ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এটি স্থাপনের দুদিন বাদে উধাও হয়েছিল।
Published : 17 Feb 2023, 10:12 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাশ থেকে ‘গুম হওয়া’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিবাদী ভাস্কর্যটির মাথা পাওয়া গেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
শুক্রবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি সংলগ্ন ফটক ও ছবির হাটের মাঝামাঝি স্থানে ভাস্কর্যটির খণ্ডিত অংশ পড়ে থাকতে দেখেন পথচারীরা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ভাস্কর্য নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা ভাস্কর্যটির মাথা এক পাশে এবং দেহটি আরেক পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখেন বলে জানান এটি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি ভাস্কর শিমুল কুম্ভকার।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ‘সেন্সরশিপ ও নিপীড়নের’ ঘটনার প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার বইমেলার টিএসসি সংলগ্ন প্রবেশমুখে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্যটি স্থাপন করেন একদল শিক্ষার্থী। ছাত্র ইউনিয়নের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা এ ভাস্কর্য নির্মাণ করে।
ভাস্কর্যটিতে কবিগুরুকে উপস্থাপন করা হয়েছে ভিন্ন রূপে; তার মুখ টেপ দিয়ে বাঁধা, হাতে থাকা কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলিতে ঠুকে আছে পেরেক।
ভাস্কর্য স্থাপনের দুদিন পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেটি আর সেখানে দেখা যায়নি। পরে শিক্ষার্থীরা ওই স্থানে ‘গুম হয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ!’ শিরোনামের এক ব্যানার টানিয়ে দেন।
ভাস্কর্যটি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ভাস্কর শিমুল কুম্ভকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেউ একজন ভাস্কর্যটির ভাঙা মাথার অংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পড়ে থাকতে দেখে ফেইসবুকে শেয়ার করেন। পরে আমরা গিয়ে সেটি উদ্ধার করি। প্রক্টর মহোদয় কর্তৃক রাতের আঁধারে এই উপায়ে ভাস্কর্যটির অপসারণ আমাদেরকে এখন আর অবাক করে না।”
তার অভিযোগ, “এইটা চলমান ‘সেন্সর’ আরোপের রাজনীতিরই ধারাবাহিকতা। ভাস্কর্যটিতে দেশে চলমান এই রাজনৈতিক সংস্কৃতিকেই প্রতিবাদস্বরুপ তুলে ধরা হয়েছিল। লক্ষ্যণীয় যে, রাষ্ট্র যেভাবে মতপ্রকাশকে দমন করে আসছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের দালাল প্রশাসন সেই দমন-পীড়ন বিরোধী একটি প্রয়াসকে একই উপায়ে দমন করল।”
ভাস্কর্যটি কে সরিয়েছে- এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে কথা বলেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী।
তবে তার ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ভেতর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি ব্যতিত একটা নান্দনিক ভাস্কর্যের সঙ্গে আরেকটা ভাস্কর্য বসিয়ে এর সৌন্দর্য নষ্ট করা হয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যে চিন্তা থেকেই ভাস্কর্যটি বসানো হয়ে থাকুক, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই আগে জানানো উচিত ছিল। একটা অনিন্দ্য সুন্দর ভাস্কর্যের পাশে শিল্পের নামে একটা অসংস্কৃতি কাজ করা হয়েছে।
“বিশ্ববরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে এ সমস্ত কাজ, এটা শিল্প নয়, তার প্রতি অসম্মান। তার প্রতি রসিকতা করা, এ ধরনের নানা প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে। আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে।”