চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তি সেবা ফোর জি যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ।
Published : 19 Feb 2018, 06:52 PM
সোমবার সন্ধ্যায় দেশের চার মোবাইল অপারেটরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফোর জি লাইসেন্স দিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাইকেল ফোলি, রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, বাংলালিংকের সিইও এরিক অস এবং টেলিটকের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী গোলাম কুদ্দুস ফোর জি লাইসেন্স গ্রহণ করেন।
এই লাইসেন্স হাতে পাওয়ার পরপরই গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক তাদের ফোর জি সেবা চালু করবে বলে আগেই জানিয়েছিল।
অনুষ্ঠানে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী গোলাম কুদ্দুস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘খুব শিগগিরই’ ফোর জি সেবা চালু করবেন তারা।
এই অনুষ্ঠানেই প্রযুক্তি নিরপেক্ষতায় রূপান্তর এবং রেডিও কমিউনিকেশন অ্যাপারেটাস (যন্ত্রপাতি সংক্রান্ত) লাইসেন্স বুঝে নেন গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “মোবাইল ফোনকে কেন্দ্র করে সরকারের ডিজিটাল রূপান্তর হবে, সরকারের সেবা জনগণের কাছে পৌঁছানো হবে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে, আগামীতে কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে মোবাইল ফোন।
“আগামীতে একমাত্র ডেটার উপর নির্ভর করে চা্রপাশ গড়ে উঠবে এবং এটি জীবনের অংশ হয়ে যাচ্ছে।”
ফোর জিতে মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিতে মোবাইল অপারেটরদের তাগাদা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “জনগণ যেন উপকৃত হয়, এর সেবার মান ধরে রাখতে হবে, আমরা সেবা সেভাবে দিতে পারছি না, জনগণ যে মূল্য দিয়ে কেনে। জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। সেবার মানই প্রথম এজেন্ডা এবং অপারেটরদের অনুরোধ করব, সেবার মানটা ঠিক রাখবেন।
ফোরজিতে সিম রিপ্লেসমেন্টে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেওয়া যুক্তিযুক্ত নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এমন কিছু করবেন না যাতে বিটিআরসিকে বলতে হয়, আপনারা নিয়ম ভঙ্গ করছেন।”
অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি বলেন, “বাংলাদেশের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। আমরা ফোর জি সেবা শুরু করেছি, আগামীতে আরও এলাকায় শুরু করা হবে।”
রবির এমডি অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের সবার গর্ব করা উচিত, আমরা ফোর জি লঞ্চ করতে পারলাম। আমারা আশা করি, এর মাধমে দেশের বড় পরিবর্তন করতে পারব।”
মোবাইল হ্যান্ডসেট ও ফোর জির সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্ক কমানো এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফোর জি সেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রণোদনা দেওয়া যায় কি না সে বিষয়টি ভেবে দেখতে নীতি-নির্ধারকদের প্রতি আহ্বান তিনি।
লাইসেন্স পাওয়ার পর থেকেই রবি’র ১৮৯টি সাইটে ফোরজি রান হচ্ছে বলেও জানান মাহতাব।
বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক অস বলেন, এর মধ্য দিয়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। ফোর জিতে আরও ডেটা গ্রাহকদের দেওয়া যাবে এবং তা হবে উচ্চগতির।
টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী গোলাম কুদ্দুস বলেন, “এ লাইসেন্স পাওয়া খুবই আনন্দের। স্বপ্নের মাইলফলক আমরা ছুঁতে যাচ্ছি। থ্রিজির তুলনায় ফোরজিতে গ্রাহকরা আরও বেশি গতির ইন্টারনেট সুবিধা পাবে।”
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদও ফোর জিতে সিম রিপ্লেসমেন্টের জন্য টাকা না নিতে অপারেটরদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “ফোর জি ব্যবহার করলে বুঝতে পারবেন, এর সুবিধা এবং থ্রিজি থেকে ইন্টারনেট গতি কত দ্রুততম হয়।”
বর্তমান বিশ্ব ভয়েস থেকে ডেটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রকৌশলী শাহজাহান মাহমুদ বলেন, “তরুণ প্রজন্ম বেশি সময় ডেটা ব্যবহারে খরচ করে। দেশে প্রায় ৮ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে, দেশে ব্যান্ডইডথ ব্যবহার বেড়ে চলছে।
“ফোর জি হ্যান্ডসেট মাত্র ১০ শতাংশ রয়েছে গ্রাহকের হাতে, সরকার এ সমস্যা সমাধানে কাজ করছে এবং দেশে ইতোমধ্যে হ্যান্ডসেট উৎপাদন শুরু হয়েছে।”
ফোর জির পর ফাইভ জি এবং আরও নতুন প্রযুক্তি আনার আশা প্রকাশ করে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, “আগামীতে আমরা স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে যাচ্ছি।”
বাংলালিংকের ২০০-এর বেশি সাইটে ফোর জি সেবা শুরু হয়েছে বলে জানান মোবাইল অপারেটরটির সিনিয়র ম্যানেজার (কর্পোরেট কমিউনিকেশন) অংকিত সুরেকা।
গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক গ্রাহকদের মধ্যে যারা তাদের সিম ফোর জিতে রূপান্তর করেছেন তারা ইতোমধ্যে ঢাকায় এই সেবা পেতে শুরু করেছেন।
ফোর জি লাইসেন্স নিতে গত জানুয়ারিতে আবেদন করে গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, টেলিটক ও বন্ধ হয়ে যাওয়া অপারেটর সিটিসেল। তবে গত মঙ্গলবার নিলামে অংশ নিয়ে ফোর জি তরঙ্গ কিনে নিয়েছে শুধু গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক।
রবি তাদের হাতে থাকা তরঙ্গ প্রযুক্তি নিরপেক্ষতায় রূপান্তর করে ফোর জি সেবায় আসছে। টেলিটকও একইভাবে এই সেবা দেবে, যদিও তারা এখনও প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা সুবিধা পাওয়ার অপেক্ষায়।
বন্ধ হয়ে যাওয়া অপারেটর সিটিসেল ফোর জি তরঙ্গ নিলামে অংশ না নেওয়ায় পুনরায় চালু হওয়ার সম্ভবনা থেকে ছিটকে পড়েছে।
ফোর জি তরঙ্গের নিলাম এবং প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার সুবিধা বিক্রি করে ভ্যাটসহ পাঁচ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা আয় করেছে সরকার।
এ সংক্রান্ত আরও খবর