“সবজি-মশলার এত কম দাম কয়েক বছর দেখিনি।”
Published : 21 Mar 2025, 11:39 PM
গেল সপ্তাহে হঠাৎ বেড়ে যাওয়া চালের বাজারে স্বস্তি ফেরেনি। খুচরা বাজারে কেজিতে শতক ছোয়া ‘মোজাম্মেল মিনিকেটের’ দাম কমলেও অন্যান্য চালের কেজি প্রায় আগের জায়গাতেই আছে।
তবে শাক-সবজি আর মশলার দাম নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।
শুক্রবার রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার ও সাত তলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কিছু সবজির দাম বেড়ে গেছে।
আর রোজার শুরু থেকে চড়ে থাকা বেগুনের দাম মাঝে কমলেও শুক্রবার তা ৯০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে উঠে যায়। ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে রয়ে গেছে দেশি শসার কেজিও।
চড়েই আছে চালের বাজার
গেল সপ্তাহে হঠাৎ বাড়ার পর চালের বাজার প্রায় অপরিবর্তিত আছে। কেবল মোজাম্মেল মিনিকেট কেজিপ্রতি দাম ১০০ টাকা থেকে কমে নেমে এসেছে ৯৪ থেকে ৯৬ টাকায়।
আর বস্তা কিনলে এ চালের দাম কেজিপ্রতি দাম পড়ছে ৯২ থেকে ৯৪ টাকা।
মহাখালী কাঁচাবাজারের ‘মানিক ট্রেডার্সের’ বিক্রেতা মানিক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চালের বাজার কিছুটা চড়া। গেল সপ্তাহে বাড়ার পর আগের জায়গায় দাম ফেরেনি। মোজাম্মেল মিনিকেটের দাম কিছুটা কমেছে।“
তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, রশিদ মিনিকেট (অপেক্ষাকৃত মোটা) চালের দাম এ সপ্তাহেও কেজিপ্রতি ৭৮ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ভারতীয় মিনিকেট চালের দামও গেল সপ্তাহের মতো ৮০ টাকা। আর আঠাশ এবং পাইজামের কেজি গত সপ্তাহের মত ৬০ থেকে ৬২ টাকাতেই আছে।
নাজিরশাইল চালও (মোটা) গত সপ্তাহের মত ৭২ টাকা কেজির নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। আর চিকন নাজিরশাইলের কেজি ৭৬ থেকে ৮০ টাকা।
গেল সপ্তাহে বেড়ে যাওয়া ‘গরিবের’ মোটা চালের দাম কমেনি; ৫৫ টাকাতেই আছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে দাম ছিল ৫২ থেকে ৫৩ টাকা।
মহাখালী কাঁচাবাজারের ‘চাঁদপুর ট্রেডার্সের’ বিক্রেতা আলিফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চালের দাম আগের সপ্তাহের মত। কিছু কিছু চাল বস্তায় কিনলে দাম কম পড়ে।”
চালের বাড়তি দামের এই অভিযোগ নিয়ে জানতে বাংলাদেশ রাইস মিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমজাদ হোসেনকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হয়। তবে সাড়া মেলেনি।
এখনও বাড়তি দামে বোতলের সয়াবিন
রোজা শুরুর দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কিছুটা বাড়ে। তবে নানা অভিযোগ আছে ক্রেতাদের। কোথাও কোথাও সয়াবিনের সঙ্গে কিনতে হচ্ছে বাড়তি পণ্য। কোথাও আবার গায়ের দামের চেয়ে বেশি টাকায় কিনতে হচ্ছে।
সাত তলা বাজারে শুক্রবার একটি দোকানে সয়াবিন তেল কেনা নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার ঝগড়া বেধে যায়।
ক্রেতার নাম আসাদ উল্লাহ। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ফ্রেশ কোম্পানির এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল কিনলাম। গায়ের দাম ১৭৫ টাকা। দোকানদার ২০০ টাকা চাইছে।
“তার নাকি সঙ্গে অন্য মাল কিনতে হয়েছে। এজন্য আমি বাড়তি দেব কেন বলেন?”
তার বক্তব্য ধরে বিক্রেতা সীমা রাণীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “শুধু তেল আসলে বিক্রি করলে হয় না। আমরা ছোট দোকানি। ডিলার মাল দেয় কম। সঙ্গে অন্য স্লো মাল কেনা লাগে।
“গায়ের রেটে বিক্রি করলে লাভ থাকে না বললেই চলে।”
জানতে চাইলে মহাখালী কাঁচাবাজারের ‘মাসুমা জেনারেল স্টোরের’ বিক্রেতা আল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তেলের সঙ্গে চাল বা লবণ এ জাতীয় পণ্য কেনা লাগে এটা সত্যি। তবে, এ জন্য বাড়তি দামে বিক্রি করতে হবে কেন। আমি গায়ের দামেই বিক্রি করি।”
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ ও প্রচার) আফরোজা রহমান বলেন, “ঢাকা মহানগর এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে অধিদপ্তরের ১৩ জন কর্মকর্তার নেতৃত্বে শুক্রবার ১৩টি টিম বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।”
‘সবজি মশলার এত কম দাম কয়েক বছরে দেখিনি’
রাজধানীর সাত তলা এলাকায় বাজার করতে এসেছিলেন বেসরকারি চাকুরে জহির হোসেন। সবজির দাম নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করে এই ক্রেতা বলছিলেন, সবজি আর মশলা জাতীয় পণ্যের দাম কয়েক বছরের মধ্যে রোজায় এত কম দেখেননি।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাঁচ কেজি আলু কিনেছি ১০০ টাকায়। আর পেঁয়াজ কিনলাম আড়াই কেজি ১০০ টাকায়। শেষ কবে এত কম দামে রোজায় এসব পণ্য কিনেছি মনে পড়ছে না। অন্তত কয়েক বছরে তো কিনিনি।”
মহাখালী কাঁচাবাজার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে নতুন করে দেশি শসার দাম বেড়ছে। রোজার প্রথম থেকেই চড়ে থাকা বেগুন আর লেবুর দামও আগের মত বাড়তি। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন কিছু সবজির দাম ১০০ টাকার বেশি হলেও অন্য সব সবজি স্থিতিশীল রয়েছে।
বাজারে আসা গৃহিণী সালমা বেগম বলেন, “সবজির দামটা অনেক দিন ধরেই নাগালের মধ্যে আছে। এবারের রোজায় অল্প কিছু পণ্য ছাড়া অধিকাংশ পণ্যের দামও তুলনামূলক কম।”
বাজারে গেল সপ্তাহে ৬০ টাকা কেজিতে শসা বিক্রি হলেও দেশি শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, একেকটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লাউ আকৃতিভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, পাকা টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং মুলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা ও ধুন্দুল ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এক কেজি চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর মুখী ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, সজনে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং কাঁচামরিচের কেজি মিলছে ৭০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে।
বাজারে লেবুর হালি ৬০ টাকা। ধনে পাতার কেজি ১৪০ টাকা। কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
এছাড়া লাল শাক ১০ টাকা, মূলা শাক ১০ থেকে ১৫, পালং শাক ১০, কলমি শাক তিন আঁটি ২৫ টাকা, পুঁই শাক ৫০ টাকা এবং ডাঁটাশাকের আটি ১০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মহাখালী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. হাফেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবজির দাম অনেক দিন ধরেই একই জায়গায় আছে। এখন শুধু শসার দাম বেড়েছে। বেগুনসহ কিছু সবজির দামও বাড়তি। বাকি সব সবজি নাগালের মধ্যেই আছে।”
বাজারে নতুন আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বগুড়ার লাল আলুর কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
মশলা পণ্যের মধ্যে দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা, আদা ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি রসুন দেশি ১০০ থেকে ১১০ টাকা, ভারতীয় রসুন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, ভারতীয় মশুর ডাল ১১০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১০৫ থেকে ১১০ টাকা এবং খেসারির ডাল ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।