৬৭ শতাংশ তরঙ্গ অবিক্রিত, সুযোগ থাকছে ৬ মাস

ফোর জি তরঙ্গের নিলামে নির্ধারিত তরঙ্গের মাত্র ৩৩ শতাংশ তরঙ্গ বিক্রি করতে পেরেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2018, 04:20 PM
Updated : 14 Feb 2018, 08:54 AM

এ হিসাবে নিলামে তিন ভাগ তরঙ্গের মাত্র একভাগ তরঙ্গ নিয়েছে অপারেটররা।

মঙ্গলবার ঢাকা ক্লাবে তরঙ্গের নিলামের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাজাহান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, “তরঙ্গের মাত্র ৩৩ শতাংশ বিক্রি হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি সন্তুষ্ট না।

“তবে অপারেটরদের জন্য তরঙ্গ নেওয়ার সুযোগ আরও ৬ মাস রয়েছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে অপারেটররা ইচ্ছা করলেই তরঙ্গ নিতে পারবে।”

নিলাম অনুষ্ঠান শেষে স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক নাসিম পারভেজ জানান, নিলামে মোট ১১টি ব্লকে ৪৬ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলামের জন্য ছিল। এর মধ্যে তিনটি ব্লকে ১৫ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ বিক্রি হয়েছে।

ফোর জি তরঙ্গ নিলাম এবং ফোর জি সেবা দিতে অপারেটরদের বিদ্যমান প্রযুক্তি রূপান্তর বাবদ সরকার ১১ হাজার কোটি টাকা আয় করবে বলে আশা করছিল সরকার। তবে আয় হয়েছে ৫ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা।

এর আগে ২০১৩ সালে থ্রিজি তরঙ্গ নিলামেও ৪০ মেগাহার্টজের মধ্যে ২৫ মেগাহার্টজ বিক্রি হয়। বিটিআরসির হাতে বাড়তি থাকা তিনটি স্লটে ১৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কেনার কেউ আগ্রহ দেখায়নি । ফলে থ্রিজির মোট তরঙ্গের ৩৮ শতাংশই অবিক্রিত থেকে যায়।

মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিক্রি না হওয়ার মূল কারণ তরঙ্গের উচ্চমূল্যে। সহনীয় মূল্য রাখা হলে অপারেটররা আরও তরঙ্গ নিতে পারবে। অবিক্রিত তরঙ্গ অব্যবহৃত থাকায় এ থেকে কোনো লাভ হবে না।

দেশের চার অপারেটর ফোর জি তরঙ্গ নিলামে থাকার আবেদন করলেও শেষ পর্যন্ত নিলামে অংশ নিয়েছে শুধু গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অপারেটর রবি তাদের হাতে থাকা তরঙ্গ প্রযুক্তি নিরপেক্ষতায় রূপান্তর করে ফোর জি সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

আর বন্ধ হয়ে যাওয়া অপারেটর সিটিসেল নিলামে অংশ না নেওয়ায় তাদের পুনরায় চালু হওয়ার সম্ভাবনা আর থাকল না।

তরঙ্গের প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার সুবিধা পেতে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটক ফোর জি সেবায় আসতে চাইলে ওই সময়ের মধ্যে তাদের প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার সুবিধা নিতে হবে।   

চারটি ব্লকে এক হাজার ৮০০ মেগাহার্টজে (প্রথম ব্লক- ৫ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ, দ্বিতীয় ব্লকে ৫ মেগাহার্টজ করে দুটি এবং দুই দশমিক ৪ মেগাহার্টজ আরেকটি ব্লক) এবং দুই হাজার ১০০ মেগাহার্টজের ৫টি ব্লকে ( প্রতি ব্লকে ৫  মেগাহার্টজ করে) এ নিলাম হয়।

এর মধ্যে গ্রামীণফোন শুধু এক হাজার ৮০০ মেগাহার্টজ এবং বাংলালিংক দুই হাজার ১০০ মেগাহার্টজ ও এক হাজার ৮০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলামে অংশ নেয়।

বাংলালিংক এক হাজার ১১৯ কোটি টাকায় ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ড এবং এক হাজার ৪৩৯ কোটি টাকায় ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের মোট ১০.৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে। 

গ্রামীণফোন ১ হাজার ২৮৪ কোটি টাকায় কিনেছে ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের ৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। 

বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাজাহান মাহমুদ বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ফোর জি লাইসেন্স ও তরঙ্গ ব্যবহারের অনুমতিপত্র অপারেটরগুলোর কাছে হস্তান্তর করবেন তারা।

টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের উপস্থিতে তরঙ্গ নিলাম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিটিআরসি স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক নাসিম পারভেজ।

মানসম্মত সেবা দিতে দীর্ঘদিন ধরে তরঙ্গ বরাদ্দ ও প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার দাবি করে আসছিল অপারেটররা। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা ও তরঙ্গ বরাদ্দ পাওয়ায় অপারেটরদের সেবার মান আরো উন্নত হবে বলে আশা করছে বিটিআরসি।