যুক্তরাষ্ট্র গতবছর চীনে রপ্তানির চেয়ে তিনগুণের বেশি পণ্য আমদানি করেছে। বড় এই ব্যবধান কমিয়ে আনতে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
Published : 19 Apr 2025, 08:44 AM
যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ সালে চীন থেকে কিনেছে ৪৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য, বিপরীতে মাত্র ১৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে দেশটিতে। অর্থাৎ চীন থেকে সে বছর তিন গুণের বেশি পণ্য কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র।
দুই দেশের বিশাল এই বাণিজ্য ঘাটতি বা আমদানি-রপ্তানির ২৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের ব্যবধান কমিয়ে আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। যে কারণে চীনা পণ্যের ওপর তিনি ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।
আলজাজিরা লিখেছে, ট্রাম্প যে শুল্কারোপ করেছেন, তাতে এখন চীনা পণ্যের মূল দামের তুলনায় ২ দশমিক ৪৫ গুণ শুল্ক দিতে হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের পণ্য দারুণ ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। আর এতে বাজারে চীনা পণ্যের প্রতিযোগিতাও কমবে।
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসা ট্রাম্পের এ উদ্যোগের পাল্টা জবাব দিচ্ছে চীনও। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের বিপরীতে চীন আমেরিকান পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারা ‘শেষ পর্যন্ত’ লড়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগও তুলেছে দেশটির সরকার।
দুই শীর্ষ অর্থনীতির এই পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপ বিশ্বের বাণিজ্য ব্যবস্থাকে জোর ধাক্কা দিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে অনেক দেশ ও কোম্পানিকে কষতে হচ্ছে জটিল সব হিসাব-নিকাশ।
যুক্তরাষ্ট্র যা বিক্রি করে চীনে
যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি খনিজ জ্বালানি, তেল বীজ, মেশিনারি যন্ত্রপাতি ও উড়োজাহাজ কেনে চীন। একক পণ্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সয়াবিন রপ্তানি করে চীনে, যা শুকরের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীনে ১ হাজার ৩৪০ কোটি ডলারের খনিজ জ্বালানি রপ্তানি করেছে, যা ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রের ওই পণ্যের মোট রপ্তানির ১০ দশমিক ৭ শতাংশ।
তেলবীজ ও তেলজাতীয় ফল বিক্রি করেছে ১ হাজার ৩৩০ কোটি ডলারের, যা ওই পণ্যের মোট রপ্তানির ১০ দশমিক ৬ শতাংশ।
ইলেক্ট্রিক্যাল মেশিনারি সরঞ্জাম ও যন্ত্রাংশ বিক্রি করেছে ১ হাজার ১৫০ কোটি ডলারের, যা ওই মার্কিন পণ্যের রপ্তানির ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর, বয়লার, মেশিনারি ও মেকানিক্যাল পণ্য বিক্রি করেছে ১ হাজার ৫০ কোটি ডলারের, যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট রপ্তানির ৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
উড়োজাহাজ, মহাকাশযান ও যন্ত্রাংশ বিক্রি করেছে ১ হাজার ২০ কোটি ডলারের, যা মোট রপ্তানির ৮ দশমিক ১ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য কেনে চীন থেকে
আলজাজিরা লিখেছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ৪৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য কিনেছে চীন থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, চিপ, ল্যাপটপ ও স্মার্টফোনের প্রধান সরবরাহকারী চীন।
২০২৪ সালে চীন থেকে সবচেয়ে বেশি ১২ হাজার ৩৮০ কোটি ডলারের ইলেক্ট্রিক্যাল মেশিনারি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা দেশটির মোট আমদানির ২৮ দশমিক ২ শতাংশ।
এরপরই রয়েছে নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর, বয়লার, মেশিনারি ও মেকানিক্যাল পণ্য। চীন থেকে ৮ হাজার ২০০ কোটি ডলারের এসব পণ্য ২০২৪ সালে কিনেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা তাদের মোট আমদানির ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ।
খেলনা, গেমস ও খেলাধুলার যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে ৩ হাজার কোটি কোটি ডলারের, যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট আমদানির ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
প্লাস্টিক আমদানি করেছে ১ হাজার ৯৩০ কোটি ডলারের। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মোট আমদানির ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
আসবাব, বিছানাপত্র ও কুশন কিনেছে ১ হাজার ৮৫০ কোটি ডলারের, যা আমদানির ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে চীন থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য কেনে ক্যালিফোর্নিয়া। ২০২৪ সালে ১২ হাজার ২৮০ কোটি ডলারের পণ্য কিনেছে অঙ্গরাজ্যটি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ইলিনয় ও টেক্সাস।
অপরদিকে চীনে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো, আইওয়া, কানাস, নেব্রাস্কা, সাউথ ডাকোটা, উটাহ।
আরও পড়ুন-
চীন, ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা দেখছেন ট্রাম্প
বাণিজ্যযুদ্ধ: যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ রপ্তানি বন্ধ চীনের
শুল্ক: 'ভুল শুধরে নিতে' যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান চীনের
বাড়তি শুল্ক থেকে স্মার্টফোন ও কম্পিউটারকে রেহাই দিলেন ট্রাম্প