ভোটে পর্যবেক্ষক-সাংবাদিকদের বাধা দিলে সাজার বিধান আসছে

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের প্রস্তাবে ১৪টি নতুন ধারা রয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2023, 12:37 PM
Updated : 28 March 2023, 12:37 PM

জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের কাজে বাধা দিলে ২ থেকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের যে প্রস্তাব নির্বাচন কমিশন দিয়েছে, তাতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ওই অনুমোদন দেওয়া হয়। 

পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হোসাইন খান সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “যারা আমাদের গণমাধ্যমকর্মী এবং পর্যবেক্ষক, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এখানে একটা বিধান রাখা হয়েছে। যদি কেউ গণমাধ্যমকর্মী এবং পর্যবেক্ষকদের তার আইনানুগ কাজে বাধা প্রদান করে, সেক্ষেত্রে ২ থেকে ৭ বছর পযন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।”

পর্যবেক্ষক ও সংবাদমাধ্যম কর্মী হিসাবে নির্বাচন কমিশন থেকে যাদেরকে কার্ড দেওয়া হবে, তাদের বাধা প্রদানের ক্ষেত্রে এই বিধান কার্যকর হবে বলে জানান মাহমুদুল হোসাইন। 

“আপনার যদি বৈধভাবে প্রবেশ করার অধিকার থাকে, তারপরও আপনাকে বারিত করা হল বলপ্রয়োগ করে, আপনার ক্যামেরা ভেঙে ফেলল, ইত্যাদি অনেক কিছু হতে পারে, সেক্ষেত্রে ২ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।” 

পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের সুরক্ষার পাশাপাশি মোট ১৪টি নতুন ধারা গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) আদেশ ২০২৩-এর খসড়ায় রয়েছে বলেন জানান সচিব। 

তিনি বলেন, “মন্ত্রিসভার বৈঠকে এটার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখনও চূড়ান্ত হয়নি, আরও কিছু কারেকশন আছে, আরও কিছু মতামতসহ এটা আবার মন্ত্রিসভায় উপস্থাপিত হবে। তখন আরও কিছু যদি সংযোজন হয়, তারপর চূড়ান্ত করা হবে।”

সচিব মাহমুদুল হোসাইন বলেন, আগের আইনে থাকা সম্পদ বিবরণীর পাশাপাশি মনোনয়নপত্রের সঙ্গে টিআইএন এবং আয়কর জমার রসিদ যুক্তির বাধ্যবাধকতা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। 

“মনোনয়নপত্রের সঙ্গে টিআইএন সার্টিফিকেট সংযুক্ত করতে হবে এবং কত টাকা আয়কর প্রদান করেছে, সেই রশিদের অনুলিপিও সাবমিট করতে হবে। আগে এটা ছিল না। আগে শুধু সম্পদ বিবরণীর গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল, এখন এই দুটো সংযুক্ত করা হয়েছে।“ 

সাত দিনের পরিবর্তে একদিন আগেও পরিষেবা বিল পরিশোধ করে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারার প্রস্তাব যুক্ত করার কথা জানিয়ে সচিব মাহমুদুল বলেন, “আগে যেটা ছিল, যেদিন সে মনোনয়নপত্র দাখিল করবে, তার সাতদিন আগে জমা দিতে হত। না হয় মনোনয়নপত্র বাতিল বলে গণ্য হত। 

“এখন ইউটিলিটি বিল যেদিন মনোনয়নপত্র জমা দিবে, তার আগের দিন পর্যন্ত দাখিল করতে পারবে।”

মহানগরে একাধিক রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের সুযোগ

রিটার্নিং কর্মকর্তার বিধানে সংশোধন প্রস্তাব আসার কথা জানিয়ে সচিব মাহমুদুল হোসাইন বলেন, “এখানে ডিস্ট্রিক্টের পরিবর্তন করে কন্সটিটিউয়েন্সি’ করা হয়েছে। আগে ছিল জেলায় একজন, এখন প্রতি সংসদীয় আসনে একজন থাকবেন।”

আরপিও ৭ অনুচ্ছেদের ৫ ধারায় বলা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসার সংশ্লিষ্ট জেলার নির্বাচন পরিচালনার সব কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করবেন।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, ইসির প্রস্তাবে রিটার্নিং অফিসার সংক্রান্ত বিধান বহাল রয়েছে। এক্ষেত্রে মহানগরে একাধিক আসনের কথা বিবেচনায় নিয়ে ‘জেলা’ শব্দের পরিবর্তে ‘সংসদীয় আসন’ লেখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাহলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে একাধিক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে বাধা কেটে যাবে।

কোন কর্মকর্তাকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হবে তা এখন আইনে উল্লেখ নেই। তবে প্রথাগতভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়। সেই সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৬৬ জন রিটার্নিং অফিসার (৬৪ জেলা প্রশাসক ছাড়াও ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে বিভাগীয় কমিশনার দুজন) এবং ৫৭৭ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (অনুচ্ছেদ ৭) বলা হয়েছে- কমিশন প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকা থেকে কোনো সদস্য নির্বাচনের লক্ষ্যে ওই এলাকার জন্য একজন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করবে এবং কোনো ব্যক্তিকে দুই বা ততোধিক নির্বাচনী এলাকার জন্য রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা যাবে।

প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিয়োগ করতে পারবে ইসি। তবে কোনো সহকারী রিটার্নিং অফিসারকে একাধিক নির্বাচনী এলাকার জন্য নিয়োগ করা যাবে না।