মির্জা ফখরুলকে কেন জামিন দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে গত ৭ ডিসেম্বর রুল জারি করেছিল আদালত।
Published : 10 Jan 2024, 12:59 PM
প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন প্রশ্নে দেওয়া রুল খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
বুধবার ওই রুলের ওপর শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. সেলিম ও শাহেদ নূরউদ্দিনের বেঞ্চ তা খারিজ করে দেন। ফলে উচ্চ আদালতেও এ মামলায় জামিন পেলেন না এই বিএনপি নেতা।
ঢাকার হাকিম ও জজ আদালতে ফখরুলের জামিন আবেদন নাকচ হওয়ায় গত ৩ ডিসেম্বর হাই কোর্টে এসেছিলেন ফখরুলের আইনজীবীরা।
চার দিন পর ৭ ডিসেম্বর শুনানিতে জামিন না দিলেও হাই কোর্ট রুল দিয়েছিল। মির্জা ফখরুলকে কেন জামিন দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে। সাত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।
বুধবার ওই রুলের ওপর শুনানি হয়। এদিন ফখরুলের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ কে মোহাম্মদ আলী, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও কায়সার কামাল।
জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর সমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। সেদিন দুপুরের আগে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরুর পর কাছেই কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং দৈনিক বাংলা মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।
সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয় আরও ডজনখানেক যানবাহন। হামলা করা হয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে।
দৈনিক বাংলা মোড়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘাতে প্রাণ যায় যুবদলের মুগদা থানার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতা শামীম মোল্লার।
সংঘর্ষের মধ্যে পণ্ড হওয়া সমাবেশ থেকেই পরদিন সারাদেশে হরতালের ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২৯ অক্টোবর সেই হরতালের সকালে গুলশানের বাসা থেকে ফখরুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
সেদিন রাতে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় রমনা থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ফখরুলকে আদালতে তোলা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সেদিন মহাসমাবেশে আসা বিএনপি নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা, লোহার রড, ইট পাটকেল ও ককটেলসহ বিভিন্ন মারাত্মক অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে ‘বেআইনি সমাবেশ ঘটিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান’ দেয় এবং মিছিল করতে থাকে। ওই সময় তারা বৈশাখী পরিবহনের বাসসহ একাধিক বাস, পিকআপ ভাঙচুর করে আনুমানিক ২০ লাখ টাকার ক্ষতি করে।
মিছিলকারীরা বিএনপির ‘শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে’ রাস্তায় জনসাধারণ ও যানবাহনের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, যানবাহনের ক্ষতিসাধন, জনমনে আতঙ্ক, ত্রাস সৃষ্টি করে পুলিশের সরকারি কাজে বাধা দেয় এবং হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুলিশ সদস্যদের আহত করে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
“তারা প্রধানবিচারপতির সরকারি বাসভবনের পূর্ব পাশের গেইট ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। নামফলকসহ ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করে।”
২৯ অক্টোবর ঢাকার মহানগর হাকিম শফি উদ্দিন জামিন নাকচ করে ফখরুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে জজ আদালতে যান ফখরুলের আইনজীবীরা। কিন্তু ২২ নভেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ফয়সল আতিক বিন কাদেরও জামিন নামঞ্জুর করেন।
গত ৭ ডিসেম্বর হাই কোর্টে ফখরুলের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন শুনানিতে বলেন, “ঘটনা ঘটেছে [মির্জা ফখরুল যেখানে ছিলেন সেখান থেকে] দেড় কিলোমিটার দূরে। সেখানে কোনো মাইক ছিল না। তিনি নির্দেশ দেননি। ওইদিন ঘটনা ঘটেছে সত্য, কিন্তু তিনি কোনো পরিকল্পনা করেননি।”