আবার উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা বলেছেন বিএনপির এই নেতার আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ।
Published : 01 Feb 2024, 06:15 PM
ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন আবেদন আবার নামঞ্জুর হয়েছে হাকিম আদালতে।
বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরী এ আবেদন নাকচ করেন। এ মামলায় এ নিয়ে দ্বিতীয়বার হাকিম আদালতে মির্জা ফখরুলের জামিনের আবেদন করা হয়।
বিএনপি মহাসচিবের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এতে আমাদের উচ্চ আদালতে যাওয়ার পথ সুগম হল। আমরা এখন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে যাব। সেখানে জামিন প্রত্যাখাত হলে হাইকোর্টে যাব।”
এর আগে গত ২৯ অক্টোবর তার গ্রেপ্তারের দিনই রাতে ঢাকার মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে ফখরুলের জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেদিন থেকে তিন কারাগারে আটক আছেন।
এ মামলা ছাড়াও গত ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে সংঘর্ষের ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে রমনা ও পল্টন থানায় আরও নয়টি মামলা করা হয়েছে, যেগুলোতে পরে ১০ জানুয়ারি মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিন পান।
তবে বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় জামিন না মেলায় কারাগারে থাকা এ বিএনপির নেতা মুক্তি পাননি।
সংঘর্ষের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় প্রথমবার হাকিম আদালতে জামিন না পেয়ে গত ২২ নভেম্বর মহানগর দায়রা জজ আদালতে যান আইনজীবীরা। সেখানে জামিন না মিললে গত ৩ ডিসেম্বর হাই কোর্টে আপিল করা হয়। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে ৭ ডিসেম্বর হাই কোর্ট জামিন না দিয়ে রুল দেন। এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এরপর ১০ জানুয়ারি হাই কোর্ট জামিন প্রশ্নে দেওয়া রুল খারিজ করে দেন। ফলে তখন উচ্চ আদালতেও এ মামলায় জামিন পাননি এই বিএনপি নেতা।
সেদিন আদালত বলেন, “অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে এ মুহূর্তে (ফখরুলকে) জামিন দেওয়া হলে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে কারণে এ মুহূর্তে তাকে জামিন দেওয়া সমীচীন হবে না। তাই রুল খারিজ করা হল।”
জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। সেদিন দুপুরের আগে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরুর পর কাছেই কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং দৈনিক বাংলা মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।
সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয় আরও ডজনখানেক যানবাহন। হামলা করা হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে।
দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘাতে প্রাণ যায় যুবদলের মুগদা থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা শামীম মোল্লার।
সংঘর্ষের মধ্যে পণ্ড হওয়া সমাবেশ থেকেই পরদিন সারাদেশে হরতালের ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২৯ অক্টোবর সেই হরতালের সকালে গুলশানের বাসা থেকে ফখরুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
সেদিন রাতে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় রমনা থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ফখরুলকে আদালতে তোলা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সেদিন মহাসমাবেশে আসা বিএনপি নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা, লোহার রড, ইট পাটকেল ও ককটেলসহ বিভিন্ন মারাত্মক অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে ‘বেআইনি সমাবেশ ঘটিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান’ দেয় এবং মিছিল করতে থাকে। ওই সময় তারা বৈশাখী পরিবহনের বাসসহ একাধিক বাস, পিকআপ ভাঙচুর করে আনুমানিক ২০ লাখ টাকার ক্ষতি করে।
মিছিলকারীরা বিএনপির ‘শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে’ রাস্তায় জনসাধারণ ও যানবাহনের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, যানবাহনের ক্ষতিসাধন, জনমনে আতঙ্ক, ত্রাস সৃষ্টি করে পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দেয় এবং হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুলিশ সদস্যদের আহত করে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
“তারা প্রধানবিচারপতির সরকারি বাসভবনের পূর্ব পাশের গেইট ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। নামফলকসহ ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করে।
আরও পড়ুন
আরেক মামলায় ফখরুলের জামিন, মুক্তিতে বাধা কাটেনি
হাই কোর্টের রুল খারিজ, জামিন পাননি ফখরুল
ফখরুল কেন জামিন পাবেন না, হাই কোর্টের রুল