ফারদিন ‘আত্মহত্যা করেছেন’ বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ, তাতে আপত্তি জানিয়ে আদালতে নারাজি আবেদন করেন মামলার বাদী।
Published : 16 Apr 2023, 11:27 AM
বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর ঘটনায় রামপুরা থানার মামলায় অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ মামলায় গোয়েন্দা পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে আপত্তি জানিয়ে ফারদিনের বাবা কাজী নুরউদ্দিন রানার ‘নারাজি’ আবেদন গ্রহণ করে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. শান্ত ইসলাম মল্লিক রোববার এ আদেশ দেন।
এ মামলায় অধিকতর তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) আগামী ২৪ মে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
ফারদিন হত্যা মামলায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার।
সেখানে বলা হয়, নানা কারণে হতাশা থেকে ফারদিন আত্মহত্যা করেন। তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশও করা হয় সেখানে।
তবে ফারদিনের বাবা কাজী নুরউদ্দিন রানার ধারণা, তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। সেজন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে আদালতে আপত্তি জানানোর কথা তিনি শুরু থেকেই বলে আসছিলেন।
বুশরার অব্যাহতি চেয়ে ডিবির দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য ছিল গত ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেদিন চূড়ান্ত প্রতিবেদন নিয়ে নারাজি দেওয়ার কথা জানিয়ে সময় চায় বাদীপক্ষ। সেই আবেদনে বিচারক ১৬ মার্চ মামলার পরবর্তী তারিখ রাখেন।
বুয়েটের পুরকৌশলের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফারদিন (২৪) বিতার্কিক ছিলেন। গত বছরের ডিসেম্বরে স্পেনের এক অনুষ্ঠানে তার যাওয়ার কথা ছিল।
তার এক মাস আগে গত বছরের ৪ নভেম্বর দুপুরে ঢাকার ডেমরার কোনাপাড়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন ফারদিন। বাবা-মার বড় ছেলে ফারদিন কোনাপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
ফারদিন বেরিয়ে যাওয়ার সময় মাকে বলে গিয়েছিলেন, পরদিন তার পরীক্ষা রয়েছে বলে রাতে বুয়েটের হলেই থাকবেন। পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরবেন।
কিন্তু পরদিন পরীক্ষায় তার অনুপস্থিত থাকার খবর জেনে খোঁজাখুজি করেও ছেলেকে না পেয়ে থানায় জিডি করেন নূরউদ্দিন রানা। তিন দিন পর ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে ফারদিনের লাশ পাওয়া যায়।
এরপর ১০ নভেম্বর নূরউদ্দিন রানা হত্যা মামলা করেন। তাতে আসামি করেন বুশরাকে, যার সঙ্গে ফারদিন দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত ছিলেন। তখন পুলিশ বুশাকে গ্রেপ্তার করে, হেফাজতে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করে।
ফারদিন ‘আত্মহত্যা’ করেছেন জানিয়ে পুলিশ এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলে বুশরাকে জামিন দেয় আদালত।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, “স্পেনে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় যাওয়ার বিমান ভাড়া সংগ্রহ করতে না পারা, ছোট দুই ভাইকে টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ জোগানোয় সংগ্রাম করতে হওয়াসহ নানা কারণে হতাশা থেকে ফারদিন আত্মহত্যা করেন।”
মামলার বাদী কাজী নুরউদ্দিন রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে বলেছে বলে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তা কোনোভাবে বিশ্বাসযোগ্য নয়, গ্রহণযোগ্য নয়, ভিত্তিহীন। সেই প্রেক্ষিতে আমি আজ নারাজি দিয়েছি। আমার ছেলের সামাজিক, পারিবারিক এবং অর্থনৈতিক কোনোভাবেই কোনো রকম অসঙ্গতি ছিল না, প্রচ্ছন্ন একটা জীবনযাত্রা ছিল তার। সেক্ষেত্রে আত্মহত্যা করার কথা না।
“এ তদন্তে যা করেনি, সেটা হচ্ছে যে, সে বাসা থেকে বের হওয়ার পর যেসব এলাকায় বিরচণ করেছে, সেসব এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজগুলো যদি নিয়ে আসা হত, বিশেষ করে রাত ১০টার পর সে কীভাবে ছিল, তাহলে দেখা যেত তাকে অপরহণকারীরা তুলে নিয়ে গেছে এবং যাত্রাবাড়ীতে ছেড়ে দিয়েছে। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা তাকে যাত্রাবাড়ী থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে। সুতরাং পূর্ণাঙ্গ সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সামনে আনা ছাড়া হত্যার রহস্য বের করা সম্ভব না।”
মামলার বাদী বলেন, “আশা করি সিআইডি এই জায়গাটিতে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকবে।”
এদিন বুশরার পক্ষ থেকে স্থায়ী জামিনের আবেদন করা হলে আদালত তার জামিন স্থায়ী করেন।
পুরনো খবর
ফারদিন হত্যা মামলা: ‘নারাজি’ দিতে সময়ের আবেদন বাবার
আত্মহত্যা করেন ফারদিন- উল্লেখ করে হত্যা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা
সেই রাতে ৪ স্থানে ঘোরেন ফারদিন, যাত্রাবাড়ী থেকে ওঠেন লেগুনায়: ডিবি
ফারদিন খুন হননি, আত্মহত্যা: ডিবি-র্যাব
ফারদিনের ‘আত্মহত্যা’: র্যাব পুলিশ ভালোভাবে বুঝেই বলেছে, বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী