পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে বুশরাকে আদালতে হাজির করা হলে জামিন নাকচ করে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
Published : 16 Nov 2022, 03:24 PM
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরার জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
ঢাকার মহানগর হাকিম মো. আতাউল্লাহ বুধবার জামিন শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
৫ দিনের রিমান্ড শেষে বুশরাকে এদিন আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের খিলগাঁও জোনাল টিমের পরিদর্শক মজিবুর রহমান আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
অন্যদিকে বুশরার পক্ষে জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতা মোখলেসুর রহমান বাদল, এ কে এম হাবিবুর রহমান চুন্নুসহ কয়েকজন আইনজীবী বুশরার পক্ষে জামিন শুনানি করেন।
শুনানিতে বাদল বলেন, “রিমান্ডের আগে ও রিমান্ডে নিয়ে বুশরাকে দীর্ঘ্ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে ফারদিনের সঙ্গে তার পরিচয়। এর বাইরে তাদের মধ্যে অন্য কোনো সম্পর্ক্ ছিল না, প্রেমের সম্পকর্তো নয়ই ।
“যেসব সিসিটিভি ভিডিও এসেছে, সেখানোতো হত্যা বা জোর করে ধরে নেওয়ার কোনো বিষয় পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমের খবর থেকেও বুশরার সম্পৃক্ততার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য জামিন জরুরি।”
এর বিরোধিতা করে আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এস আই সেলিম রেজা আসামিকে কারাগারে আটক রাখার পক্ষে যুক্তি দেন।
২৪ বছর বয়সী ফারদিন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদকও ছিলেন ফারদিন। পরিবারের সঙ্গে ডেমরার কোনাপাড়া এলাকায় থাকতেন ফারদিন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
আর তার বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরা পড়েন ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজিতে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে রামপুরার বনশ্রী এলাকায় মেসে থাকতেন তিনি। বছর পাঁচেক আগে এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ফারদিনের সঙ্গে তার পরিচয় হয় বলে ফারদিনের বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানার ভাষ্য।
গত ৪ নভেম্বর ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার পর ৭ নভেম্বর বিকালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ৷ পরদিন নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক জানান, ওই তরুণকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে।
ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার আগে তাকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল রামপুরা এলাকায় বুশরার সঙ্গে। সে কারণে রামপুরা থানাতেই একটি জিডি করেছিলেন ফারদিনের বাবা। ছেলের লাশ পাওয়ার দুদিন পর বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি রামপুরা থানাতেই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, সেখানে বুশরাকেই আসামি করা হয়।
পরে ওই তরুণীকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হলে ঢাকার মহানগর হাকিম মেহেদী হাসান পাঁচ দিন হেফাজতে রেখে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
এদিকে তার পরদিনই একাধিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, মাদক কিনতে ডেমরার চনপাড়ায় গিয়ে মাদক কারবারিদের পিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে ফারদিনের; যদিও তার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের দাবি, ফারদিন কখনও মাদকাসক্ত ছিলেন না।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ গত শনিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য তারা এ বিষয়ে পাননি।
“আমরা একথা এখনও বলছি না যে, মাদকের কারণে সে খুন হয়েছে বা এক নম্বর আসামি যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে খুন করেছে, এটাও আমরা বলছি না।”
পুরনো খবর
গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদন মনোবল ভেঙে দিয়েছে: ফারদিনের বাবা
পুলিশ ‘হয়ত নিরাশ’ করবে না, ফারদিনের সহপাঠীদের আশা
ফারদিন হত্যা: এখনও কোনো ‘কনক্রিট তথ্য পায়নি’ ডিবি
ফারদিন হত্যা: চনপাড়ার মাদক কারবারিদের খোঁজে পুলিশ
হিসাব মেলাতে পারছেন না ফারদিনের সহপাঠী-স্বজনরা
ফারদিন খুন: বুশরা নিরাপরাধ, বলছেন চাচা
ফারদিন হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব পেল ডিবি
ফারদিনের মরদেহ শীতলক্ষ্যায় কীভাবে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বুয়েটছাত্র ফারদিনের লাশ উদ্ধারের পর অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না