কী কী অনিয়ম শনাক্ত হয়েছে, কতজন দায় স্বীকার করেছেন, কী সুপারিশ করা হয়েছে- এসব নিয়ে মুখ খুলতে চাননি কমিটির আহ্বায়ক।
Published : 28 Oct 2022, 12:43 AM
গাইবান্ধা উপ নির্বাচনে অর্ধশতাধিক কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত শেষে নির্বাচন কমিশনে প্রায় ছয়শ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিয়েছে কমিটি; যা রোববার কমিশনের সভায় পর্যালোচনার জন্য উঠতে পারে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের বাসায় এ প্রতিবেদন পৌঁছে দেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার ইসি সচিবালয়ে দিনভর কাজ করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেন। এরপর কমিশনে উপস্থাপনের জন্য রাতেই তা সচিবের কাছে জমা দেন।
জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক অশোক কুমার বলেন, “৩৩ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনসহ আনুষাঙ্গিক দলিলাদি মিলিয়ে প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
“সেই সঙ্গে অডিও, ভিডিও ও হার্ডডিস্ক জমা দেওয়া হয়েছে। কমিশন নির্ধারিত সভায় তা পর্যালোচনা করে গণমাধ্যমে জানাতে পারেন।”
কী কী অনিয়ম শনাক্ত হয়েছে, কতজন দায় স্বীকার করেছেন, কী সুপারিশ করা হয়েছে- এসব নিয়ে মুখ খুলতে চাননি এ কর্মকর্তা।
তদন্তকালে কমিটি সব মিলিয়ে ৬২৭ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ইসির কাছে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন, দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশ থাকার বিষয়ে আগেই জানানো হয়েছিল।
গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা ৫ আসনের উপ নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের মধ্যে সিসি ক্যামেরায় পুরো আসনের এক তৃতীয়াংশ কেন্দ্রে অনিয়মের দৃশ্য দেখে মাঝপথে ঢাকা থেকে নির্বাচন বন্ধের নির্দেশ দেয় ইসি।
এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল অনিয়মে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করতে তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমারকে আহ্বায়ক করে ইসির যুগ্ম সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস সদস্য ও যুগ্ম সচিব (চলতি দায়িত্ব) মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরীকে সদস্য সচিব করা হয়।
এছাড়া কারিগরি কাজে সহায়তার জন্যে যুক্ত ছিলেন ইসি সচিবালয়ের আইডিইএ ২ প্রকল্পের স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলম।
এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও কাজ শেষ করতে না পারায় তিন দিন সময় বাড়ালে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় পায় কমিটি।
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাময়িক বহিষ্কার থেকে চাকরিচ্যুত করার মতো এখতিয়ার রয়েছে সাংবিধানিক সংস্থা ইসির। সেই সঙ্গে দুর্বৃত্তদের জেল-জরিমানার বিধানও রয়েছে।
নির্বাচনে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘মাত্রা অনুযায়ী’ শাস্তি দেওয়ার কথা জনিয়েছে ইসি বলেছে, তদন্তের মাধ্যমে অপরাধের মাত্রা বুঝে শাস্তি নির্ধারণ হবে।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, “অপেক্ষা করেন। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি; রিপোর্টটা আসুক। তারপরে আপনারা দেখেন আমরা কোনো পদক্ষেপ নিই কিনা। ওয়েট অ্যান্ড সি।”
গত ১৮-২০ অক্টোবর গাইবান্ধা গিয়ে তদন্ত কাজ পরিচালনা করে কমিটি। কমিটিকে চারটি বিষয়ে কাজ করতে বলা হয়েছিল।
প্রথমত, পোলিং এজেন্ট বা ভোটার ছাড়া অন্যান্য ব্যক্তির গোপন কক্ষে প্রবেশ, গোপন কক্ষে ভোটদান দেখা, ভোটারদের কোনো প্রার্থীকে ভোটদানে বাধ্য করা বা প্রভাবিত করা, মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে গোপনকক্ষের ছবি ধারণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন ও দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা।
দ্বিতীয়ত, দলীয় প্রতীক বা একই রঙের পোশাক পরে পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব পালন, কোনো ক্ষেত্রে গোপনকক্ষে প্রবেশ, উল্লিখিত পোশাক উপঢৌকন বা অর্থের বিনিময়ে নেওয়া কি না, এসবের রহস্য উদ্ঘাটন ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা।
তৃতীয়ত, পোলিং এজেন্ট বা অবৈধ কোনো ব্যক্তি গোপন কক্ষে প্রবেশ করে ভোট দেওয়া, ভোটার কোনো প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন তা গোপন কক্ষে উঁকি দিয়ে বা ঢুকে দেখা, ভোট প্রদানে বাধা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ভোটকক্ষে ঢুকে নিজেই ভোট দেওয়া বা ভোটারকে প্রভাবিত করা অথবা পোলিং এজেন্ট নয়- এ ধরনের ব্যক্তি ভোটদানে ভোটারকে প্রভাবিত করার বিষয়ে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা।
চতুর্থত, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের বিষয়ে সব পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটল, কারা দায়ী তা চিহ্নিত করা। এসব বিষয়সহ প্রাসঙ্গিক অন্য কোনো বিষয় থাকলে সেটিও পর্যালোচনা করে সুপারিশ করবে কমিটি।
গোপন কক্ষে ব্যাপক অনিয়ম, মাঝপথে বন্ধ হল গাইবান্ধার ভোটগ্রহণ
গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন: আওয়ামী লীগ ছাড়া সব প্রার্থীর ভোট বর্জন
গাইবান্ধায় ভোট বন্ধের সিদ্ধান্তে সাবেকদের পাশে পেল ইসি
গাইবান্ধা-৫: ভোটের দিনের কেন্দ্র পরিস্থিতি জানল তদন্ত কমিটি
গাইবান্ধা-৫: বিশৃঙ্খলার ভিডিও দেখিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা