স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ফারদিনের সর্বশেষ ‘লোকেশন’ পাওয়া গিয়েছিল গাজীপুরে।
Published : 10 Nov 2022, 05:09 PM
বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাকে ‘হত্যাকাণ্ড’ ধরেই তদন্ত কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বৃহস্পতিবার ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি বলেন, “বুয়েটের যে শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তার সবশেষ লোকেশন আমরা গাজীপুর পেয়েছিলাম। গাজীপুর থেকে পরবর্তীতে কীভাবে লাশ শীতলক্ষ্যায় এল এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
“পুরোপুরি তদন্ত না করে… আগে তথ্য দিব, পরে এ বিষয়টি ভুল হবে, সে রকম কোনো কিছু আমরা করতে চাই না।”
শিল্পাঞ্চল পুলিশের এক যুগপূর্তির অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, এই ঘটনার পেছনে যারাই জড়িত তাদেরকে আমরা খুঁজে বের করব। খুঁজে বের করে শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
“এটি একটি হত্যাকাণ্ড এবং সে বিষয়টি সামনে রেখে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট পেলে পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।”
গত শুক্রবার ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার পর সোমবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ৷ মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক জানান, ওই তরুণকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে।
২৪ বছর বয়সী ফারদিন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদকও ছিলেন ফারদিন। পরিবারের সঙ্গে ডেমরার কোনাপাড়া এলাকায় থাকতেন ফারদিন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
ফারদিন নিখোঁজ হওয়ার আগে তাকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল রামপুরা এলাকায় বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরার সঙ্গে। সে কারণে রামপুরা থানাতেই একটি জিডি করেছিলেন ফারদিনের বাবা। ছেলের লাশ পাওয়ার দুদিন পর বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি রামপুরা থানাতেই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, সেখানে বুশরাকে আসামি করা হয়।
বুশরাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৪ নভেম্বর দুপুর ৩টায় বুয়েটে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয় ফারদিন। পরদিন ৫ নভেম্বর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফিরে দুপুরের খাবার খাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু পরে জানা যায়, ফারদিন পরীক্ষা দেননি। তার শিক্ষক ও বন্ধুরা বারবার তার মোবাইলে ফোন করে বন্ধ পান।
ফারদিনের পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকার খবর পেয়ে ৫ নভেম্বর বিকেল থেকে পরিবারের সদস্যরাও ফারদিনকে ফোন করে মোবাইল বন্ধ পান। তখন পুলিশের সাথে কথা বলে তারা রামপুরা থানায় জিডি করেন।
মামলায় বলা হয়, ফারদিন ও বুশরা সেদিন বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত একসঙ্গে ছিলেন। ধানমণ্ডি, নীলক্ষেত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে রাত ১০টার দিকে সর্বশেষ মিরপুর এলাকায় তাদের দেখা যায়।
তদন্তে নেমে পুলিশ এর আগে জানিয়েছিল, ফারদিনের মোবাইল ফোনের গতিপথ সেদিন সদরঘাটের দিকে গিয়েছিল। কিন্তু কেন তিনি সদরঘাটের দিকে গেলেন, সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
রামপুরা থানার ওসি রফিকুল বলেছিলেন, তারা ফারদিনের মোবাইল ফোনের সর্বশেষ অবস্থান পেয়েছিলেন শুক্রবার রাতে কেরানীগঞ্জ এলাকায়। তারপর থেকে আর কোনো অবস্থান পাননি। সে কারণে তাদের ধারণা, হয়ত ফোন বন্ধ ছিল।
সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারেই কেরানীগঞ্জ। পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, ফারদিন হয়ত নদীতে কোনো নৌযানে উঠেছিলেন বলে মোবাইলটির অবস্থান রাতে কেরানীগঞ্জে ধরা পড়ে।
রোববার ফারদিনের বিষয়ে আর কোনো তথ্য কেউ পায়নি। পরদিন সোমবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার গোদনাইল এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীতে পাওয়া যায় ফারদিনের লাশ।