ভোট স্থগিতে ইসির ক্ষমতা আগের মতই থাকল

ভোটের দিন কোনো অনিয়ম-গোলযোগের জন্য কোনো কেন্দ্রে ভোট স্থগিত কিংবা বাতিল করতে পারবে ইসি। ফল প্রকাশের পর আর পারবে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 May 2023, 05:19 PM
Updated : 18 May 2023, 05:19 PM

ভোটের ফলের গেজেট হওয়ার পরও অনিয়মের প্রমাণ পেলে তা স্থগিত কিংবা বাতিলের ক্ষমতা চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন; তবে তা পায়নি।

মন্ত্রিসভা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের যে খসড়া পাস করেছে; তাতে ইসির ক্ষমতা আগের মতোই থাকছে।

অর্থাৎ ভোটের দিন কোনো অনিয়ম-গোলযোগের জন্য কোনো কেন্দ্রে ভোট স্থগিত কিংবা বাতিল করতে পারবে ইসি। ফল প্রকাশের পর আর পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সকালে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাবটি পাস হয়।

এরপর বিকালে সচিবালয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে সাংবাদিকদের সামনে এসে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের হাঙ্গামা সৃষ্টি হলে বা ভোটের পরিবেশ নষ্ট হলে নির্বাচনী এলাকার এক বা একাধিক কেন্দ্রের ভোট স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে নির্বাচন কমিশন।

তিনি বলেন, “নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে, যেটি আগে ছিল না। সেটি হচ্ছে- নির্বাচনের যে কোনো মুহূর্তে পেশীশক্তির প্রয়োগ বা যে কোনো কারণে পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এক বা একাধিক কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে।”

কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসি গেজেটে প্রকাশের পরও ভোট বাতিল করার প্রস্তাব পাঠিয়েছিল আইন মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু সেই প্রস্তাবে আইন মন্ত্রণালয় আপত্তি দেয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবটাই মন্ত্রিসভা পর্যালোচনা করে যেমনটি যৌক্তিক মনে করেছে, স্বচ্ছতার সাথে নির্বাচন পরিচালনার জন্য সহায়ক মনে করেছেন, সেগুলো অনুমোদন করেছেন।”

Also Read: ভোটে গুরুতর অনিয়ম হলে গেজেটের আগেই ফল আটকে দিতে চায় ইসি

Also Read: আরপিও সংস্কার প্রস্তাব ভেটিংয়ের অপেক্ষায়: ইসি রাশেদা

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা নিজেদের প্রস্তাবের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নির্বাচনের গেজেট হওয়ার পরে অনিয়ম হলে আরপিওতে কোনো কিছু করার ক্ষমতা তাদের নেই বলে তারা সেই ক্ষমতা চেয়েছিলেন।

“সংশোধনীর প্রস্তাবটা আমরা দিয়েছিলাম, ফলাফল ঘোষণার পরেও যেন ক্ষমতাটা কমিশনের হাতে থাকে। কিন্তু (আইন মন্ত্রণালয়) উনারা বললেন যে, ৯১ অনুচ্ছেদ দিয়েই কভার হচ্ছে।”

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী আইনে (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব গত ২৮ মার্চ নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা।

ওই সময় ইসির প্রস্তাবের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছিলেন, “আরপিও সংশোধনের বিষয়ে অনেকেই ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, মিডিয়াতে দুটো বিষয়ে ভিন্ন রকম প্রতিবেদন এসেছে। একটি বিষয় হচ্ছে- যদি কোথাও গুরুতর অনিয়মের কারণে নির্বাচন স্থগিত করতে হয়, নির্বাচন কমিশন করতে পারেন, এটা আগে থেকে বলা আছে।

“এখন (সংশোধনী প্রস্তাবে) বলা হয়েছে, কোনো একটি ফলাফল তৈরির সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা বিরবরণীটা কমিশনে পাঠাবে; তখন যদি গুরুতর কোনো অনিয়ম হয়, তখন নির্বাচন কমিশন যথাযথ তদন্ত করবে। তদন্তে ফলাফল সঠিক হলে তা প্রকাশ করবে। অন্যথায় গুরুতর অপরাধে ফলাফল সঠিকভাবে প্রতিফলিত না হলে তখন তারা বাতিল করতে পারবেন। এখানে গেজেট প্রজ্ঞাপনের পরে বাতিল করা হবে, কথাটা কিন্তু তা না।”

বৃহস্পতিবার আরপিও সংশোধন প্রস্তাবে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে সাংবাদিকরা ইসি সচিবের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

Also Read: আরপিও সংশোধনে একগুচ্ছ প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছে ইসি

আরও যেসব সংশোধন

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিনও ঋণ-বিল পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আগে যদি কারও ব্যাংক ঋণ বা বিল পরিশোধের বিষয় থাকলে তা মনোনয়ন দাখিলের সাত দিন আগেই ক্লিয়ার বা মিটমাট করতে হতো। এখন সংশোধন করে বলা হয়েছে, মনোনয়ন দাখিলের আগের দিনও বিল বা ঋণ পরিশোধ করে নির্বাচন করতে পারবে।”

Also Read: আরপিও সংশোধনে বিল খেলাপিদের ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব

Also Read: ভোটে পর্যবেক্ষক-সাংবাদিকদের বাধা দিলে সাজার বিধান আসছে

Also Read: নারী প্রতিনিধিত্ব: আরপিও সংশোধন হয়নি, দলগুলোরও ‘গা’ নেই

প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তির টিআইএন এবং ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের কপি জমা বিষয়টিও ‍যুক্ত করা হয়েছে আইন সংশোধনের প্রস্তাবে।

ইউনিয়ন পরিশোধ ছাড়া বাকি সব নির্বাচনে এই নিয়ম ছিল। আবার সংসদ নির্বাচনে ছিল না। এখন থেকে সংসদ নির্বাচনেও এগুলো লাগবে।

প্রার্থিতা বাছাইয়ে বৈধ হলেও তার বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রাখা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আগে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তা রিজেক্ট হলে কেবল আপিল করা যেত। এখন নিয়ম করা হয়েছে যে, রিটার্নিং অফিসার মনোনয়ন গ্রহণ করলে এর বিরুদ্ধেও যদি কারও কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে সেটি আপিল আকারে করা যাবে। মনোনয়নপত্রের বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারের যে কোনো সিদ্ধান্তে আপিল করা যাবে।”

দল নিবন্ধনে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের প্রতিশ্রুত লক্ষ্যমাত্রা ২০২০ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০৩০ সাল করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, “রাজনৈতিক দলের জন্য কিছু শর্ত ছিল, যা ২০২০ সালের মধ্যেই পূরণ করার কথা ছিল। যেমন গঠনতন্ত্র জমা দেওয়া, মহিলা সদস্যদের কোটা পূরণ করা ইত্যাদি। এখন ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।”

ভোটের সংবাদ সংগ্রহে থাকা গণমাধ্যমকর্মীদের কাজে বাধা দিলে কিংবা যন্ত্রপাতি বিনষ্ট করলে শাস্তি-সাজার বিধানসহ কয়েকটি প্রস্তাবও অনুমোদন পেয়েছে।

আরপিও মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর তা সংসদে উপস্থাপন করা হবে। এরপর সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রস্তাবগুলো সংযোজন বা বিয়োজন হতে পারে। সবশেষে বিল আকারে পাসের উপস্থাপন হবে।