‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত চিত্রকর্ম বাদ দেওয়া ও হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
Published : 18 Jan 2025, 09:19 PM
‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’কে ‘ভূইফোঁড়, মৌলবাদী ও ধর্মীয়’ সংগঠন আখ্যা দিয়ে এদের দাবির প্রেক্ষিতে পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত চিত্রকর্ম বাদ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন।
তিনি বলেন, “কেন একটা ভূইফোঁড়, একটা মৌলবাদী সংগঠন, একটি ধর্মীয় সংগঠন যারা ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’ নামে এসেছে, যাদের অস্তিত্ব আমি ১৬ বছরের চাকরি জীবনে এর আগের কখনও শুনিনি। সরকার যদি হামলার পরে দুঃখপ্রকাশ করতে পারে, তাহলে সেই সংগঠনের দাবিতে কেন গ্রাফিতি তুলে নেওয়া হল? সরকারকে সেটির ব্যাখ্যা আগে দিতে হবে।”
শনিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতার’ আয়োজনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এমন প্রশ্ন তোলেন।
আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে এবং গত বুধবার মতিঝিলে পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে আদিবাসী ছাত্র জনতার উপর ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’র সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ ও হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এতে জোবাইদা নাসরীন বলেন, “যেদিন সংবিধান সংস্কার কমিশন সংস্কারের সুপারিশ করেছেন, সেই দিনেই আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা হয়েছে। সংস্কারে যে পরিবর্তন আমরা সুপারিশমালায় দেখেছি, সেখানে মূলনীতিতে ‘বহুত্ববাদ’ রয়েছে।
”এই বহুত্ববাদের অনুবাদ যদি হয় আদিবাসীদের উপর নিপীড়ন, এই বহুত্ববাদের অনুবাদ যদি হয় পাঠপুস্তক থেকে গ্রাফিতি সরানো, এই বহুত্ববাদের মানে যদি হয় প্রতিবাদের পক্ষের মানুষের উপর আবারও নিপীড়ন। তাহলে সেই বহুত্ববাদ এই দেশের মানুষের জীবনে কোনো অর্থ বহন করবে না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ‘স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি’ ব্যানারে গত ১২ জানুয়ারি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি ঘেরাও করে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের পেছনের মলাটে থাকা ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাদ দেওয়াসহ ৫ দফা দাবি জানায়। ওই রাতে ওই বইয়ের অনলাইন সংস্করণ থেকে চিত্রকর্মটি সরিয়ে ফেলা হয়।
এর প্রতিবাদে বুধবার পাঠ্যপুস্তক ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতা’র ওপর হামলা চালায় চিত্রকর্মটি বাদ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেওয়া সংগঠনটির কর্মীরা। এতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় করা একটি মামলার প্রেক্ষিতে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচির মধ্যে শনিবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের দায়িত্বে থাকা এনসিটিবিকে উদ্দেশ্য করে আইনজীবী নিকোলাস চাকমা বলেন, “তাদের (এনসিটিবি) তো একটা যাচাই বাছাই কমিটি আছে। পুস্তকে কী থাকবে কী থাকবে না, কী লেখা হবে, কী লেখা হবে না যাচাই বাছাই করে চিন্তা ভাবনা করেই তো তারা অন্তর্ভুক্ত করে। তাহলে যেই গ্রাফিতি দিয়েছে, সেটা চিন্তা ভাবনা করেই তো দিয়েছে। হুট করে একটা ভুঁইফোঁড় সংগঠন জ্বালো জ্বালো করে গেল, তারা বাদ দিল।”
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, ”অন্তর্বর্তী সরকারও পূর্বের স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের মতো দুই একজনকে গ্রেপ্তার করে হামলার ঘটনা থেকে দায়মুক্তি নেওয়ার চেষ্টা করছে, ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।”
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, ”আমরা বলতে চাই এ ঘটনা গণঅভ্যুত্থানের চেতনার বিপরীতে। অনতিবিলম্বে সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিতে হবে। একইসাথে পাঠ্যপুস্তকে গ্রাফিতিটি পুনর্বহাল করতে হবে।”
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (জাসদ) সভাপতি গৌতম শীল বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে অলিক মৃ গত বুধবারের হামলায় অন্তত ২১ জন আহতের কথা তুলে ধরে বলেন, “যার নেতৃত্বে সেদিন আক্রমণ হয়েছে, সে এখনও বহাল তবিয়তে বিভিন্ন মিডিয়ায় টক শো করে চলেছে। বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসন, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র এবং সরকার এখনও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারছেন না। তার কী এমন শক্তি রয়েছে যে বাংলাদেশ সরকার তাকে ভয় পায় তাকে গ্রেপ্তার করতে?”