ফারদিন খুন হননি, আত্মহত্যা: ডিবি-র‌্যাব

এই বুয়েটছাত্র হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেন বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2022, 04:10 PM
Updated : 14 Dec 2022, 04:10 PM

বুয়েটছাত্র ফারদিন নূর পরশের লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তে হত্যার আলামত পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন চিকিৎসক; তারপর তদন্ত নিয়ে পরিবার ও সহপাঠিদের হতাশার মধ্যে ৪০ দিন পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, এই তরুণ আত্মহত্যা করেছিলেন।

এই তরুণের মৃত্যুর ঘটনাটির তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে, পাশাপাশি ছায়া তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিল র‌্যাব। এর আগে দুই সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যে বিভ্রান্তি ছড়ালেও একই উপসংহারে পৌঁছেছে র‌্যাব ও ডিবি।

দুই পক্ষই বলেছে, নিখোঁজ হওয়ার দিন ভোররাতে ডেমরার সুলতানা কামাল সেতু থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ফারদিন।

গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, পরীক্ষার ফল খারাপ হওয়া এবং বিদেশ যেতে অর্থ জোগাড় করতে না পারার হতাশা থেকে এই তরুণ আত্মহননের পথ বেছে নেন।

ফারদিনের মৃত্যুর তদন্তে নেমে চনপাড়ার মাদকের আখড়ার প্রসঙ্গটি র‌্যাবের মাধ্যমে এলেও এখন সংস্থাটি বলছে, ফারদিনের মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক একবার চনপাড়া টাওয়ারের অধীনে পাওয়ায় এই বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছিল।

লাশ উদ্ধারের পর মাস গড়িয়ে গেলেও হত্যামামলার তদন্তে অগ্রগতি না দেখে এবং র‌্যাব-ডিবির বিপরীত বক্তব্য শুনে ফারদিনের পরিবার ও তার সহপাঠিদের অসন্তোষের মধ্যে বুধবার প্রথমে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ তাদের তদন্তে পাওয়া তথ্য সাংবাদিকদের জানান।

ফারদিনের মৃত্যুর তদন্তে ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য’ পাওয়া গেছে জানিয়ে র‌্যাব বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সংবাদ সম্মেলন ডাকার আগে তদন্তে নিজেদের পাওয়া তথ্য তুলে ধরেন ডিবির কর্মকর্তা হারুন।

তিনি বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপাত দৃষ্টিতে আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটি একটি আত্মহত্যা। আমি ডাক্তারের (ময়নাতদন্তকারী) সঙ্গে কথা বলেছি, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট দেখেছি, সার্বিক দিক দেখে মনে হয়েছে, এটি আত্মহত্যার ঘটনা।”

কী কারণে এই বুয়েটছাত্র আত্মহত্যা করতে পারেন, সে বিষয়ে ফোনে কিছু না জানিয়ে বিস্তারিত শুনতে তার কার্যালয়ে যেতে বলেন।

পরে নিজের কার্যালয়ে হারুন সাংবাদিকদের বলেন, “তার (ফারদিন) স্পেন যাওয়ার কথা ছিল, টাকা ম্যানেজ হয়নি। তার পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছিল। সবকিছু মিলেই মনে হয়েছে, সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল।”

“সে সাঁতার জানত না, সবকিছু মিলে আমরা মনে করছি এটি আত্মহত্যা,” বলেন তিনি।

ঘণ্টাখানেক পরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ, ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টসহ অন্যান্য সকল সংশ্লিষ্ট আলামত বিবেচনায় নিয়ে আমাদের তদন্তে বের হয়ে আসে যে, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন স্বেচ্ছায় সুলতানা কামাল ব্রিজ হতে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করে।”

Also Read: বুয়েটছাত্র ফারদিনের লাশ উদ্ধারের পর অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না

Also Read: বুয়েট ছাত্র ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে: ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক

Also Read: ফারদিন হত্যা: বুশরা রিমান্ডে

Also Read: ফারদিন খুন: বুশরা নিরাপরাধ, বলছেন চাচা

বুয়েটের পুরকৌশলের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফারদিন (২৪) বিতার্কিক ছিলেন। এই বছরই স্পেনের এক অনুষ্ঠানে তার যাওয়ার কথা ছিল। বাবা-মার বড় ছেলে ফারদিন থাকতেন ঢাকার ডেমরার কোনাপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে।

গত ৪ নভেম্বর দুপুরে কোনাপাড়ার বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন ফারদিন; বলে গিয়েছিলেন, পরদিন তার পরীক্ষা রয়েছে বলে রাতে বুয়েটের হলেই থাকবেন। পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরবেন।

কিন্তু পরদিন পরীক্ষায় তার অনুপস্থিত থাকার খবর জেনে খোঁজাখুজি করেও ছেলেকে না পেয়ে থানায় জিডি করেন ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা। তিন দিন পর ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে লাশ পাওয়া যায়।

ফারদিনের লাশ পাওয়া যায় গোদনাইলে বর্ণালী টেক্সটাইল মিলের ঘাট এলাকায়। উদ্ধারের সময় তার হাতে ঘড়ি পরা ছিল; জামা-প্যান্ট ছিল প্রায় অক্ষত। তার মানিব্যাগও সঙ্গে ছিল বলে পুলিশ জানায়।

তবে নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসক শেখ ফরহাদ সাংবাদিকদের বলেন, নিখোঁজ হওয়ার দিনই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন ফারদিন। তার মাথা ও বুকে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে৷ মৃত্যুর আগে শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ওই ছাত্র৷

এরপর এই বুয়েটছাত্রের মৃত্যু নিয়ে তুমুল আলোচনা র মধ্যে ফারদিনের বাবা রামপুরা থানায় হত্যামামলা করলে তার তদন্তভার দেওয়া হয় ডিবিকে।

এরপর ফারদিনের বান্ধবী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমাতুল্লাহ বুশরাকে ডিবি গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন।

যেদিন ফারদিন নিখোঁজ হয়েছিলেন, সেদিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর বুশরার সঙ্গে ছিলেন তিনি। রাতে বুশরাকে রামপুরায় পৌঁছে দেওয়ার পর তাকে আর পরিচিতজনরা দেখেনি।

মামলার তদন্তে নেমে ডিবি ফারদিনের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে ওই সময়ের পর ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের উল্টো দিকে কেরানীগঞ্জে, সদরঘাটে, গুলিস্তানে এবং সর্বশেষ যাত্রাবাড়ীতে তার অবস্থান শনাক্ত করে।

Also Read: সেই রাতে ৪ স্থানে ঘোরেন ফারদিন, যাত্রাবাড়ী থেকে ওঠেন লেগুনায়: ডিবি

Also Read: ফারদিন যাত্রাবাড়ী গেলেন, লেগুনায় উঠলেন, তারপর? তদন্ত গতিহারা

Also Read: ফারদিন ডেমরা সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন: ডিবি

Also Read: র‌্যাবও বলল, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন

গত ১৭ নভেম্বর ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেছিলেন, একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে ফারদিনকে রাত ২টায় যাত্রাবাড়ী থেকে রূপগঞ্জের তারাবগামী একটি লেগুনায় উঠতে দেখা গিয়েছিল।

তিনি বুধবার বলেন, “বুশরাকে নামিয়ে দিয়ে রাত ৯টার পরে কেরানীগঞ্জের একটি ব্রিজের কাছে গিয়েছিল, এরপর সেখান থেকে জনসন রোডে যায় এরপর গুলিস্তান হয়ে যাত্রাবাড়ীতে যায়। রাত ২টা ৭ মিনিটে লেগুনাতে উঠে। পরে ২টা ৩৪ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজে যায়।

“যে সমস্ত জায়গায় ঘোরাঘুরি করছে, এগুলো পর্যালোচনা করে আমরা দেখেছি সে একাই ছিল, তার সাথে কেউ ছিল না। এছাড়া সে যার যার সাথে কথা বলেছে, তাদের সাথে আমরা কথা বলেছি।”

ডেমরার সুলতানা কামাল সেতুর উপর থেকে ফারদিন সেই রাতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন বলার পক্ষে প্রমাণ মেলার কথা বলেন ডিবি কর্মকর্তা হারুন।

“২টা ৩৪ এর দিকে আমরা দেখেছি, সেখান থেকে একটা শব্দ পানিতে পড়েছে এবং ওই সময়ই আমরা যে মোবাইল পর্যালোচনা করেছি, তাতে ওই সময়ে তার সেখানেই থাকার কথা।”

ওই রাতে সেই শব্দ কীভাবে শনাক্ত করেছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি ডিবির এই কর্মকর্তা।

“আমরা তার মানসিক অবস্থা, তার বিভিন্ন জায়গায় চলাচল এবং ব্রিজের কাছে গিয়ে আমরা যে সেলটা দেখলাম, সেখানে ব্রিজের মাঝামাঝি জায়গায় সে ছিল সর্বশেষ এবং সেখান থেকে আমরা আবছাভাবে যে পানির মধ্যে একটা শব্দ হয়েছে, সেটা আমরা ব্রিজ থেকেও পেয়েছি। এই সবকিছু মিলিয়ে আমার কাছে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়েছে, এইটা একটা সুইসাইডাল ঘটনা।”

র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৪ নভেম্বর বিকাল ৩টায় কোনাপাড়ার বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন ফারদিন। বিকাল আনুমানিক ৫টার দিকে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে বুশরার সঙ্গে মিলিত হন তিনি। তারপর সেখান থেকে নীলক্ষেত ও ধানমণ্ডিসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে। সাত মসজিদ রোডে একটি রেস্তোরাঁয় খাবার খেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান।

রাত ৮টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে রিকশায় ফারদিন ও বুশরা রামপুরার দিক যান ফারদিন ও বুশরা। বুশরা বনশ্রীতে থাকেন।

রাত পৌনে ১০টার দিকে রামপুরা সেতুর কাছে রিকশা থেকে নেমে যান ফারদিন। এরপর কিছুক্ষণ রামপুরা সেতু এলাকায় একাকী ঘোরাফেরা করছিলেন বলে র‌্যাব জানতে পেরেছে।

মামলার তদন্তে নেমে ডিবি ফারদিনের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে রামপুরার পর ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের উল্টো দিকে কেরানীগঞ্জে, সদরঘাটে, গুলিস্তানে এবং সর্বশেষ যাত্রাবাড়ীতে তার অবস্থান শনাক্ত করে।

গত ১৭ নভেম্বর ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেছিলেন, একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে ফারদিনকে রাত ২টায় যাত্রাবাড়ী থেকে রূপগঞ্জের তারাবগামী একটি লেগুনায় উঠতে দেখা গিয়েছিল।

কমান্ডার আল মঈন বলেন, “প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, পরবর্তীতে (রামপুরার পর) ফারদিন কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, বাবুবাজার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা, পুরান ঢাকার জনসন রোড, গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট এলাকায় যান।

“সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা যায় যে রাত ২ টা ১ মিনিটে যাত্রাবাড়ীর বিবির বাগিচা হতে নিহত ফারদিনকে লেগুনায় উঠতে দেখা যায়। রাত ২টা ২০ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের অপর পাশে তারাব বিশ্বরোডের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লেগুনা থেকে নেমে যায় ফারদিন।”

রাত ২ টা ২৬ মিনিটে সুলতানা কামাল সেতুর (ডেমরা সেতু)  তারাব প্রান্তে ফারদিনের অবস্থান শনাক্ত করে র‌্যাব। রাত ২ টা ৩৪ মিনিটে সেতুর মাঝ বরাবর তার অবস্থান পাওয়া যায়।

আল মঈন বলেন, “ব্রিজের তারাব প্রান্ত হতে মাঝখান পর্যন্ত দূরত্ব আনুমানিক ৪০০ থেকে ৫০০ মিটার।

“রাত ২টা ৩৪ মিনিট ৯ সেকেন্ডে সুলতানা কামাল ব্রিজের রেলিং ক্রস করে ফারদিন এবং রাত ২টা ৩৪ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে ব্রিজের উপর থেকে স্বেচ্ছায় নদীতে ঝাঁপ দেয়।”

“ঝাঁপ দেওয়ার পর রাত ২টা ৩৪ মিনিট ২১ সেকেন্ডে শীতলক্ষ্যা নদীর পানিতে পড়ে ফারদিন আর রাত ২টা ৩৫ মিনিট ৯ সেকেন্ডে ফারদিনের মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। রাত ২টা ৫১ মিনিটে ফারদিনের হাতের ঘড়িতে পানি ঢুকে অকার্যকর হয়ে পড়ে,” বলেন তিনি।

ফারদিন তবে আত্মহত্যাই করেছিলেন-এই প্রশ্নে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, “আমরা বলছি, তিনি ডেমরার সুলতানা কামাল সেতু থেকে স্বেচ্ছায় ঝাঁপ দিয়েছেন। আত্মহত্যা করেছেন এমন বলছি না। নদীতে ঝাঁপ দেওয়াটা অ্যাডভেঞ্চারাস কি না, এর পেছনে অন্য মোটিভ থাকতে পারে কি না, এর পুরো এভিডেন্স আমরা তদন্তকারী সংস্থাকে (ডিবিকে) দিয়েছি।”

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের বক্তব্যে হত্যার আলামতের কথা বলা হলেও ফারদিনের দেহে তেমন কোনো আঘাত ছিল না বলে বুধবার সাংবাদিকদের জানান ডিবি কর্মকর্তা হারুন।

তিনি বলেন, “তার লাশের সুরতহাল রিপোর্টে আঘাতের কোনো চিহ্ন নাই। যদি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হত, আঘাতের চিহ্ন থাকত। মারপিট করা হলে, তার চিহ্ন থাকত, সেটা আমরা পাইনি।

“দ্বিতীয়ত উনাকে যদি কেউ মৃত্যু সংগঠিত করে থাকে, তাহলে তার মধ্যে কিছু আলামত থাকবে। সে আলামতটা কীসের, কাপড়ে শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন থাকবে। ভিক্টিমের শার্ট, বোতাম যেগুলো আছে সবই একই রকম ছিল।”

র‌্যাব ও ডিবির বক্তব্য অনুযায়ী, ফারদিন ওই রাতে সুলতানা কামাল সেতু থেকে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করার পর তার লাশ ভেসে গিয়েছিল নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে।

নিজের আয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগানো ফারদিনের মধ্যে কখনও কোনো বিষয়ে হতাশা না দেখার কথা বলেছিলেন তার বাবা নূরউদ্দিন রানা।

ফারদিনের মধ্যে সেদিন কোনো অস্বাভাবিকতা না দেখার কথা বুশরাও বলেছিলেন পুলিশকে।

তাকে উদ্ধৃত করে ডিবি কর্মকর্তা হারুন এর আগে বলেছিলেন, “বুশরার বক্তব্য হচ্ছে, তারা যতক্ষণ একসঙ্গে ছিলেন, ততক্ষণ ফারদিন স্বাভাবিকই ছিলেন। তারা রেস্তোঁরায় খেয়ে নিজ নিজ বিল দিয়েছেন। তাকে রামপুরা নামিয়ে দিয়ে ফারদিন চলে যায়।”

‘যাননি চনপাড়ায়’

ফারদিন সেই রাতে লেগুনা থেকে ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টারে নেমে চনপাড়া বস্তিতে গিয়েছিলেন এবং সেখানে মাদক কারবারিরা তাকে খুন করেছিল বলে র‌্যাবের সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছিল। 

তবে হারুন আগের মতো বুধবারও বলেন, ফারদিন চনপাড়া যাননি এবয়ং মাদকের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততাও পাওয়া যায়নি।

“চনপাড়ায় কোনো অবস্থাতেই যায়নি,” বলেন তিনি।

ফারদিনের মৃত্যুর পর র‌্যাবের এক অভিযান ঘিরে আলোচনায় চলে আসে শীতলক্ষ্যা নদীর ডেমরা পাড়ের বসতি রূপগঞ্জের চনপাড়া।

গত ১১ নভেম্বর চনপাড়ায় র‌্যাবের কথিত এক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন চনপাড়ার মাদক কারবারের হোতা হিসেবে চিহ্নিত শাহীন মিয়া ওরফে সিটি শাহীন।

এই খুনের সঙ্গে ফারদিন খুনের কোনো যোগসূত্র না থাকার কথা র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হলেও এই বাহিনীর নানা সূত্র উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবরে আসে, ৪ নভেম্বর রাত আনুমানিক ২টা ৩৫ মিনিটে ফারদিনের অবস্থান ছিল চনপাড়া বস্তি এলাকায়।

মাদকের আখড়ায় ফারদিনের যাওয়ার সে কথায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান তার বাবা ও বুয়েটে তার সহপাঠিরা।

বুধবার সংবাদ সম্মেলনে চনপাড়ার প্রসঙ্গ আসার ব্যাখ্যা দেন র‌্যাবের মুখপাত্র আল মঈন।

যে সেতুর উপর থেকে ফারদিন লাফিয়ে পড়েন বলে দাবি করা হচ্ছে, সেই সেতুর কাছেই নদীর পাড়ে চনপাড়া এলাকাটি। এটি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও তার অবস্থান শীতলক্ষ্যা নদীর ডেমরার পাড়ে সুলতানা কামাল সেতুর উত্তর পাশে। এটি নদীর মাঝে উপদ্বীপের মতো একটি এলাকা। ডেমরা থেকে সেখানে যাওয়ার পথ আছে, একটি সেতু দিয়ে সেখানে যেতে হয়।

Also Read: ফারদিন হত্যা: চনপাড়ার মাদক কারবারিদের খোঁজে পুলিশ

চনপাড়ার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আল মঈন বলেন, “আমরা ফারদিনের মোবাইলের সর্বশেষ অবস্থান রাত ২টা ৩৫ মিনিটে চনপাড়ার টাওয়ার এলাকায় পাই। ওই এলাকাতে ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে মাদক কারবারিরা অনেককে নির্জন স্থানে একা পেয়ে ধরে নিয়ে এসে তাদের মালামাল নিয়ে গেছে বা তাদের আটকে রেখে পরিবারের কাছে অর্থ নিয়েছে।

“ওই এলাকাকেন্দ্রিক কাজ করতে গিয়ে চায়ের দোকানদার এক নারীসহ অনেকেই র‌্যাবের গোয়েন্দাদের জানায়, মারধর করা এই এলাকার নিয়মিত ঘটনা। ৪ নভেম্বরের আশপাশের ডেটে এরকম ঘটনা ঘটেছে… তবে তারা সুনিশ্চিতভাবে ডেট বলতে পারছেন না। এলাকার লোকজনের বক্তব্য অনুযায়ী নভেম্বরের ৩ কি ৫ তারিখে এরকম ঘটনা ঘটেছিল। এ কারণে এ বিষয়টিকে আমলে নিয়ে আমরা কাজ করেছি।”

সংবাদ সম্মেলনে বড় পর্দার ভিডিওতে শীতলক্ষ্যা নদীর মাঝখানের ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, “নদীর মাঝখানটাতে আমরাও চনপাড়ার টাওয়ার পাই। এটা তদন্তের একটা নতুন এলিমেন্ট ছিল।

“তাই বলে এটা নয় যে আমরা অন্য কোনো জায়গায় যাইনি। আমরা সব জায়গায় গোয়েন্দা কার্যক্রম চালিয়েছি।”

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, “আমরা কখনোই কোনো নির্দোষ লোককে ঘটনার সঙ্গে জড়িত করি না। এক্ষেত্রেও কাউকে জড়িত করে আমরা কিছু বলিনি। আমরা তদন্ত চালিয়েছি, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি।”

 এই মামলার তদন্ত দায়িত্বরত তদন্ত কর্মকর্তাই করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “ফারদিনের মৃত্যু সংক্রান্ত অন্য কোনো সূত্র বা আলামত পাওয়া গেলে, তবে তা বিবেচনায় নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।”

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মজিবুর রহমান এই মামলার তদন্ত করছেন। আগামী ১৫ জানুয়ারি আদালতে তার প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে।