প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা ‘ছেড়ে’ দেওয়া নিয়ে সমালোচনার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাংবিধানিক সংস্থাটি নিজেদের সেই ক্ষমতাটি হারাতে চায় না।
Published : 01 Sep 2020, 02:23 AM
বরং ‘ভুল বোঝাবুঝি’ থেকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১ (ই) অনুচ্ছেদ বিলোপের প্রসঙ্গ আলোচনায় এসেছে বলে দাবি করছেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম।
তিনি সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিজেদের ক্ষমতা বাদ দেব কেন? বরং আরও স্ট্রেনদেন করা হবে। ৯১ ই বাদ দেওয়ার বিষয়ে কোনো সময়ই কমিশনে আলোচনা হয়নি। তা বাদও দেওয়াও হয়নি। এ নিয়ে আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) দেওয়ারও মানে হয় না।”
আইন সংস্কার নিয়ে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন বিদায়ের দেড় বছর বাকি থাকতে নতুন করে সমালোচনার মধ্যে পড়ে।
একজন নির্বাচন কমিশনারের আপত্তির পর ইসির সমালোচনায় সরব হয়েছে বিএনপি, দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবি ও নানামহল।
এ নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে দাবি করে তার ব্যাখ্যাও তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল।
তিনি বলেন, “একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।…আমরা বলেছিলাম সব কিছু আইনে থাকার দরকার নেই, যে অংশটুকু বিধিতে আছে তা বাদ দেওয়ার জন্য। ওরা মনে করেছে এটা বিধিতে থাকলে ভালো। আমাদের তো কাট-পেস্ট হয় এখন। কাট-পেস্টের সময় এটা হয়ত পড়ে গেছে।”
সোমবার সন্ধ্যায় কমিশনের সভা শেষে ৯১ ই অনুচ্ছেদ নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে ইসির অবস্থান তুলে ধরেন কমিশন সচিব মো. আলমগীর।
তিনি বলেন, “নিজেদের ক্ষমতা নিজে ছেড়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কমিশনের কোনো ক্ষমতাই খর্ব করা নয়, বরং যা আছে মৌলিক, তার সবই ঠিক থাকবে। আরপিওর মৌলিক কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না, শুধু বাংলায় করা হচ্ছে। এটিকে আইনেও রূপান্তর করা হচ্ছে না।”
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল বলেন, “দেড় বছর আগে আরপিও সংস্কারের একটা খসড়া পাঠানো হয়েছিল। এখন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বাংলায় করে আইন আকারে প্রস্তাব করা হয়।
“সরকার যদি এতে সম্মতি দেয় অ্যাক্ট করতে অসুবিধা নেই; ওই সময় আগের প্রস্তাবগুলো অ্যাড করে দেওয়া হয়। এ কাজে ইসি সচিবালয় এ ভুলটা করেছে।”
সহকর্মী একজন নির্বাচন কমিশনার ৯১ ই অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়ায় ‘সমালোচনার পালে নতুন করে হাওয়া লেগেছে বলে মনে করছেন রফিকুল।
“এ বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝিটা হয়েছে একজনের জন্য। এ বিষয়টা আলোচনাই হয়নি, কোনো কথাই হয়নি।… ৯১ ই আগেও ছিল; এখন আরও শক্তিশালী করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। আরপিও আর পরিবর্তন করা যাবে না। সংশোধন সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব যদি কমিশন মনে করে আগামীতে দেখা যাবে।”
গত ২৪ অগাস্ট ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে কমিশন সভা শেষে বেরিয়ে আসছেন মাহবুব তালুকদার (ফাইল ছবি)
মাহবুব তালুকদারের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ গত ২৪ অগাস্ট সোমবার বর্তমান ইসির সদস্য মাহবুব তালুকদার ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে বলেন, ইতোমধ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯১ই ধারা ‘গুরুতর অভিযোগে’ কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের সরাসরি ক্ষমতা, যা নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যস্ত ছিল, তার বিলোপ সাধনের প্রস্তাব রেখে খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটাকে ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত মন্তব্য করে তাতে ‘ইসি নখদন্তহীন বাঘ নয়, বিড়ালে পরিণত হবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মাহবুব তালুকদারের দাবি, প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট ৯১ ই অনুচ্ছেদসহ ১১টি মৌলিক ও পদ্ধতিগত বিধান বাদ দিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আইন ২০২০ বিল এর খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তার মত, প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা এককভাবে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকা আবশ্যক। ‘একটি ঐতিহাসিক আইনগত দলিল’ হিসেবে ১৯৭২ সালের গণপ্রতিধিত্ব আদেশ রহিত করে নতুন আইন প্রণয়নের বিরোধিতাও করেন এ নির্বাচন কমিশনার। |
সাত বছর আগে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন ইসিও ‘ক্ষমতাটি’ ছেড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়েছিল।
১৯৭৩ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে ৯১ (ই) ধারা ছিল না। ২০০৮ সালে অনুচ্ছেদটি সন্নিবেশ করা হলেও প্রয়োগের কোনো নজির নেই।
৯১ (ই) ধারায় বলা আছে, কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বা থাকার অযোগ্য হতে পারেন। তবে তার আগে কমিশন অভিযুক্ত প্রার্থীকে শুনানির যুক্তিসঙ্গত সুযোগ দিয়ে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেবে। তদন্তে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে কমিশন সেই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে।
দীর্ঘদিন গুটিয়ে থাকার পর বর্তমান নির্বাচন কমিশন করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে আইন সংস্কারের কাজে তৎপর হয়।
তিন মাস ধরে এ সংক্রান্ত খসড়া প্রকাশ, মতামত নিয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর কাজ করে যাচ্ছে।