ফারদিনের মৃত্যু: পুলিশ প্রতিবেদনে আটকে বুশরার মুক্তি

পুলিশ বলছে, ফারদিনের লাশের ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষা করছেন তারা। নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন বলেছেন, তা তারা ডিবিকে দিয়ে দিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2022, 06:08 PM
Updated : 29 Dec 2022, 06:08 PM

ফারদিন নূর পরশ আত্মহত্যা করেছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপসংহারে পৌঁছলেও মামলার প্রতিবেদন এখনও দেওয়া হয়নি। এই কারণে এই বুয়েটছাত্রের বন্ধু আমাতুল্লাহ বুশরার বন্দিদশা অবসানের পথও খুলছে না।

শীতলক্ষ্যা থেকে লাশ উদ্ধারের ৪০ দিন পর গত ১৪ ডিসেম্বর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাব উভয়ের তরফেই সাংবাদিকদের জানানো হয়, এই তরুণ সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।

তারপর দুই সপ্তাহ হতে চললেও এখনও তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেনি হত্যামামলার তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

চূড়ান্ত না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ডিবির গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রাজিব আল মাসুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভিসেরা প্রতিবেদন না পাওয়ার কারণে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে পারছেন না তারা।

বুধবার তিনি একথা বলার পর জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা গত সপ্তাহে ময়নাতদন্ত এবং ভিসেরা প্রতিবেদন তদন্ত সংস্থা ডিবির কাছে জমা দিয়েছি।”

Also Read: সেই রাতে ৪ স্থানে ঘোরেন ফারদিন, যাত্রাবাড়ী থেকে ওঠেন লেগুনায়: ডিবি

Also Read: ফারদিন যাত্রাবাড়ী গেলেন, লেগুনায় উঠলেন, তারপর? তদন্ত গতিহারা

Also Read: ফারদিন খুন হননি, আত্মহত্যা: ডিবি-র‌্যাব

Also Read: ‘আত্মহত্যা’ মানতে নারাজ ফারদিনের বাবা; বললেন, ‘গল্প শুনতে হল’

গত ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে ফারদিনের লাশ পাওয়ার পর ময়নাতদন্ত নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালেই হয়েছিল।

আঘাতজনিত কারণে ফারদিনের মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর।

তিনি বলেন, “ভিসেরা প্রতিবেদনে কোনো বিষাক্ত বা রাসায়নিক কিছু পাওয়া যায়নি। আর ফারদিনের শরীরে আঘাতের চিহ্নগুলো কীভাবে আসলো সেটা তদন্ত সংস্থা বের করবে।”

পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার বিষয়ে ময়নাতদন্তে বা ভিসেরার প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখ আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার মৃতদেহ পানি থেকে তোলা হলেও শরীরে সে পরিমাণ পানি ছিল না।

“পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ক্ষেত্রে যে পরিমাণ পানি ফুসফুসে পাওয়ার কথা সে পরিমাণ পানি আমরা ফুসফুসে পাইনি।”

ফারদিনের লাশের ময়নাতদন্তের পর তার মৃত্যু হত্যাজনিত বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালের চিকিৎসক শেখ ফরহাদ।

তিনি বলেছিলেন, ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার দিনই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন ফারদিন। তার মাথা ও বুকে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে৷ মৃত্যুর আগে শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ওই ছাত্র৷

তার ভিত্তিতে ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা হত্যা মামলা করেছিলেন রামপুরা থানায়। সেই মামলায় আসামি করা হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বুশরাকে। মামলার পরপরই গ্রেপ্তার করা হয় বুশরাকে; যদিও তিনি নির্দোষ বলে দাবি করে আসছিলেন তার স্বজনরা।

পুলিশ কর্মকর্তা রাজিব আল মাসুদ বলেন, আদালতে প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার আগে বুশরার জামিন কিংবা মুক্তির সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি।

আগামী ১৫ জানুয়ারি মামলার অগ্রগতির প্রতিবেদন দাখিলের নির্ধারিত তারিখ রয়েছে। তবে নির্ধারিত তারিখের আগেই মামলার কোনো অগ্রগতি থাকলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের সুযোগ রয়েছে।

র‌্যাব ও ডিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ফারদিন হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যা বলার পর বুয়েট শিক্ষার্থীরা তা মেনে নিলেও তা মানতে নারাজ ফারদিনের বাবা। সেক্ষেত্রে পুলিশ প্রতিবেদনে তার নারাজি আবেদন দেওয়ার সুযোগও রয়েছে।

গত ৫ নভেম্বর পরীক্ষার কথা বলে ৪ নভেম্বর দুপুরে ঢাকার ডেমরার কোনাপাড়ার বাসা থেকে বের হয়েছিলেন বুয়েটের পুরকৌশলের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফারদিন (২৪)। পরীক্ষার কারণে রাতে বুয়েটের হলে থাকার কথা ছিল তার।

পরদিন পরীক্ষায় তার অনুপস্থিতির খবর জানার পর খোঁজাখুজি শুরু হয়। পরে তার বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা রামপুরা থানায় জিডি করেন। তিন দিন পর তা লাশ পাওয়া যায়।