ফারদিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করেন বুশরার চাচা; তিনি চান, সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করা হোক।
Published : 10 Nov 2022, 10:43 PM
বুয়েটছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যাকাণ্ডে আমাতুল্লাহ বুশরার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন তার চাচা মাজহারুল ইসলাম।
এই বুয়েটছাত্রের বাবার মামলার আসামি হিসেবে বুশরাকে পুলিশ রিমান্ডে নেওয়ার পর মাজহার এই দাবি করেন।
তিনি বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বুশরা কোনোভাবেই জড়িত থাকতে পারে না। সে সাধারণ, সহজ-সরল।”
তবে ফারদিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করেন বুশরার চাচা; তিনি চান, সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করা হোক।
ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মাজহার রাজধানীর ভাটারায় থাকেন। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জে। বুশরার মা-বাবা সেখানেই থাকেন।
বুশরা আফতাব নগরের বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি বিভাগে পড়তেন, থাকতেন বনশ্রীতে সহপাঠিদের সঙ্গে একটি বাসা ভাড়া করে। তবে প্রায়ই তিনি চাচার বাসায় এসে থাকতেন।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফারদিন থাকতেন ডেমরার কোনাপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে।
গত ৪ নভেম্বর দুপুরে বাসা থেকে বেরিয়ে বুশরার সঙ্গেই সন্ধ্যার পর পর্যন্ত ফারদিন ছিলেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। বিকাল থেকে ধানমণ্ডি, নীলক্ষেত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোরাঘুরির পর রামপুরায় এসে রিকশা থেকে নেমে যান ফারদিন।
এরপর মধ্যরাত থেকে ফারদিন নিখোঁজ, তার ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। পরিবার জানত ফারদিন সেই রাতে বুয়েটের হলে থাকবেন। কিন্তু পরদিন পরীক্ষায় ফারদিন অনুপস্থিত থাকায় পরিবারকে জানায় তার বন্ধুরা।
নিখোঁজ বুয়েট ছাত্রের মরদেহ মিলল শীতলক্ষ্যায়
বুয়েট ছাত্র ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে: ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক
বুয়েটছাত্র ফারদিনের লাশ উদ্ধারের পর অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না
ফারদিন হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব পেল ডিবি
এরপর ৫ নভেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা। ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে শীতলক্ষ্যা পাড়ে এই তরুণের লাশ পাওয়া যায়। ময়নাতদন্ত করে চিকিৎসক বলেন, ফারদিনের গায়ে নির্যাতনের আলামত পাওয়ায় এটাকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখছেন তারা।
লাশ উদ্ধারের সময় ফারদিনের মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, হাতঘড়ি তার সঙ্গেই ছিল। ফলে তাকে হত্যার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিল না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার ফারদিনের বাবা রামপুরা থানায় মামলা করেন, তাতে আসামি করা হয় বুশরাকে। পরে এই তরুণীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে নিয়ে যায়, পায় হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি।
কী কারণে বুশরা আসামি, তা মামলার এজাহারে স্পষ্ট হয়নি। ফারদিন কীভাবে কোথায় কেন খুন হলেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য এখনও পুলিশ দিতে পারেনি।
কয়েক বছরের ছোট বুশরার সঙ্গে ২৪ বছর বয়সী ফারদিনের ফেইসবুকে পরিচয় বলে এই তরুণের পরিবারের ভাষ্য।
বুশরার চাচা মাজহার বলেন, “ছোট বেলা থেকে ডিবেটের কারণে ফারদিনের সাথে তার পরিচয়। পরবর্তীতে ফেইসবুকে তাদের মধ্যে যোগাযোগ।”
ফারদিন বুয়েটের ডিবেটিং ক্লাবের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। আগামী ডিসেম্বরে স্পেনে একটি বিতর্ক অনুষ্ঠানে তার যাওয়ার কথা ছিল।
ফারদিন হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে বুশরার চাচা বলেন, “হত্যাকাণ্ডটি যে করেছে, পরিকল্পিতভাবেই করেছে। নিশ্চয়ই একদিন প্রকৃত হত্যাকারীরা শনাক্ত হবে।”
ফারদিন হত্যামামলার তদন্তভার ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)। ফলে তাকে ডিবি এখন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
মাজহার বলেন, ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার পরও বুশরাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।