ফারদিনের মৃত্যু: অবশেষে বুশরার জামিন

পুলিশ এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়েছে বুশরাকে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2023, 06:52 AM
Updated : 8 Jan 2023, 06:52 AM

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে দুই মাস ধরে কারাগারে আটক তার বন্ধু আমাতুল্লাহ বুশরাকে অবশেষে জামিন দিয়েছে আদালত 

ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহসিন ইফতেখার রোববার বুশরার জামিন মঞ্জুর করেন। পুলিশ এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া পর্যন্ত তার জামিন বহাল থাকবে।

পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে গত ১৬ নভেম্বর বুশরার জামিন আবেদন খারিজ করে তাকে কারাগারে রাখার আদেশ দিয়েছিল আদালত। ৫ ডিসেম্বর হাকিম আদালতে বুশরার জামিন আবেদন আবারও খারিজ হলে তিনি জজ আদালতে আবেদন করেন।

রোববার শুনানিতে বুশরার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী মোখলেসুর রহমান বাদল। ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন হীরন।

এর আগে বৃহস্পতিবার এক দফা শুনানি শেষে রোববার আদেশের দিন রেখেছিল আদালত। কিন্তু বাদী পক্ষের আইনজীবী সেদিন শুনানিতে ছিলেন না। সে কারণে রোববার তাকে শুনানি করার অনুমতি দেন বিচারক।  

আইনজীবী বাদল বলেন, “এজাহারে বাদী নিজেই বলেছেন, প্রকৃত হত্যাকারীকে চৌকস আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে।এ কথায় প্রমাণিত হয়, বুশরা প্রকৃত আসামি নয়। আমরাও চাই দ্রুতবেরিয়ে আসুক আসল ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ফারদিনেরমৃত্যুর ঘটনায় বুশরার কোনো সম্পৃক্ততা পায়নি।”

ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বিচারকের অনুমতি নিয়ে বাদীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন। আববার হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েট ক্যাম্পাসের রাজনীতিকে তিনি ছেলের ‘হত্যার’ করাণ হিসেবে দেখান।

তখন বিচারক তাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করেন, “বুয়েটের ছাত্র রাজনীতির শিকার হয়েছে আপনার ছেলে “

উত্তরে রানা বলেন, “ইয়েস।”

এ কথায় বিচারক পুলিশ প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়ে দেন বুশরাকে।

মামলার তদন্তকারী সংস্থাটি গোয়েন্দা পুলিশ ইতোমধ্যে জানিয়েছে, ফারদিন খুন হননি, আত্মহত্যা করেছিলেন। আর তার মৃত্যুর সঙ্গে বুশরার কোনো ‘সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি’। সুতরাং আদালতে এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

Also Read: ফারদিনের মৃত্যু: ‍বুশরার জামিন শুনানি শেষে আদেশের অপেক্ষা

Also Read: ফারদিনের মৃত্যু: পুলিশ প্রতিবেদনে আটকে বুশরার মুক্তি

Also Read: ফারদিনের বন্ধু বুশরা ‘জড়িত নয়’ জানিয়ে প্রতিবেদন দেবে ডিবি

২৪ বছর বয়সী ফারদিন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদকও ছিলেন ফারদিন।

আর তার বন্ধু আমাতুল্লাহ বুশরা পড়েন ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে রামপুরার বনশ্রী এলাকায় মেসে থাকতেন তিনি।

বছর পাঁচেক আগে এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ফারদিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয় বলে ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা জানিয়েছিলেন।

গত ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার পর ৭ নভেম্বর বিকালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করেছিল নৌ-পুলিশ৷

আর ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার আগে তাকে সর্বশেষ রামপুরা এলাকায় বুশরার সঙ্গে দেখা গিয়েছিল। সে কারণে রামপুরা থানাতেই একটি জিডি করেছিলেন ফারদিনের বাবা।

ছেলের লাশ পাওয়ার দুদিন পর ১০ নভেম্বর ভোরে তিনি রামপুরা থানাতেই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, সেখানে বুশরাকেই একমাত্র আসামি করা হয়।

Also Read: ফারদিন হত্যা: বুশরা রিমান্ডে

Also Read: ফারদিন হত্যা: রিমান্ড শেষে জামিন মেলেনি বুশরার

পরে ওইদিনই বুশরাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নেওয়া হলে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছিল আদালত। রিমান্ড শেষে আবারও তাকে আদালতে হাজির করা হলে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. আতাউল্লাহ তাকে কারাগারে রাখার আদেশ দেন।

শীতলক্ষ্যা থেকে ফারদিনের লাশ উদ্ধারের ৪০ দিন পর গত ১৪ ডিসেম্বর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাব উভয়ের তরফেই সাংবাদিকদের জানানো হয়, এই তরুণ সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।

তারপর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেনি তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ।

ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রাজিব আল মাসুদ গত ৩০ ডিসেম্বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ভিসেরা প্রতিবেদন না পাওয়ার কারণে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে পারছেন না তারা।

নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান অবশ্য বলেছিলেন, ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদন তারা ডিবির কাছে জমা দিয়েছেন। ভিসেরা প্রতিবেদনে কোনো রাসায়নিক বা বিষাক্ত কিছু পাওয়া যায়নি।

Also Read: ফারদিন খুন হননি, আত্মহত্যা: ডিবি-র‌্যাব

Also Read: ‘আত্মহত্যা’ মানতে নারাজ ফারদিনের বাবা; বললেন, ‘গল্প শুনতে হল’