তিন মাস আগে ঢাকার আদালত চত্বরে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত যে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, ধরা না গেলেও তারা বর্তমানে দেশেই আছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন।
তিনি বলেছেন, “আমাদের তথ্য মতে, এখনও তারা দেশে আছে। র্যাব তো টেকনোলজি বেইজড কাজ করে, এসমস্ত লোকজন তো আরও অনেক চতুর হয়ে গেছে। তারা টেকনোলজি হাতের কাছেই রাখে না। এখন আমাদের ম্যানুয়ালি কাজ করতে হচ্ছে। যখন যেভাবে প্রয়োজন, আমরা সেভাবেই কাজ করে যাব।”
একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সোমবার বিকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি।
গত ২০ নভেম্বর ঢাকার আদালত চত্বর থেকে আনসার আল ইসলাম সদস্য মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নেয় তাদের কয়েক সহযোগী।
প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যামামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত এ দুজনকে কারাগার থেকে সেদিন মোহাম্মদপুর থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এক মামলার শুনানিতে আদালতে হাজির করা হয়েছিল।
মইনুল ও সোহেলকে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা পুলিশের উপর হামলা করে ও পেপার স্প্রে ছুড়ে দুজনকে ছাড়িয়ে নিয়ে মোটর সাইকেলে পালিয়ে যায়।
খুরশীদ হোসেন বলেন, “আদালত থেকে দুজন জঙ্গি পালিয়েছে, এটা শুধু পুলিশের ব্যর্থতা নয়, আমরা যারা আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে রয়েছি, এটা সকলেরই ব্যর্থতা। কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। যদি তারা দেশে থেকে থাকে, আজ হোক- কাল হোক, তারা ধরা পড়বেই।”
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে জঙ্গি হামলার কোনো আশঙ্কা নেই বলে মনে করেন র্যাব মহাপরিচালক। তিনি বলেন, “জঙ্গি হামলার কোনো হুমকি নেই। তবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সর্বোচ্চ নজরদারি থাকবে।
“শহীদ মিনারের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে র্যাবের বম ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ সুইপিং দল রাখা হয়েছে। পাশাপাশি যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাবের স্পেশাল ফোর্স ও হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। শহীদ মিনারমুখী রাস্তার মোড়সমূহে চেক পোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
শহীদ মিনারে আসা নারীরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান তিনি।
কোভিড মহামারীতে দুই বছর ছেদ পড়ার পর এবার ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনে শহীদ মিনারে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
র্যাব প্রধান খুরশীদ বলেন, “গত দুই বছর করোনার কারণে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি উপস্থিত থাকতে না পারলেও এ বছর সশরীরে শহীদ মিনারে উপস্থিত থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সেখানে শহীদ মিনারসহ তার আশপাশে অধিকতর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
“আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে ২০ ফেব্রুয়ারি দুপুর থেকে যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিরোধ কল্পে ঢাকাসহ সারাদেশে পর্যাপ্ত র্যাব সদস্য নিয়োজিত রয়েছে। অগ্রিম পদক্ষেপ হিসেবে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অদ্যাবধি র্যাবের সাদা পোশাকে সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। টহলের মাধ্যমে শহীদ মিনার এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।”