার্থনা। সব পদের প্রার্থীই বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটাদের নিজেদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান (তালা), উপজেলা ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি আবদুর রাজ্জাক সুমন (চশমা), উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা তৌহিদুর রহমান মজুমদার (বই) এবং সোহাগ হোসেন (পালকি)।
সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা হলেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান কুলছুম আক্তার (হাঁস), কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সদস্য হাজেরা বেগম হীরা (কলস) এবং তাহরিনা আক্তার তারিন (ফুটবল)।
উপজেলা পরিষদ গঠন ও নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে নাঙ্গলকোট উপজেলায়।
এর মধ্যে প্রথম দুটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এবং শেষের তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন।
প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির এ কে এম মাঈন উদ্দিন ভূঁইয়া।
দ্বিতীয় উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান হন জাতীয় পার্টির আলী হোসেন চৌধুরী।
তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহজাহান মজুমদার।
আর চতুর্থ ও পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সামছুদ্দিন কালুকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিলেন ভোটাররা।
প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে এ উপজেলায় ব্যালটের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৭৪১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৯০ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৬২ হাজার ৪৫০ জন। আর হিজড়া ভোটার একজন।
মোট ১১৪টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।