গাইবান্ধায় ভোট বন্ধের সিদ্ধান্তে সাবেকদের পাশে পেল ইসি

“আমরা বলেছি, দরকার হলে বার বার বন্ধ করবেন, বললেন সাবেক সিইসি বিচারপতি আব্দুর রউফ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2022, 12:55 PM
Updated : 19 Oct 2022, 12:55 PM

গাইবান্ধা-৫ আসনে উপ-নির্বাচন বন্ধের যে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাতে সাবেকদের সমর্থন পাওয়ার কথা জানিয়েছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেছেন, “উনারা (সাবেক সিইসি ও ইসি) সকলেই একমত পোষণ করেন, আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে; বলেছেন, এগিয়ে যান।”

বুধবার সাবেক তিন সিইসি এবং ইসিসহ ১৪ জনের সঙ্গে মতবিনিময় সভার পর সাংবাদিকদের সামনে এসে একথা বলেন হাবিবুল আউয়াল।

গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা উপ-নির্বাচনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের মধ্যে সিসি ক্যামেরায় অনিয়মের দৃশ্য দেখে ঢাকা থেকে নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা দেয় ইসি।

সাত মাস আগে দায়িত্ব নেওয়া হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসির নজিরবিহীন এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে তারা সাবেকদের পরামর্শ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেয়।

বুধবার তিন ঘণ্টার সেই বৈঠকের পর সিইসি যখন সাংবাদিকদের সামনে আসেন, তখন তার চোখে-মুখে ছিল স্বস্তির ছাপ।

তিনি বলেন, “গাইবান্ধায় আমরা যে অ্যাকশনটা নিয়েছি, উনারা বলেছেন এটা সঠিক হয়েছে। আইনগতভাবে ও সাংবিধানিকভাবে ঠিক হয়েছে। উনারা আমাদের মুরব্বিজন, গুরুজন হিসেবে পরামর্শ দিয়েছেন-সততার সাথে, সাহসিকতার সাথে আমাদের এগিয়ে যেতে বলেছেন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় সিইসির দায়িত্বে থাকা বিচারপতি আব্দুর রউফ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের এই অধিকার আছে। তাদের চোখের সামনে ধরা পড়ছে- ভোট দিতে পারছে না, কারচুপি হচ্ছে। তারা নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা বলেছি, দরকার হলে বার বার বন্ধ করবেন। জাতিকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন।”

দশম সংসদ নির্বাচনের সময় সিইসির দায়িত্বে থাকা কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচন কমিশন সাংববিধানিক বডি। সংবিধান ও আইন মোতাবেক তারা কাজ করে যাবে- আমরা এই পরামর্শ দিয়েছি।”

সদ্য সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, “গাইবান্ধা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার এই ক্ষমতা আছে।”

বুধবারের বৈঠকে কমিশন নিজেদের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য না দিলেও গাইবান্ধা নির্বাচন বন্ধের সার্বিক বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

সিইসি বলেন, “আজ আমাদের পক্ষ থেকে আমরা কোনো বক্তব্যই দিইনি; তাদেরকে শুনেছি। সার্বিক কথা হয়েছে। গাইবান্ধাতে যে একটা ঘটনা ঘটে গেল, আমাদের প্রয়োজন ছিল আরও এনলাইটেন্ড হওয়া; উনাদের তরফ থেকে কোনো গাইডেন্স আছে কিনা, কিভাবে মূল্যায়ন করেছেন অতটুকু জেনেছি।”

ভোট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া ইসি সঠিক মনে করলেও নানা ধরনের জটিলতার সংশয়ও অনুভব করে ইসি।

সিইসি বলেন, “এটা ক্রিটিক্যাল ছিল। প্রথমবারের মতো বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশন নিয়েছে এবং এটা যথেষ্ট সেনসেশন ক্রিয়েট করেছে সর্বমহলে। এটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য হয়েছে।”

আইনি জটিলতা দেখা না দেওয়ায় এবং সাবেকদের পাশে পেয়ে অনেকটা উজ্জীবিত কাজী হাবিবুল আউয়াল।

গাইবান্ধায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আপনাদের উদ্দেশ্য প্রশ্ন বিদ্ধ হবে- সাবেক একজন সহকর্মীর এমন পরামর্শের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি বলেন, “অপেক্ষা করেন। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি; রিপোর্টটা আসুক। তারপরে আপনারা দেখেন আমরা কোনো পদক্ষেপ নিই কিনা। ওয়েট অ্যান্ড সি।”

মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গাইবান্ধায় তদন্ত কাজ চালাচ্ছে ইসির তদন্ত কমিটি। সাত কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।

বুধবারের সভায় গাইবান্ধা উপ নির্বাচন ছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা, ইভিএম ব্যবহার ও সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ এসেছে।

এনআইডি সেবা ইসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে স্থানান্তরের বিরোধিতাও এসেছে।

সিইসি বলেন, “এনআইডিটা এখানেই থাকা প্রয়োজন-এক বাক্যে সবাই একথাটা বলেছেন। উনাদের যে নলেজ রয়েছে, আমার সেটা নেই।”

তিনি বলেন, “ইভিএম নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে কথা হয়েছে। অধিকাংশই পক্ষে বলেছেন। এটা নিয়ে জনমনে একটা নেগেটিভ পারসেপশন রয়েছে-এ পারসেপশনটা দূর করতে হবে।”

Also Read: গাইবান্ধা-৫: বিশৃঙ্খলার ভিডিও দেখিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা

গাইবান্ধায় পুনরায় ভোট ২০ জানুয়ারির মধ্যে

গাইবান্ধা-৫ আসনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপ-নির্বাচন শেষ করতে না পারায় সিইসির এখতিয়ারে পরবর্তী ৯০ দিনে তা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বুধবার ইসির জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন।

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল। সে অনুযায়ী ভোটের উদ্যোগ নেওয়া হলেও অনিয়মে কারণে ভোট স্থগিত হয়েছে।

সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের (৪) দফার শর্তাংশের বিধান মতে, কোনো দৈব-দুর্বিপাকের কারণে নির্ধারিত ৯০ দিনের নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে এ মেয়াদের শেষ দিনের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।

এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার ও দায়িত্ব প্রধান নির্বাচন কমিশনারের। সেই এখতিয়ার বলেই তিনি পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গাইবান্ধা-৫ শূন্য আসনের সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন বন্ধ ঘোষিত হওয়ার কারণে ৯০ দিনের মধ্যে সকল আবশ্যক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে পুনঃনির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী ৮ দিনের মধ্যে এ শূন্য পদ পূরণ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

“অক্টোবর মাসের ২০ তারিখের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে তথা আগামী ২০ জানুয়ারি তারিখের মধ্যে জাতীয় সংসদের গাইবান্ধা-৫ শূন্য আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পরবর্তী নতুন মেয়াদ নির্ধারণ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।”