“ইলিশ দেশের মাছ, আমদানি করা জিনিস না, তাহলে দাম কেন এত বেশি,”বলেন এক ক্রেতা।
Published : 30 Aug 2024, 08:26 PM
আকস্মিক বন্যার কারণে চট্টগ্রামসহ কিছু এলাকায় সবজির দাম চড়লেও রাজধানী ঢাকায় সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কেজিতে ১০/১৫ টাকা কমেছে।
সেইসঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই নিম্নমুখী মুরগি দর কেজিতে আরও ৫/১০ টাকা কমে বিক্রি হতে দেখা গেছে শুক্রবার। তবে আগের চেয়ে বেড়েছে ইলিশের দাম।
শুক্রবার কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পটল, ধুন্দল ও পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। অলিতে-গলিতে ভ্রাম্যমাণ সবজির ভ্যানে পেঁপে ৩০ টাকা দরেও বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এ দুটি বাজারে ঢেঁড়স কেজিপ্রতি ৫০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৪০ ও দেশি শসা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ৩০ টাকা করে কিনছেন ক্রেতারা।
তবে বাজারে আগে থেকেই দাম চড়ে থাকা কিছু সবজি আগের দরেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। মানভেদে কেজি প্রতি বেগুন, বরবটি, করলা ও প্রতিটি লাউ ৬০ টাকা। চিচিঙ্গা ৫০ টাকা ও টমেটো ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তেঁজকুনিপাড়া বাজারে সবজি কিনতে আসা তারেক রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভেবেছিলাম বন্যার কারণে সবজির দাম বেশি থাকবে। কিন্তু তুলনামূলক কমই পেলাম। আবার কিছু সবজির দাম বেশি। যেগুলোর দাম বেশি সেগুলো না নিয়ে যেগুলোর দাম কম সেগুলো নিয়েছি।”
তারেক রহমান তেজকুনিপাড়া বাজার থেকে এক ডজন লাল ডিম নিলেন ১৫৫ টাকা দিয়ে। মুরগির লাল ডিম গত সপ্তাহেও একই ছিল বলে জানান তিনি।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. রাজু আহমেদ বলেন, “বেশিরভাগ সবজিতে গত সপ্তাহের বাজারের চেয়ে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমছে।”
কারওয়ান বাজারে আরেক সবজি বিক্রেতা মো. রুবেলের বাড়ি চট্টগ্রাম শহরের চন্দনাই। তিনি বলেন, আমার পরিবার শুক্রবার চট্টগ্রাম থেকে পেঁপে কিনেছে ৮০ টাকা কেজি দরে। আর করলা কিনেছে ১০০ টাকায়।
“সেখানে এখন সবকিছুর দাম বেশি। কিন্তু কারওয়ান বাজারে কম। মানে ঢাকায় বন্যার প্রভাব খুব একটা পড়ে নাই।”
খুচরায় কমেনি পেঁয়াজের দাম
ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি দর কেজিতে ২ টাক কমলেও খুচরায় কোনো প্রভাবে নেই।
এ বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি দোকান মেসার্স আনোয়ার এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা মো. খলিল মল্লিক শুক্রবার ফরিদপুরের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০২ টাকা আর পাবনার পেঁয়াজ ১০৬ টাকা দরে বিক্রি করেন।
তিনি বলেন, সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম দুই থেকে তিন টাকা করে কমছে। এখন বাজারে আমদানি ভালো। এ বাজারে খুচরায় ফরিদপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি দরে। আর পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়।
আর আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে আলু। কারওয়ান বাজারে আলু পাইকারিতে ৪৮ কেজি দরে বিক্রি হলেও খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়।
তবে কারওয়ান বাজারের বাইরে মগবাজারের মধুবাগ ও মীরবাগের খুচরা দোকানগুলোতে আলু ৬০ কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে আলুর পাইকারি দোকান মেসার্স মদিনা ট্রেডার্সের বিক্রেতা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “আলু পাইকারিতে ৪৮ টাকা কেজি। এই দাম অনেকদিন ধরে। দামে পরিবর্তন নেই।”
অপরদিকে খুচরায় আদা বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ২৪০ টাকা, আর চীনা রসুন ২২০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে খুচরা বিক্রেতা আসিফ ইসলাম বলেন, “রসুনের দাম একটু বাড়ছে। আর পেঁয়াজের দাম একটু কমছে।”
অপরদিকে বেশ কয়েক দিন ধরেই চড়া কাঁচা মরিচের দাম খানিকটা কমে ২৪০ কেজি দরে আটকে আছে। মগবাজারের মধুবাগ ও মীরবাগের খুচরা বাজারে কাঁচামরিচ ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে শুক্রবার।
দুই সপ্তাহ আগে কাঁচা মরিচ খুচরায় ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে রাজধানীর বাজারগুলোতে। এরপর তা কমে ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ কেজি দরে।
মুরগির বাজার
কারওয়ান বাজার তেঁজকুনিপাড়ায় গত সপ্তাহের চেয়ে শুক্রবার কেজিতে ৫ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা দরে; সোনালি মুরগি ১০ টাকা কমে ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে গরুর মাংস আগের মত ৭৫০ টাকা দরেই কিনতে হচ্ছে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা দরে। গরু ও খাসির মাংসের দরে কোনো পরিবর্তন নেই বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা।
মাছের বাজার
ইলিশ বাদে বাজারে অন্যান্য মাছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমার তথ্য পাওয়া গেছে শুক্রবার।
রুই মাছ আকারভেদে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, বড় আকারের তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, কৈ ২২০ টাকা, পাঙ্গাস ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শোল ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম কিছুটা কমায় ক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে বলে জানালেন কারওয়ান বাজারের মোহাম্মদ মোক্তার; তিনি ক্রেতাদের মাছ কেটে দেওয়ার কাজ করেন।
মোক্তারের ভাষ্য, “আমি একদিনে ২০০ কেজির মত কাটি। মাঝেমধ্যে ৩০০ কেজিও হয়। আবার মাঝেমধ্যে দেড়শ বা একশ কেজিও হয়। তবে এখন আগের চেয়ে মাছ বেশি কাটতেছি।
কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা মো. সিয়াম বলেন, “কিছু মাছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমছে। আবার কিছু মাছে আগের দামই আছে। তবে কমার সংখ্যা বেশি।”
চড়েছে ইলিশের দাম
ভরা মওসুমেও দাম কমার খবর নেই ইলিশে। গণ আন্দোলনে সরকার পতন ও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বগ্রহণের পর ইলিশের দাম কমার খবর রটেছিল ফেইসবুকে, যদিও বাজারে ছিল উল্টো চিত্র।
আগের সপ্তাহের চেয়ে শুক্রবার কারওয়ান বাজারে ইলিশের দাম অন্তত ১০০ টাকা বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ ক্রেতারা কিনছেন ১৬৫০ টাকা দরে। আর এক কেজি দুইশ কিংবা তিনশ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকা দরে।
বিক্রেতা মো. হৃদয় বলেন, “দুই দিন ধরে ইলিশের দাম বাড়ছে। কেজিতে ১০০ টাকার উপরে বাড়ছে। ক্রেতারা দাম বাড়া নিয়ে বিরক্ত হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু আমাদের বেশি দাম দিয়েই আনতে হয়েছে।”
কারওয়ান বাজারে তিন-চারটি দোকান ঘুরে ইলিশের দাম যাচাই করতে দেখা গেল জহিরুল ইসলাম নামে এক ক্রেতাকে। এক দোকানিকে তিনি বলছিলেন, “সেদিন এক কেজির ইলিশ ১৪০০ টাকায় কিনলাম। আর আজ বলতেছেন ১৬৫০ টাকা। দাম যেখানে কমার কথা, সেখানে বাড়তেছে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জহিরুল বলেন, “এটা দেশের মাছ। আমদানি করা জিনিস না। তাহলে দাম কেন এত বেশি থাকবে?
“মানলাম ইলিশ ধরার খরচ একটু বেশি। তাই বলে ১৬৫০ টাকা না। এক কেজি ওজনের ইলিশ হাজার কিংবা ১১০০ টাকা ঠিক আছে।”
পুরনো খবর
বন্যা: চট্টগ্রামে সবজির দামে লাফ, কাঁচা মরিচ ছুঁয়েছে হাজার টাকা