রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আরও দশ বছর সময় দেওয়া, নির্বাচনী কাজে নিয়োজিতদের ক্ষেত্রে অনলাইনে পোস্টাল ব্যালটের আবেদন নেওয়া, প্রতিবন্ধীর সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং প্রার্থীদের টিআইএন সনদ জমার নিয়ম যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে এসব প্রস্তাবে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবগুলো কমিশন অনুমোদন করেছে। এরপর ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
মেয়াদের শেষ সময়ে এসে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন এসব সংশোধনীর মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার ও প্রার্থীদের জন্য সুযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিল।
পাঁচ সদস্যের বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আসছে ফেব্রুয়ারিতে। তারপর নতুন যে ইসি দায়িত্ব নেবে, তাদের ওপরই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ভার থাকবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এগুলো নতুন কোনো সুপারিশ নয়, আগেও আমরা বিষয়গুলো আলোচনা করেছি।”
আরপিও সংশোধন করতে হলে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর সংসদে পাস করার বিধান রয়েছে।
যা যা পরিবর্তন
কৃষি ও অন্যান্য ক্ষুদ্র ঋণ এবং ব্যক্তিগত বিল (টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বা সেবা সংস্থার বিল) এখন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার অন্তত সাতদিন আগে পরিশোধের নিয়ম রয়েছে। আপিও সংশোধনের প্রস্তাবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত পরিশোধ করার সুযোগ রাখার কথা বলা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোকে সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আরপিওতে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিবন্ধিত কোনো দলই সে লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি।
এ অবস্থায় আরপিও সংশোধন না হলে দলগুলোকে বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের মুখে পড়তে হতে পারে। তাই সবার সুপারিশে ওই শর্ত পূরণের সময় দশ বছর বাড়িয়ে ২০৩০ সাল করার প্রস্তাব করা হচ্ছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “এ নিয়ে আরপিও তো সংশোধন করতেই হবে। ছোটখাটো বিল পরিশেধের সময় বাড়ানোসহ আরও কিছু বিষয় প্রস্তাবে থাকছে”।
নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিতদের অনলাইনে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার আবেদনের সুযোগ এবং পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি সহজ করার কথা বলা হয়েছে ইসির সংশোধনী প্রস্তাবে। সেই সঙ্গে প্রতিবন্ধী এবং ৮০ বছর বা বেশি বয়সীদের এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে পোলিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসারসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য নিয়ে কয়েক লাখ লোক জাতীয় নির্বাচনে নিয়োজিত থাকেন।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ভোটার, যারা নিজ এলাকার বাইরে অবস্থান করেন, প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার এবং কারাবন্দিদের পোস্টাল ব্যালটের ভোট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সেজন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন করতে হয়। এরপর নানা প্রক্রিয়ায় ডাক বিভাগের মাধ্যমে ব্যালট পেপার নেওয়া ও ভোট শেষে ফের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তা পাঠাতে হয়।
ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, “পোস্টাল ব্যালট তো এখন ব্যবহার হচ্ছে না। প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে কীভাবে এ পদ্ধতি সহজ করা যায়, তা ভেবে প্রস্তাবটি রাখা হয়েছে।”
আইন সংশোধন হলে নির্বাচন পরিচালনা বিধিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে জানান অশোক কুমার দেবনাথ।
আরপিওর দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে ‘ফিজিক্যালি ডিজেবল’ এর সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। বিদ্যমান ভোটার তালিকার নিবন্ধন ফরমে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, শ্রবণ প্রতিবন্ধী, বাক প্রতিবন্ধী এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের তথ্য নেওয়া হয়। তাদের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করে ২৭ অনুচ্ছেদে তাদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব জানান, ইউপি ছাড়া স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে টিআইএন সনদ জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। সংসদ নির্বাচনেও তা যুক্ত করা হচ্ছে।
প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) সনদ জমার বিধান বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে আরপিও ১২ অনুচ্ছেদের একটি উপ-ধারায়।
২০০৮ সালে যখন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চালু হয়, তখন সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেওয়ার জন্য বারো মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। এখন তা ৩০ দিন করা হচ্ছে।