বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান এবং পুত্রবধূ জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলায় আরও তিনজন ব্যাংক কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে সাক্ষ্য দেন প্রাইম ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. হুমায়ুন কবির, সিনিয়র অফিসার মো. আব্দুল্লাহ আল হাসান ও অফিসার শেখ আশরাফুল ইসলাম।
তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক রোববার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
১৬ বছর আগের এই মামলায় এই বছর বিচার শুরুর পর এনিয়ে রাষ্ট্রপক্ষে ৫৭ সাক্ষীর মধ্যে ২৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
গত ২১ মে মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক জহিরুল হুদার সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
দুদকের মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে বিএনপির নেতারা বলছেন, তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেককে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এই মামলার বিচার এগিয়ে নিচ্ছে সরকার।
শুনানির দিনগুলোতে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে একদিন বিএনপি এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের পাল্টপাল্টি হৈ চৈ, ধাক্কাধাক্কিতে বিচারককে এজলাসও ছাড়তে হয়েছিল।
তারেক ও তার স্ত্রীকে পলাতক দেখিয়ে এই মামলার বিচার চলছে। তারা দেড় দশক ধরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানাও রয়েছে।
মামলা বিত্তান্ত
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তারেক গ্রেপ্তার থাকা অবস্থায় ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার কাফরুল থানায় মামলাটি করেন দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক জহিরুল হুদা। তিনি সম্প্রতি আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, তারেক ও জোবায়দার ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে।
মামলায় জোবায়দার মা ইকবাল মান্দ বানুকেও আসামি করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় আদালতে। পরে উচ্চ আদালত তার বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম বাতিল করে দেয়।
অভিযোগপত্র জমা হওয়ার পর মামলা বাতিল চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করা হয় জোবায়দার পক্ষেও। তখন মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করে হাই কোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাই কোর্টের আদেশ বহাল রাখে।
এ বিষয়ে চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ করে রায় দেয় হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতের এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ওই বছরই আপিলের আবেদন করেন জোবায়দা।
এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ লিভ টু আপিল খারিজ করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখে।
এরপর গত ১৩ এপ্রিল তারেক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার।
তারেক ২০০৮ সালে তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোতে জামিন নিয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান চিকিৎসা নিতে। তারপর থেকে তিনি সেখানেই রয়েছেন।