আরপিও সংস্কার প্রস্তাব ভেটিংয়ের অপেক্ষায়: ইসি রাশেদা

ইভিএমে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে হাতের ছাপ না মিললে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ১% ভোটারকে সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবটি খসড়ায় না থাকার ইঙ্গিতও দেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2023, 03:07 PM
Updated : 27 Feb 2023, 03:07 PM

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের পর্যায়ে থাকার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।

সংশোধনীতে ইভিএমে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে হাতের ছাপ না মিললে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ১% ভোটারকে সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবটি না থাকার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।

প্রতি নির্বাচনের আগে ‘বিধি দিয়েই’ এক্ষেত্রে কাজ চালানো সম্ভব বলে আইন মন্ত্রণালয়ের যুক্তির সঙ্গে ইসির একমত হওয়ার কথা জানান তিনি।

সোমবার নির্বাচন কমিশনার রাশেদা আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আরপিও সংস্কার প্রস্তাবের সবশেষ অগ্রগতির বিষয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। ভেটিং শেষ হলে আইন সংশোধনের খসড়াটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা বৈঠকে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, প্রস্তাবগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের চাহিদামত ইসির যুক্তিও তুলে ধরা হয়েছে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে ২০২২ সালের অগাস্টে আরপিও সংশোধনে একগুচ্ছ প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এ নিয়ে বেশ কয়েক দফা চিঠি চালাচালিও হয়।

এদিন আলোচিত এ সংশোধনীতে দুটি প্রস্তাব নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে কথা বলেন রাশেদা সুলতানা।

ইভিএমে ভোট দেওয়ার বেলায় ১% ভোটারের সুযোগ রাখা এবং ফলাফলের গেজেট প্রকাশের পর অনিয়মের কারণে নির্বাচন বাতিলের বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত এবং ইসির প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ব্যাখ্যা পাঠানোর কথা জানান তিনি।

তিনি বলেন, “দুয়েকটা জায়গায় আরও চিন্তাভাবনা করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় বলেছিল। যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।…আইন মন্ত্রণালয়ের যারা বৈঠকে ছিলেন তারা আমাদের জাস্টিফিকেশনে খুশি। তারা বলছেন আর কোনো অসুবিধা নেই। এখন কেবিনেটে যাবে। ভেটিংয়ে আর বাদ যাচ্ছে না।”

ইসির প্রস্তাব থাকলেও কী থাকবে, কী থাকবে না তা সংসদই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান তিনি।

“কেবিনেট থেকে সংসদে যাবে। উনারা যদি মনে করেন কোনটা রাখব, কোনটা রাখবনা; এতে তো কারোরই কিছু বলার নাই। এটা আইন মন্ত্রণালয়েরও প্র্যাকটিক্যালি কিছু করার থাকবে না।”

গত অগাস্টে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর সাড়া না পেয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর, ১০ অক্টোবর ও সবশেষ ২৭ নভেম্বর অগ্রগতি জানতে চেয়ে তিন দফা চিঠি দেয় ইসি।

এরপর ৩০ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে ইসিকে জানানো হয়, সার্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলেই বিল আকারে মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত হলে গেজেট প্রকাশের পর ভোট বাতিল, নির্বাচনী কাজে অবৈধভাবে বাধা ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার যোগসাজশ এবং পোলিং এজেন্টদের ভীতি প্রদর্শন বা বাধার ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা, আঙ্গুলের ছাপ না মিললে ইভিএমে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে সর্বোচ্চ ১% ভোটারকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া, দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাবসহ আরপিওতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব করে ইসি।

দু’প্রস্তাবে আপত্তি-যুক্তি

নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা জানান, ইভিএমে ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ না মিললে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তার আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে ইভিএমের ব্যালট ইউনিট ওপেন করতে পারবেন। কেননা, যার আঙ্গুল নেই তাকে তো ভোট দেওয়ার সুযোগটা দিতে হবে।

“প্রতি নির্বাচনের আগে বিধি দ্বারা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। কাজেই জাস্টিফাইড একটা সংখ্যা দিলে কেউ আর বলতে পারবে না তাই আমরা ১ শতাংশ দিতে চেয়েছিলাম। মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসিনি। প্রত্যেক ভোটের আগে আমরা সার্কুলার দিয়ে দিতে পারব। কমিশন যখন সার্কুলার দেয়, সেটাও কিন্তু আইন। আমরা আরপিওতে পাচ্ছি না, তবে বিধি দিয়ে করতে পারব। আমরা সার্কুলার দিয়েই আগে করেছি। একটা পরিপত্র দিয়ে দিলেই হবে।”

ভোটের পরও ফল বাতিলে ইসির ক্ষমতা সংক্রান্ত প্রস্তাবের বিষয়েও বিকল্প মত দেয় আইন মন্ত্রণালয়।

তিনি বলেন, “আরেকটা বিষয় হচ্ছে, নির্বাচনের গেজেট হওয়ার পরে অনিয়ম হলে আরপিওতে কোনো কিছু করার ক্ষমতা নাই। সংশোধনীর প্রস্তাবটা আমরা দিয়েছিলাম- এটা ফলাফল ঘোষণার পরেও যেন ক্ষমতাটা কমিশনের হাতে থাকে। কিন্তু উনারা বললেন যে, ৯১ অনুচ্ছেদ দিয়েই কাভার হচ্ছে। ৯১ দিয়ে আসলে কাভার হয় না, আমরা যতটুকু জানি। উনাদের যুক্তিটা তুলে ধরলাম।”

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা জানান, ২০২২ সালে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পরেই একটা ফাইল আসলো। এতে দেখলাম যে ময়মনসিংহের দুর্গাপুরে একটা নির্বাচনে বোধহয় ব্যালট ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। তখন কমিশন গেজেট হওয়ার পর ভোট বাতিল করেছিল। কিন্তু মাননীয় হাইকোর্ট বলে দিলেন, যে গেজেট হওয়ার পর কমিশনের করার কিছু থাকে না। এজন্য কমিশনের হাতে ক্ষমতা যেন থাকে এই প্রস্তাব করা হয়েছে।

“…পরিস্থিতি যদি সামনে আসে কমিশনের হাতে অবশ্যই একটা ক্ষমতা থাকা উচিত, যে ওই নির্বাচনটা বন্ধ করে দেওয়া যায়। কারণ যিনি ডিপ্রাইভড হলেন বলে মনে করেন, তার তো ক্ষতিপূরণের জায়গা নেই। এই কারণে আমরা সংশোধন আনার প্রয়োজন মনে করেছি।”

Also Read: গোপন কক্ষে ব্যাপক অনিয়ম, মাঝপথে বন্ধ হল গাইবান্ধার ভোটগ্রহণ

Also Read: ৯১ ই: ‘কাট-পেস্ট’ থেকে ভুল বোঝাবুঝি!

Also Read: আরপিও সংশোধনে একগুচ্ছ প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছে ইসি

Also Read: আরপিও সংশোধন: ইসির চিঠির জবাব দিল আইন মন্ত্রণালয়

Also Read: ইভিএমে আঙুলের ছাপ: ১ শতাংশের সুযোগ যুক্ত হচ্ছে আরপিওতে