বুয়েটছাত্র ফারদিন নূর পরশ শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে চনপাড়ায় মাদক কারবারিদের হাতে নিহত হয়েছিলেন বলে র্যাবের সূত্রের বরাতে সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছিল। এই তরুণ আত্মহত্যা করেছেন বলে এখন জানানোর পর চনপাড়ার প্রসঙ্গ আসার ব্যাখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি।
শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের লাশ উদ্ধারের ৪০ দিন পর বুধবার আলাদাভাবে র্যাব এবং ডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, ডেমরায় সুলতানা কামাল সেতুর উপর থেকে এই তরুণ নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।
এই সেতুর কাছেই নদীর পাড়ে চনপাড়া এলাকাটি। এটি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও তার অবস্থান শীতলক্ষ্যা নদীর ডেমরার পাড়ে সুলতানা কামাল সেতুর উত্তর পাশে। এটি নদীর মাঝে উপদ্বীপের মতো একটি এলাকা। ডেমরা থেকে সেখানে যাওয়ার পথ আছে, একটি সেতু দিয়ে সেখানে যেতে হয়।
ফারদিনের লাশ উদ্ধারের পর র্যাবের এক অভিযান ঘিরে আলোচনায় চলে আসে চনপাড়া। গত ১১ নভেম্বর র্যাবের কথিত এক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন চনপাড়ার মাদক কারবারের হোতা হিসেবে চিহ্নিত শাহীন মিয়া ওরফে সিটি শাহীন।
এই খুনের সঙ্গে ফারদিন খুনের কোনো যোগসূত্র না থাকার কথা র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হলেও এই বাহিনীর নানা সূত্র উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবরে আসে, ৪ নভেম্বর রাত আনুমানিক ২টা ৩৫ মিনিটে ফারদিনের অবস্থান ছিল চনপাড়া বস্তি এলাকায়।
মাদকের আখড়ায় ফারদিনের যাওয়ার সে কথায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন তার বাবা ও বুয়েটে তার সহপাঠিরা।
বুধবার ফারদিনের মৃত্যুর তদন্ত নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এলে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈনকে চনপাড়ার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, “আমরা ফারদিনের মোবাইলের সর্বশেষ অবস্থান রাত ২টা ৩৫ মিনিটে চনপাড়ার টাওয়ার এলাকায় পাই। ওই এলাকাতে ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে মাদক কারবারিরা অনেককে নির্জন স্থানে একা পেয়ে ধরে নিয়ে এসে তাদের মালামাল নিয়ে গেছে বা তাদের আটকে রেখে পরিবারের কাছে অর্থ নিয়েছে।
“ওই এলাকাকেন্দ্রিক কাজ করতে গিয়ে চায়ের দোকানদার এক নারীসহ অনেকেই র্যাবের গোয়েন্দাদের জানায়, মারধর করা এই এলাকার নিয়মিত ঘটনা। ৪ নভেম্বরের আশপাশের ডেটে এরকম ঘটনা ঘটেছে… তবে তারা সুনিশ্চিতভাবে ডেট বলতে পারছেন না। এলাকার লোকজনের বক্তব্য অনুযায়ী নভেম্বরের ৩ কি ৫ তারিখে এরকম ঘটনা ঘটেছিল। এ কারণে এ বিষয়টিকে আমলে নিয়ে আমরা কাজ করেছি।”
সংবাদ সম্মেলনে বড় পর্দার ভিডিওতে শীতলক্ষ্যা নদীর মাঝখানের ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, “নদীর মাঝখানটাতে আমরাও চনপাড়ার টাওয়ার পাই। এটা তদন্তের একটা নতুন এলিমেন্ট ছিল।
“তাই বলে এটা নয় যে আমরা অন্য কোনো জায়গায় যাইনি। আমরা সব জায়গায় গোয়েন্দা কার্যক্রম চালিয়েছি।”
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, “আমরা কখনোই কোনো নির্দোষ লোককে ঘটনার সঙ্গে জড়িত করি না। এক্ষেত্রেও কাউকে জড়িত করে আমরা কিছু বলিনি। আমরা তদন্ত চালিয়েছি, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি।”
গত ৪ নভেম্বর রাত থেকে নিখোঁজ ফারদিনের লাশ তিন দিন পর ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে পাওয়া যায়। ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার পর জিডি করেছিলেন তার বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা। লাশ উদ্ধারের পর তিনি হত্যা মামলা করেন, যাতে ফারদিনের বান্ধবী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমাতুল্লাহ বুশরাকে আসামি করা হয়।