ফোর জি তরঙ্গের নিলাম এবং প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার সুবিধা বিক্রি করে ভ্যাটসহ পাঁচ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা আয় করেছে সরকার।
Published : 13 Feb 2018, 02:05 PM
মঙ্গলবার ঢাকা ক্লাবে তরঙ্গের নিলামের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাজাহান মাহমুদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, নিলামে অংশ নিয়ে দেশের দুই অপারেটর বাংলা লিংক ও গ্রামীণফোন মোট তিন হাজার ৮৪৪ কোটি টাকায় ফোর জি তরঙ্গ বরাদ্দ নিয়েছে।
এছাড়া টু জি ও থ্রি জি সেবার জন্য বরাদ্দ করা তরঙ্গে প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা দিয়ে (যাতে ওই তরঙ্গ যে কোনো প্রযুক্তিতে ব্যবহার করা যায়) গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক ও রবির কাছ থেকে সরকার পেয়েছে ১ হাজার ৪৪৫ দশমিক ০৮ কোটি টাকা।
দেশের চার অপারেটর ফোর জি তরঙ্গ নিলামে থাকার আবেদন করলেও শেষ পর্যন্ত নিলামে অংশ নিয়েছে শুধু গ্রামীণফোন ও বাংলালিংক।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অপারেটর রবি তাদের হাতে থাকা তরঙ্গ প্রযুক্তি নিরপেক্ষতায় রূপান্তর করে ফোর জি সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
আর বন্ধ হয়ে যাওয়া অপারেটর সিটিসেল নিলামে অংশ না নেওয়ায় তাদের পুনরায় চালু হওয়ার সম্ভবনা আর থাকল না।
তরঙ্গের প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার সুবিধা পেতে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটক ফোর জি সেবায় আসতে চাইলে ওই সময়ের মধ্যে তাদের প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার সুবিধা নিতে হবে।
এর মধ্যে গ্রামীণফোন শুধু এক হাজার ৮০০ মেগাহার্টজ এবং বাংলালিংক দুই হাজার ১০০ মেগাহার্টজ ও এক হাজার ৮০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলামে অংশ নেয়।
বাংলালিংক এক হাজার ১১৯ কোটি টাকায় ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ড এবং এক হাজার ৪৩৯ কোটি টাকায় ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের মোট ১০.৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে।
আর গ্রামীণফোন ১ হাজার ২৮৪ কোটি টাকায় কিনেছে ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের ৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাজাহান মাহমুদ বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ফোর জি লাইসেন্স ও তরঙ্গ ব্যবহারের অনুমতিপত্র অপারেটরগুলোর কাছে হস্তান্তর করবেন তারা।
টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের উপস্থিতে তরঙ্গ নিলাম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক নাসিম পারভেজ।
বাংলা লিংকের সিইও এরিক অস ও গ্রামীণ ফোনের সিইও মাইকেল ফলি দুটি আলাদা টেবিলে বসে নিলামে অংশ নেন।
যেভাবে নিলাম
প্রথমে লটারির মাধ্যমে দুটি অকশন টেবিল দুই অপারেটরকে দেওয়া হয় বসার জন্য। তাতে গ্রামীণফোন টেবিল-১ এবং বাংলালিংক টেবিল-২ পায়। প্রতিটি টেবিলের পাঁচটি করে আসনে বসে অপারেটরদের প্রতিনিধিরা দেড় ঘণ্টার এই নিলামে অংশ নেন।
নাসিম পারভেজ শুরুতে নিলামের নিয়মকানুন বলে দেন। তিনি জানান, প্রথম ধাপে দুই হাজার ১০০ মেগাহার্টজ, দ্বিতীয় ধাপে এক হাজার ৮০০ মেগাহার্টজ, তৃতীয় ধাপে ৯০০ (কোনো বিডার ছিল না) এবং শেষ ধাপে অবিক্রিত তরঙ্গ ভিত্তিমূল্যে বিক্রি হবে। নিলাম হবে দিনের মার্কিন ডলারের বিনিময় হার অনুযায়ী।
প্রথম ধাপে দুই হাজার ১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের ডাক শুরু হয় প্রতি মেগাহার্টজের ২৭ মিলিয়ন ডলার ভিত্তিমূল্যে। কিন্তু কেউ তাতে অংশ নেয়নি।
নাসিম পারভেজ বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী, এ ব্যান্ডে কোনো ডাক না থাকায় চতুর্থ পর্বে কেউ চাইলে ভিত্তিমূল্যে এ তরঙ্গ নিতে পারবে।
৯০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের কোনো আগ্রহী ক্রেতা না থাকায় তৃতীয় ফেইজে কোনো নিলাম হয়নি।
এরপরপর চতুর্থ ধাপে দুই হাজার ১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের একমাত্র আবেদনকারী হিসেবে বাংলালিংক ৫ মেগাহার্টজের ব্লক পায়। ফলে তাদের হাতে মোট তরঙ্গ দাঁড়ায় ১০ মেগাহার্টজ।
নাসিম পারভেজ জানান, নীতিমালা অনুযায়ী বাংলালিংক ইচ্ছা করলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে একই মূল্যে ওই তরঙ্গ নিতে পারবে।
এরপর এ ধাপের এক হাজার ৮০০ ব্র্যান্ডের পাঁচ মেগাহার্টজ ব্লকে তরঙ্গ নিলামে প্রথমে ডাক দেওয়ার সুযোগ পায় বাংলালিংক। কিন্তু তারা আগ্রহ প্রকাশ করেনি। পরে গ্রামীণফোনও এ ব্র্যান্ডের তরঙ্গ নেবে না বলে জানিয়ে দেয়। দুই দশমিক ৪ মেগাহার্টজ ব্লকেও এ দুই অপারেটর আগ্রহ দেখায়নি।
নিলাম প্রক্রিয়া শেষে নাসিম পারভেজ জানান, নিলামে মোট ১১টি ব্লকে ৪৬ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলামের জন্য ছিল। এর মধ্যে তিনটি ব্লকে ১৫ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ বিক্রি হয়েছে।
অপারেটরদের কার হাতে কত তরঙ্গ
টু-জির ৯০০ ও ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ড এবং থ্রিজির ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের মিলিয়ে গ্রামীণফোনের হাতে মোট তরঙ্গ ছিল ৩২ মেগাহার্টজ। নিলামের পর তাদের মোট তরঙ্গের পরিমাণ দাঁড়াল ৩৭ মেগাহার্টজ।
এছাড়া বাংলালিংকের হাতে ২০ মেগাহার্টজ ছিল, যা নিলামের পর দাঁড়াল ৩০ দশমিক ৬ মেগাহার্টজে।
রাষ্ট্রায়াত্ত্ব টেলিটকের হাতে রয়েছে ২৫ দশমিক ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। রবি ও এয়ারটেল একীভূত হওয়ার পর রবির তরঙ্গের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৪ মেগাহার্টজে।
মান সম্মত সেবা দিতে দীর্ঘদিন ধরে তরঙ্গ বরাদ্দ ও প্রযুক্তি নিরপেক্ষতার দাবি করে আসছিল অপারেটররা। প্রযুক্তি নিরপেক্ষতা ও তরঙ্গ বরাদ্দ পাওয়ায় অপারেটরদের সেবার মান আরও উন্নত হবে বলে আশা করছে বিটিআরসি।